ঢাকা : হজরত আবু বকর (রা.) একবার খুতবার শুরুতে বললেন, হে লোকসকল, আমাকে তোমাদের শাসক বানানো হয়েছে, যদিও আমি তোমাদের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি নই। অতএব আমি যদি ভালো কাজ করি, তাহলে আমাকে সাহায্য করো। আর আমি যদি মন্দ কাজ করি, তাহলে আমাকে সংশোধন করো। সত্য বলা আমানত, মিথ্যা বলা খেয়ানত। তোমাদের দুর্বল ব্যক্তি আমার কাছে শক্তিশালী যতক্ষণ না আমি তার হক ফিরিয়ে দেব, ইনশাআল্লাহ। আর তোমাদের শক্তিশালী (জালেম) ব্যক্তি আমার কাছে অসহায় ঠিক ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ না আমি তার থেকে (আরেক ব্যক্তির) হক তুলে আনি, ইনশাআল্লাহ। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৬/৩৩৩)
তার এ কথায় বেশ কিছু বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। প্রথমত, ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ সমান, শাসক হোক বা শাসিত, সাদা হোক বা কালো, আরব হোক কিংবা অনারব। কোনোভাবেই একে অন্যের ওপর শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী নয়। এটা বোঝা যায় তার উল্লিখিত কথা ‘যদিও আমি তোমাদের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি নই।’
দ্বিতীয়ত, তিনি বলেছেন, ‘যদি আমি ভালো কাজ করি, তাহলে আমাকে সাহায্য করো।’ এখান থেকে বুঝা যায়, জনগণের সুযোগ আছে শাসকের ভুল শুধরে দেওয়ার। আসল বিষয় হচ্ছে, রাজার চালে রাজ্য চলে। শাসক যদি ঠিক থাকে তাহলে জনগণ এমনিতেই ঠিক হয়ে যায়। এজন্যই জনগণের কর্তব্য হচ্ছে শাসককে শুধরে দেওয়া। তবে সেটা শরিয়ত নির্দেশিত পন্থায় হতে হবে।
তৃতীয়ত, মানুষের মধ্যে ইনসাফ ও সমতা রক্ষা করা, যা ইসলামি রাষ্ট্রের প্রধান উদ্দেশ্য এবং শাসকের প্রধান কর্তব্য। এটা বোঝা যায় তার কথায় ‘তোমাদের দুর্বল ব্যক্তি আমার কাছে শক্তিশালী যতক্ষণ না আমি তার হক ফিরিয়ে দেব।’
ওমর (রা.) যখন আবু বকর (রা.)-এর স্থানে আসেন, মানুষ তার কাঠিন্যের কারণে ভয়ে তটস্থ ছিল। তিনি তখন প্রথম খুতবাতেই মানুষের ভয় দূর করার জন্য বলেন, ‘হে আল্লাহ! আমি খুবই দুর্বল। সুতরাং আমাকে শক্তিশালী করে দেন। আমি অনেক বেশি দৃঢ়। অতএব আমাকে নমনীয় করে দেন। আমি খুব কৃপণ। সুতরাং আমাকে দানশীল বানিয়ে দেন।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা)
ওসমান (রা.) প্রশাসক ও গভর্নরদের কাছে পত্র লিখে বলেন, দেখো, আল্লাহতায়ালা শাসকদের নির্দেশ দিয়েছেন তারা যেন রক্ষক হয়। তাদের এ কথা বলেন, তারা যেন রক্ষক হয়। এই উম্মাহর অগ্রভাগ জামাত রক্ষক ছিল, ভক্ষক ছিল না। তবে খুবই আশঙ্কা যে, শাসকরা ভক্ষক হয়ে যাবে, (শুধু রাজস্ব নিয়েই চিন্তা করবে) রক্ষক থাকবে না (প্রজাদের দেখাশোনা করবে না)। যদি তারা এমনটাই করে, তাহলে লজ্জা উঠে যাবে, আমানতদারিতা ও আনুগত্য চলে যাবে। (তারিখুত তাবারি ৫/২৪৪)
একবার আলি (রা.) খলিফা থাকাকালীন আদালতে গিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কাজি শুরাইহের কাছে গিয়ে বললেন, ইহুদির হাতে এই যে শিরস্ত্রাণটি দেখতে পাচ্ছ, এটা আমার। আমি এটা বিক্রিও করিনি, কাউকে দানও করিনি। কাজি শুরাইহ ইহুদিকে জিজ্ঞাসা করলেন, এ ব্যাপারে তুমি কী বল? সে বলল, এটা আমারই শিরস্ত্রাণ। এটা আগে থেকেই আমার কাছে আছে। তখন শুরাইহ হজরত আলী (রা.)-কে বললেন, আপনার কাছে কী কোনো প্রমাণ আছে? তিনি বললেন, আছে। হাসান ও হুসাইনই সাক্ষ্য দেবে যে, শিরস্ত্রাণটি আমার। কাজি শুরাইহ বললেন, সন্তানের সাক্ষ্য পিতার ক্ষেত্রে অগ্রহণযোগ্য। তখন আলী (রা.) বললেন, জান্নাতি ব্যক্তির সাক্ষ্য অগ্রহণযোগ্য? আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে, হাসান ও হুসাইন জান্নাতি যুবকদের সর্দার।
তখন ওই ইহুদি বলে উঠল, খলিফা আমাকে তার কাজির কাছে নিয়ে এসেছেন, অথচ তার নিজের নিযুক্ত কাজিই তার বিরুদ্ধে ফায়সালা করেছে। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, এই দ্বীন ইসলামই সত্য। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসুল। আসলে শিরস্ত্রাণটি আপনারই ছিল। (সুয়ুতি, তারিখুল খুলাফা)
লেখক : মুহাম্মাদ রাহাতুল ইসলাম
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :