দিনাজপুর : ত্যাগের মহিমায় বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিম জাতি বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) পালন করতে যাচ্ছেন পবিত্র ঈদুল আজহা। এসময় বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের মত আমাদের দেশেও বৃহৎ জামাতে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য ও নৈকট্য লাভের আশায় থাকেন এদেশের আপামর ধর্মপ্রাণ মুসলিম সম্প্রদায়। আর এরই আলোকে পবিত্র ঈদুল আজহার জামাতের জন্য এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঈদগাহ মাঠ দিনাজপুর গোর-এ শহীদ ময়দানের চূড়ান্ত প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। এখানে একসঙ্গে ছয় লাখ মুসল্লীর নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার (২৭ জুন) মাঠ পরিদর্শন করেছেন জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ, পুলিশ সুপার ইফতেখার আহমেদ।
ঈদ জামাতে দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও অন্য জেলা থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা যাতে অংশগ্রহণ করতে পারেন সেজন্য পঞ্চগড় থেকে দিনাজপুর এবং পার্বতীপুর থেকে দিনাজপুরে প্রথমবারের মতো মুসল্লিদের জন্য বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি মুসল্লিদের সুষ্ঠুভাবে নামাজ আদায়ের লক্ষ্যে নতুন করে মাটি ভরাট, রং করা, ধোয়ামোছা, মাঠে পানি ছিটানোসহ নানা সংস্কার কাজ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে।
অস্থায়ীভাবে তৈরি করা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। মাঠের সৌন্দর্য বর্ধনে ভেঙে ফেলা হয়েছে স্টেশন ক্লাব ভবন।
এই ময়দানে ছয় লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
দিনাজপুর শহরে সাড়ে ২২ একর আয়তনের গোর-এ শহীদ ময়দানের ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মিনারের সামনে হবে ঈদের এই জামাত। বৃহৎ এই মাঠে একত্রিত হবেন মুসল্লিরা। তাদের বিশ্বাস, বড় জামাতে নামাজ আদায় করলে বেশি সওয়াব হয়। তাই দিনাজপুর ছাড়াও আশপাশের জেলা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে মুসল্লিরা এই জামাতে অংশ নিয়ে থাকেন।
এদিকে ঈদ জামাতের বিষয়ে জেলা প্রশাসনের তরফ হতে জেলা ও উপজেলায় মাইকিইয়ের পাশাপাশি তথ্য অফিসও চালিয়েছে প্রচারণা।
জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ জানিয়েছেন, গোর-এ শহীদ ময়দানে এবার ছয় লক্ষাধিক মুসল্লির নামাজের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এখানে সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত ঈদের জামাতে ইমামতি করবেন মাওলানা শামসুল হক কাসেমী। বিপুল জনসমাগমের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পুরো ময়দানে চারস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, আনসার ও স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করবেন।
তিনি বলেন, সকাল ৭টা থেকে মুসল্লিরা নির্দিষ্ট প্রবেশপথ দিয়ে মাঠে ঢুকবেন। মাইক বসানো হবে ১১০টি। ইমামের সহযোগিতায় মুক্কাবির থাকছেন ২০০ জন। যারা ইমামের কথাগুলো ফের উচ্চারণ করবেন। অজু করতে যেন অসুবিধা না হয় এজন্য ২৫০টি অজুখানা এবং পানি ও খাবারের ব্যবস্থাও রাখা হবে।
পুলিশ সুপার ইফতেখার আহমেদ জানান, মাঠে প্রবেশের জন্য মোট ১৯টি গেট তৈরি করা হয়েছে, যেগুলোতে মেটাল ডিটেক্টর বসানো থাকবে। শুধু জায়নামাজ ও ছাতা নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন মুসল্লিরা। থাকবে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। ৪৩টি সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং করা হবে। শহরের ৩১টি পয়েন্টে অবস্থান করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। মাঠে অনক্যামেরায় সাদা পোশাকে ১০০ জন পুলিশ থাকবে। রাতে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে মাঠ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। আকাশে উড়বে ড্রোন। মাঠে পুলিশ ক্যাম্প প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া, মোবাইলফোন বা কেউ হারিয়ে গেলে খুঁজে দেওয়াসহ তাদের রেডিও সেবা দেওয়া হবে।
মঙ্গলবার বিকেলে ঈদগাহ মাঠ পরিদর্শন করে হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, ৫২ গম্বুজবিশিষ্ট নান্দনিক সৌন্দর্যমণ্ডিত গোরে শহীদ ময়দানে এশিয়ার সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে মিনার ঘিরে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন এই আলোকসজ্জা মানুষের নজর কাড়ছে। এসময় মাঠে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকায় বাইরে থেকে মিনারের ছবি তুলছেন অনেকেই।
সোনালীনিউজ/এমটিআই