ঢাকা : চলতি বছর সৌদি আরবে পবিত্র হজ পালন করতে গিয়ে আজ পর্যন্ত ৭৫ জন বাংলাদেশির মৃত্যুর হয়েছে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। এদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ জন এবং নারী ১৬ জন। মক্কায় মারা গেছেন ৬১ জন, মদিনায় চারজন, মিনায় সাতজন, আরাফায় দুইজন ও মুজদালিফায় একজন। সৌদি আরবের আইন অনুযায়ী, এদের ওই দেশেই দাফন করা হয়েছে।
বুধবার (৫ জুলাই) ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ বুলেটিনে এসব তথ্য জানা গেছে।
বুলেটিনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ হজ অফিস মক্কার কনফারেন্স কক্ষে মঙ্গলবার রাত ১০টায় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দারের সভাপতিত্বে একটি বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় হজ পরবর্তী সম্মানিত হাজিদের নির্বিঘ্নে দেশে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হয়। সভায় অন্যান্যের মধ্যে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ) এবং প্রশাসনিক দলের দলনেতা জনাব মো. মতিউল ইসলাম, কাউন্সিলর (হজ) মো. জহিরুল ইসলাম, হজ প্রশাসনিক দলের সদস্যবৃন্দ, চিকিৎসক এবং আইটি দলের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সৌদি আরবের আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি হজ করতে গিয়ে যদি মৃত্যুবরণ করেন তাহলে তার মরদেহ সৌদি আরবে দাফন করা হয়। মৃতদেহ তার নিজ দেশে নিতে দেওয়া হয় না। এমনকি পরিবার-পরিজনের কোনো আপত্তি গ্রাহ্য করা হয় না।
মক্কায় হজযাত্রী মারা গেলে মসজিদুল হারামে জানাজা হয়। আর মদিনায় মারা গেলে মসজিদে নববীতে জানাজা হয়। জেদ্দায় মারা গেলে জেদ্দায় জানাজা হয়। জানাজা শেষে মক্কার শারায়া কবরস্থানে দাফন করা হয়। মদিনার জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে অথবা জেদ্দায় কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এবার ৩২৫টি ফ্লাইটে ব্যবস্থাপনা সদস্যসহ মোট ১,২২,৮৮৪ জন হজযাত্রী সৌদি আরব গেছেন। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পরিবহন করেছে ১৫৯টি ফ্লাইটে ৬১,১৮০ জন হজযাত্রী; সৌদি এয়ারলাইন্স পরিবহন করেছে ১১৩টি ফ্লাইটে ৪১,৪৬৮ জন হজযাত্রী এবং ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্স পরিবহন করেছে ৫৩টি ফ্লাইটে ২০,২৩৬ জন হজযাত্রী।
গত ২১ মে থেকে হজযাত্রীদের ফ্লাইট শুরু হয়। সৌদি আরবে যাওয়ার শেষ ফ্লাইট ছিল ২২ জুন। হজ শেষে ফিরতি ফ্লাইট শুরু হয়েছে ২ জুলাই এবং শেষ হবে ২ আগস্ট।
এবার হজে গিয়ে যারা মারা গেছেন : এদিকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ ম্যানেজমেন্ট পোর্টাল পিলগ্রিমে আজ বুধবার (৫ জুলাই) সকাল পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে ৭৪ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে।
পিলগ্রিম সূত্র বলছে, এবার হজে গিয়ে ৩১ মে প্রথম মারা যান গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের মো. আব্দুল ওয়াহেদ (৪৬), ২ জুন শাহানারা বেগম (৬৪) ও ড. মো. শফিকুল ইসলাম (৫৮), তাদের বাড়ি যথাক্রমে ঢাকার বাটামারা ও পাবনার সদরে; ৩ জুন শেরপুরের ঝিনাইগাতির মো. আলী হোসেন (৬৭), ৪ জুন ঢাকার খিলগাওয়ের মো. আয়ুব খান (৪৮), ৬ জুন পঞ্চগড়ের রাধানগরের মো. শহিদুল আলম (৬৭), ৭ জুন বগুড়ার সান্তাহারের রোকেয়া বেগম (৬২) ও কুমিল্লার দেবীদ্বারের মো. আবুল হোসেন ভূইয়া (৭১), ৮ জুন মো. আদম উদ্দিন মণ্ডল (৭১) ও মো. আমজাদ হোসেন প্রধান (৫৭), তাদের বাড়ি যথাক্রমে নওগাঁর আত্রাই ও গাইবান্ধার বোনারপাড়া।
এ ছাড়া ৯ জুন মারা যান রংপুরের সদরের মো. মতিউর রহমান (৬৮), ১০ জুন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ির আব্দুল মান্নান (৫৯) ও চাঁদপুরের হবিগঞ্জের মো. আব্দুল মতিন (৬০), ১১ জুন রংপুরের বদরগঞ্জের মো. শহিদুল্লাহ মন্ডল (৭৬), ১২ জুন কুমিল্লার বরুড়ার মোহাম্মদ আবুল হাশেম (৬১), ১২ জুন মাগুরার মোহাম্মদপুরের সৈয়দ নাইমুল হক (৬২), ১৩ জুন সাতক্ষীরা সদরের মাখতুরা খাতুন (৬১), ১৪ জুন রাজশাহীর বুলুনপুরের মো. শাজাহান আলী (৬৬), কুমিল্লার বরুড়ার মো. আবুল কাশেম (৪৬) ও কক্সবাজারের বদরখালীর মো. রিদওয়ান (৬৪)।
গত ১৫ জুন মারা যান নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের আব্দুল গফুর (৬১), ১৭ জুন যশোরের বাঘের পাড়ার মো. আব্দুল কুদ্দুস খান (৬৪), ১৮ জুন টাঙ্গাইলের ধনবাড়ির মো. আব্দুল আজিজ (৬৩), ২৩ জুন লালমনিরহাটের মো. আবুল ফাত্তাহ (৬৪) ও সিলেটের খাজাঞ্চির মো. সুলেমান খান (৭৫) এবং ২৪ জুন মারা যান কক্সবাজারের মনোয়ারা বেগম (৭২), ২৫ জুন রংপুর সদরের মো. নুরুল আমিন (৬৮), নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের মো. আব্দুল মোতালিব (৬৩) ও জয়পুরহাটের আহম্মেদ আলী (৬৪), ২৬ জুন টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের হাজেরা বেগম (৬১), ২৭ জুন গাইবান্ধার মো. নাজমুল আখতার (৬৩) ও হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের হালিমা বেগম (৬২)।
এ ছাড়া ২৮ জুন সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ১৮ জন হাজি মারা যান; তারা হলেন— ঢাকার উত্তরার জামিলা বেগম (৫৬), গাজীপুরের কালিয়াকৈরের মো. শামসুল আলম (৬২), চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের মো. আব্দুল মান্নান (৬৯), শেরপুর সদরের হামিদা বেগম (৭৯), পিরোজপুরের নেসারাবাদের মো. আবুল কালাম (৬১), নীলফামারী সদরের বিলকিস বেগম (৫২), বগুড়া সদরের মো. হাফিজুর রহমান জিলাদার (৫৪), কুমিল্লার দাউদকান্দির মো. গিয়াসউদ্দিন মোল্লাহ (৫৭), ফরিদপুরের সদরপুরের রহমান খালাসি (৭৮), সিরাজগঞ্জ সদরের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুস সালাম (৭২), পাবনার সাঁথিয়ার মো. জাকির উদ্দিন সরকার (৫৭), সিরাজগঞ্জ সদরের মো. আমিনুল হক (৬০), ঢাকার কামরাঙ্গির চরের খন্দকার জামাল উদ্দিন (৬১), নওগাঁর সাপাহারের মো. আজহার আলী (৭৩), চাঁদপুরের কচুয়ার মো. সেকান্দার আলী (৬৪), কুষ্টিয়া সদরের মো. আব্দুল হাদি (৪১), ঢাকার মোহাম্মদপুরের মো. আব্দুস সালাম (৬৯) ও ঢাকার বাড্ডার মোসা. পারুল (৭১)।
২৯ জুন মারা যান ঢাকার সবুজবাগের মো. আব্দুল মালেক (৭১), রাজশাহীর পুঠিয়ার মো. হজরত আলী প্রামানিক (৭৭), ফেনী সদরের সিরাজুল ইসলাম (৬৭), ঢাকার সাভারের মো. আমান উল্লাহ (৭১), ঢাকার বাড্ডার মো. এ হান্নান ভূইয়া (৭০) ও নাটোরের লালপুরের মো. শহিদুল ইসলাম (৬০), ৩০ জুন ভোলার দৌলতখানের মো. শেখ ফরিদ খান (৬৬), মেহেরপুর সদরের মো. আক্কাস আলী (৭১), ১ জুলাই কুষ্টিয়া সদরের মজিরন নেসা (৭১), সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের রাবেয়া বেগম (৫৮), ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের আব্দুজ জহির কাজী (৬৮), জামালপুরের মাদারগঞ্জের মনোয়ারা বেগম (৫৫) ও সিরাজগঞ্জের উল্লাহপাড়ার মো. আমজাদ হোসেন (৭১)।
সর্বশেষ ২ জুলাই মারা যান শেরপুরের ঝিনাইগাতির মো. আব্দুল জব্বার (৬৬) ও বগুড়া সদরের এন কে এম শহিদুল ইসলাম কালাম (৫৩), ৩ জুলাই সিরাজগঞ্জের উল্লাহপাড়ার মো. গোলাম মোস্তফা (৬৫), চাপাইনবাবগঞ্জ সদরের মোসলেমা খাতুন (৬৫), কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের ফিরোজ মিয়া (৫৮), চট্টগ্রামের ডাবল মুড়িংয়ের মো. আবু তাহের (৬১) ও বগুড়া সদরের রুমি বেগম (৪৫), ৪ জুলাই কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ির মো. গোলাম মোস্তফা সরকার (৪৭), ঢাকার মিরপুরের শামসুল আলম (৭৭), চাপাইনবাবগঞ্জ সদরের মো. নূরতাজ আলী (৭৪) ও যশোরের মনিরামপুরের মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক (৬৫)।
সোনালীনিউজ/এমটিআই