• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

কোরবানির যাবতীয় মাসআলা


ধর্মচিন্তা ডেস্ক জুন ১৭, ২০২৪, ০৭:০০ এএম
কোরবানির যাবতীয় মাসআলা

ঢাকা : ঈদুল আজহার অন্যতম ইবাদত পশু কোরবানি করা। পূর্ববর্তী শরিয়তসমূহে কোরবানির বিধান থাকলেও পদ্ধতিগত ভিন্নতা ছিল। আমাদের কোরবানি হচ্ছে ইবরাহিম (আ.) কর্র্তৃক নিজ ছেলে ইসমাঈল (আ.)-কে কোরবানি করার মতো মহান ত্যাগ ও মানসিকতার স্মৃতিচারণের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অপার সুযোগ। পাশাপাশি ঈদুল আজহার শ্রেষ্ঠ আমল। সেদিন পিতা-পুত্র পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে কোরবানির জন্য আল্লাহতায়ালা ইসমাঈল (আ.)-এর পরিবর্তে বেহেশত থেকে দুম্বা পাঠিয়ে কোরবানির বিধান কার্যকর করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেন। যে বিষয়টি কোরআন-হাদিসে বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর পরবর্তীদের মধ্যে এই ঐতিহ্য (কোরবানি) স্মরণীয় (চালু) করে রাখলাম।’ (সুরা সাফফাত ১০৮)

কোরবানির নির্দেশ প্রদান করে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আপনি আপনার প্রতিপালকের জন্য নামাজ আদায় করুন এবং কোরবানি করুন।’ (সুরা কাউসার ২)। উল্লেখ্য, কোরবানির পশুর গোশত খাওয়ার বিধান শুধু রাসুল (সা.) ও তার উম্মতকে বিশেষ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য হিসেবে প্রদান করা হয়েছে।

কোরবানির ফজিলত : কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন ‘আল্লাহতায়ালার নিকট কোরবানির দিন মানবজাতির কোরবানি অপেক্ষা অধিকতর পছন্দনীয় কোনো আমল নেই। বিচারদিনে কোরবানির পশুকে তার শিং, পশম ও খুরসহ উপস্থিত করা হবে। পশুর রক্ত জমিনে পড়ার পূর্বেই আল্লাহতায়ালার নিকট তা বিশেষ মর্যাদায় পৌঁছে যায়। সুতরাং তোমরা আনন্দচিত্তে কোরবানি করো।’ (তিরমিজি)

যায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) বর্ণনা করেন, ‘কোরবানি সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরাম (রা.) রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেন, কোরবানি কী? রাসুল (সা.) উত্তরে বলেন, তোমাদের পিতা ইব্রাহিম (আ.)-এর সুন্নত। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) জিজ্ঞেস করেন, এতে আমাদের জন্য কী পুণ্য রয়েছে? রাসুল (সা.) বলেন, প্রতিটি পশমের পরিবর্তে একটি করে পুণ্য রয়েছে। আবার জিজ্ঞেস করেন, (অধিক) পশম বিশিষ্ট পশুর (ভেড়া) বেলায় কী হবে? রাসুল (সা.) বলেন, প্রতিটি পশমের পরিবর্তে একটি করে পুণ্য রয়েছে।’ (মিশকাত)

আবার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি না করার ব্যাপারে হাদিসে কঠোর হুশিয়ারি ঘোষণা করা হয়ছে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার পরও কোরবানি করল না সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছেও না আসে।’ (ইবনে মাজাহ)

বলা বাহুল্য, কোরবানিসহ মোমিনের প্রতিটি ইবাদত ও পুণ্যকাজ শুধু আল্লাহতায়ালার হুকুম পালন এবং সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশে হতে হবে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘বলো, নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহর জন্য।’ (সুরা আনআম ১৬২)।

আল্লাহতায়ালা আরও ইরশাদ করেন, ‘কোরবানির জন্তুর গোশত, রক্ত আল্লাহর নিকট পৌঁছে না, বরং পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া (অন্তরের বিশ^স্ততা)।’ (সুরা হজ ৩৭)।

কোরবানিদাতার জন্য সর্বাগ্রে আবশ্যক হচ্ছে, নিয়ত পরিশুদ্ধ করা তথা শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের লক্ষ্যে এবং হুকুম পালনার্থে কোরবানি করা। পাশাপাশি কিছু জরুরি

মাসআলাও জেনে নিতে হবে। যাতে করে শরিয়ত নির্দেশিত পন্থায় নিখুঁত ও সঠিকভাবে কোরবানি সম্পাদন করা যায়। অন্যথায় কোরবানি ত্রুটিযুক্ত এবং কবুল হওয়ায় ব্যাপারে ঝুঁকি থেকে যায়। কোরবানি সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ মাসআলাসমূহ উল্লেখ করা হলো।

কোরবানি যাদের ওপর ওয়াজিব : প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন, স্থায়ী নিবাসে অবস্থানকারী প্রত্যেক ওই মুসলমান ব্যক্তির ওপর কোরবানি ওয়াজিব, যিনি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক। অর্থাৎ প্রয়োজনের অতিরিক্ত এবং ঋণ পরিশোধের পর সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা কিংবা সমমূল্যমান সম্পদের অধিকারী হওয়া। উল্লেখ্য, নেসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী ব্যক্তি বিশাল সম্পদশালী হলেও তার ওপর একটি পশু কোরবানি করাই আবশ্যক হয়। তবে একাধিক পশু কোরবানি করতেও কোনো অসুবিধা নেই, বরং সহিহ-শুদ্ধ নিয়তে তা অনেক উত্তম। কেউ কোরবানির মান্নত করলে তার জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব হয়ে যায়। মান্নতকারী ব্যক্তি নেসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী হলে তাকে দুটি পশু কোরবানি করতে হবে। একটি শরিয়ত কর্র্তৃক ওয়াজিব হিসেবে, অপরটি মান্নতের জন্য। অপ্রাপ্তবয়স্ক, পাগল বা মুসাফির ব্যক্তি নেসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী হলেও তাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়।

কোরবানির দিনসমূহ : জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ হচ্ছে কোরবানির দিন। সর্বোত্তম ১০ তারিখ, তারপর যথাক্রমে ১১ ও ১২ তারিখ। কেউ এই তিন দিনের যে কোনো দিন নেসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী হলে তার জন্য কোরবানি করা আবশ্যক।

যেসব পশু দ্বারা কোরবানি বৈধ : কোরবানির জন্য ৬টি পশু নির্দিষ্ট। গরু, মহিষ, উট, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা। এগুলো ব্যতীত অন্যান্য পশু দিয়ে কোরবানি দেওয়া যাবে না। ছাগল ও ভেড়ার জন্য ১ বছর, গরু ও মহিষের জন্য ২ বছর এবং উটের জন্য ৫ বছর বয়স হওয়া আবশ্যক। অবশ্য ভেড়া যদি মোটাতাজা হয়, যা দেখতে ১ বছরের মনে হয়, তবে সেটি দিয়েও কোরবানি জায়েজ হবে।

ত্রুটিযুক্ত পশু দিয়ে কোরবানি : উপরোল্লিখিত কোনো পশুর কান বা দৃষ্টিশক্তি এক-তৃতীয়াংশের কম নষ্ট বা কাটা পড়লে সেটি কোরবানি দেওয়া জায়েজ। এক-তৃতীয়াংশ বা তার বেশি হলে জায়েজ নয়। যে পশুর লেজ অর্ধেকের বেশি আছে, সেটি কোরবানি করতে কোনো অসুবিধা নেই। এর বিপরীত হলে জায়েজ নয়। যে পশুর শিং মোটেই ওঠেনি সেটি কোরবানি দেওয়া জায়েজ। যদি শিং গোড়ায় ভেঙে যায় এবং এর ক্ষতি মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছে, তবে সেটি দিয়ে কোরবানি আদায় হবে না। যে পশুর দাঁত মোটেই ওঠেনি বা অর্ধেক পড়ে গেছে সেটি কোরবানি দেওয়া যাবে না। যে পশুর জন্মগতভাবে কান নেই সেটি কোরবানি দেওয়া যাবে না। যে পশুর জিহ্বা এ পরিমাণ কাটা যে, ঘাস-পাতা খেতে পারে না, তা কোরবানি দেওয়া যাবে না। যে পশু তিন পা দিয়ে চলে, এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা রাখতে পারে কিন্তু ওই পা দিয়ে চলতে পারে না, সেটি কোরবানি দেওয়া যাবে না। যে পশুর স্তন কাটা বা জখম হওয়ার কারণে বাচ্চাকে দুধ পান করাতে পারে না, সেটি দিয়ে কোরবানি বৈধ নয়। জেনেশুনে চুরিকৃত পশু ক্রয় করা এবং তা কোরবানি করা জায়েজ নয়। হিজড়া পশু কোরবানি করা জায়েজ নয়। বন্ধ্যা পশু কোরবানি করা জায়েজ। গর্ভবতী পশু কোরবানি করা মাকরুহ। ত্রুটিহীন পশু ক্রয় করার পর সেটিতে যদি এমন কোনো ত্রুটি জন্ম নেয়, যা কোরবানি শুদ্ধ হওয়ার জন্য প্রতিবন্ধক, তবে নেসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী ব্যক্তির জন্য এরূপ পশু দিয়ে কোরবানি বৈধ নয়, দরিদ্র ব্যক্তির জন্য বৈধ।

শরিক হয়ে কোরবানি : গরু, মহিষ ও উটে সর্বোচ্চ ৭ জন শরিক হয়ে কোরবানি দেওয়া যায়। অংশীদাররা সম্পূর্ণ পশু অংশ অনুযায়ী সঠিকভাবে ওজন করে করে ভাগ করে নেবেন। কোনোভাবেই কমবেশি করা যাবে না। নেসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী ব্যক্তি পশু ক্রয় করার পর অন্যকে শরিক করতে পারবেন। কোরবানি ওয়াজিব নয়, এমন ব্যক্তি পশু ক্রয়কালে বা পূর্বে অন্যকে শরিক করতে পারবেন বা শরিক করার ইচ্ছা নিয়ে পশু ক্রয় করে থাকলে পরবর্তী সময় শরিক করতে পারবেন। অন্যথায় পারবেন না। কোরবানির পশু জবাই করার পর সেটিতে শরিক করা বা শরিক হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যারা শরিক হয়ে কোরবানি করবেন তাদের প্রত্যেকের টাকা বা অংশীদারত্ব শতভাগ হালাল ভিত্তিতে হতে হবে। একজনের অংশীদারত্ব (মূল্য) হারাম হলে কারও কোরবানি শুদ্ধ হবে না। অনুরূপভাবে সবার নিয়ত বিশুদ্ধ তথা একমাত্র আল্লাহর জন্য হতে হবে। একজনের নিয়তে ভিন্নতা (লোকদেখানো, অহংকার, সামাজিকতা ইত্যাদি) থাকলে সবার কোরবানি বিনষ্ট হয়ে যাবে। সমাজে একটি মারাত্মক ভুল কথা প্রচলিত রয়েছে  যে, ৭ নামে কোরবানি। যাদের পক্ষ থেকে কোরবানি করা হয় তাদের নামগুলো পড়া হয় এবং এ কথাটি বলা হয়। মূলত কথাটি দ্বারা উদ্দেশ্য, ৭ জনের পক্ষ থেকে কোরবানি। কিন্তু কথাটি শুনতে মনে হয় ৭ নামে। যা অনাকাক্সিক্ষত এবং শ্রুতিকটু। তাই এ ভুল থেকে আমাদের অবশ্যই বের হয়ে আসতে হবে। বলতে হবে অমুক অমুক এর পক্ষ থেকে বা ৭ জনের পক্ষ থেকে একমাত্র আল্লাহর নামে।

অন্যের পক্ষ থেকে কোরবানি : কারও ওপর কোরবানি ওয়াজিব এমন ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া তার পক্ষ থেকে অন্য কেউ কোরবানি করলে তা আদায় হবে না। কারও অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান নেসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী হলে তার পক্ষ থেকে তার অভিভাবকের জন্য কোরবানি করা মুস্তাহাব। সন্তান বা অভিভাবকের ওপর আবশ্যক নয়। মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোরবানি দেওয়া এবং কোরবানিকৃত পশুর গোশত খাওয়া জায়েজ। কিন্তু মৃত ব্যক্তি কোরবানির ওসিয়ত করে গেলে কোরবানিকৃত পশুর সম্পূর্ণ গোশত বণ্টন করে দেওয়া ওয়াজিব। রাসুল (সা.) ও তার পরিবার-পরিজন, মৃত পিতা-মাতা, ভাই-বোন বা অন্যদের পক্ষ থেকে কোরবানি দেওয়া মুস্তাহাব।

কোরবানির পশুর যত্ন : কোরবানির পশুকে যত্নসহকারে রাখা এবং কোরবানির পূর্বে ভালোভাবে পানাহার করানো মুস্তাহাব। কোরবানির পশু থেকে কোনো প্রকার ফায়দা গ্রহণ করা মাকরুহ। এমনকি দুধ দোহনও। পশু নাপাক খাদ্য খায় বলে জানা থাকলে কিছুদিন আবদ্ধ রেখে কোরবানি করতে হবে। অন্যথায় জায়েজ হবে না। এ ক্ষেত্রে উট ৪০ দিন, গরু-মহিষ ২০ দিন এবং ছাগল-ভেড়া ১০ দিন বেঁধে রাখতে হবে।

কোরবানির সঙ্গে আকিকা : কোরবানির গরু, মহিষ ও উটে যেহেতু সর্বোচ্চ ৭টি অংশ রয়েছে, তাই এক বা একাধিক অংশ দিয়ে আকিকা করতে কোনো অসুবিধা নেই।

পশু হারিয়ে গেলে করণীয় : নেসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী ব্যক্তি কোরবানির জন্য পশু ক্রয় বা নির্দিষ্ট করার পর সেটি যদি হারিয়ে যায়, তবে আরেকটি পশু কোরবানি করতে হবে। পরে যদি আবার হারানোটা পাওয়া যায় তবে তা কোরবানি করা উত্তম, আবশ্যক নয়। দরিদ্র ব্যক্তি পশু ক্রয় বা নির্দিষ্ট করার পর সেটি যদি হারিয়ে যায়, তবে আরেকটি কোরবানি করা আবশ্যক নয়।

কোরবানি না দিলে করণীয় : কোরবানি ওয়াজিব এমন ব্যক্তি পশু ক্রয় করার পর কোনো কারণে কোরবানি করতে না পারলে ক্রয়কৃত পশু যে কোনো দরিদ্র ব্যক্তিকে সদকা করে দেবেন। কোরবানি ওয়াজিব এমন ব্যক্তি কোরবানি না করে থাকলে তার জন্য একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব।

জবাই সংক্রান্ত মাসআলা : জবাইকারী এবং জবাই কাজে অংশগ্রহণকারী সবাই ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে পশু জবাই করবেন। অমুসলিম ব্যক্তি জবাই করলে কোরবানি আদায় হবে না এবং গোশত খাওয়া জায়েজ হবে না। যে স্থানে জবাই করা হবে, সেখানে পশুকে কেবলার দিকে মুখ করে সহজভাবে শোয়ানো এবং তাড়াতাড়ি জবাই করা মুস্তাহাব। জবাইকারী কেবলার দিকে চেহারা করে ধারালো চাকু দিয়ে জবাই করা মুস্তাহাব। পশু কোরবানি করার পর জীবিত বাচ্চা পাওয়া গেলে কোরবানির দিনসমূহের মধ্যে তা কোরবানি করে দিতে হবে। বাচ্চার গোশত খাওয়া জায়েজ। এক পশুর সামনে আরেক পশু জবাই করা মাকরুহ। ভোঁতা চাকু দিয়ে জবাই করা এবং জবাই করার পর অঙ্গ-প্রতঙ্গের নাড়াচাড়া পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার আগে চামড়া ছাড়ানো মাকরুহ।

কোরবানিদাতার জন্য মুস্তাহাব কাজ : কোরবানিদাতা জিলহজ মাসের চাঁদ ওঠার পর থেকে কোরবানি করার পূর্ব পর্যন্ত চুল, গোঁফ, নখ ইত্যাদি না কেটে কোরবানি করার পর কাটা মুস্তাহাব। চল্লিশ দিন বা বেশি হলে এরূপ করবেন না। ঈদের দিন কিছু না খেয়ে কোরবানির গোশত দিয়ে খাওয়া শুরু করবেন। কোরবানিদাতা নিজ হাতে জবাই করবেন। সম্ভব না হলে জবাইকালে সামনে থাকবেন। পশু জবাই করা, গোশত কাটা, চামড়া ছাড়ানো ইত্যাদি কোনো কাজের পারিশ্রমিক হিসেবে কোরবানির পশুর গোশত, হাড্ডি, চামড়া তথা পশুর কোনোকিছু দেওয়া জায়েজ নয়। টাকা বা অন্য কোনো কিছু দিয়ে পারিশ্রমিক দেবেন।

গোশত বণ্টন পদ্ধতি : কোরবানির গোশত বণ্টনের মুস্তাহাব পদ্ধতি হচ্ছে, আহারযোগ্য সবকিছু তিনভাগ করে একভাগ নিজের জন্য রাখবেন, একভাগ পাড়া-পড়শি ও আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বণ্টন করবেন এবং একভাগ দরিদ্রদের দেবেন। কেউ চাইলে সবটুকুই নিজের জন্য রেখে দিতে পারেন। তবে এটি উত্তম নয়।

চামড়ার বিধান: কোরবানিদাতা ইচ্ছা করলে চামড়া নিজের কোনো কাজে ব্যবহার করতে পারবেন বা অন্য কাউকে দান করে দিতে পারবেন। চামড়া বিক্রি করে দিলে তাতে দরিদ্রদের অধিকার সাব্যস্ত হয়ে যায়। তাই বিক্রয় করা হলে মূল্য অবশ্যই এক বা একাধিক নিঃস্ব-অসহায়, দরিদ্রদের দিয়ে দিতে হবে। মসজিদ, মাদ্রাসা, মক্তব ইত্যাদি ধর্মীয় বা দাতব্য প্রতিষ্ঠান, জনসেবামূলক কাজ, কোনোকিছুর পারিশ্রমিক বা ঋণ পরিশোধ কাজে ব্যবহার করা বা দেওয়া জায়েজ নয়। মাদ্রাসার লিল্লাহ বোর্ডিং (যেখানে হকদার রয়েছে), এতিমখানায় মূল্য বা চামড়া দেওয়া যাবে। পশুর শরীর থেকে সম্পূর্ণ চামড়া ছাড়ানোর পূর্বে চামড়া বিক্রি করা জায়েজ নয়। কোরবানির পশু জবাই বা গোশত কাটার পারিশ্রমিক হিসেবেও চামড়া বা তার মূল্য দেওয়া জায়েজ নয়।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!