ঢাকা : বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত সীমিত রাখতে প্যারিসে যে চুক্তি হয়েছিল, বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্বন নির্গমন কমাতে থাকলে সে লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব হবে না বলে ইঙ্গিত মিলেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
কারণ এ মুহূর্তে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে যেসব বৈশ্বিক পরিকল্পনা আছে, সেগুলোতে কার্বন-ডাইঅক্সাইড কমানোয় ঘাটতি হবে ৩২০ কোটি টন পর্যন্ত।
গবেষণাটি চালিয়েছে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট অ্যাংলিয়া (ইউইএ), যা প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল নেচারের এক গবেষণাপত্রে। এতে বিভিন্ন দেশের জাতীয় জলবায়ু সুরক্ষা পরিকল্পনায় উল্লিখিত কার্বন নিঃসরণ ঘাটতি পরিমাপ করে ও লক্ষ্যমাত্রা পূরণে যে পদক্ষেপ নিতে হবে, সে বিষয়গুলো বিবেচনা করে গবেষকরা এ উপসংহারে পৌঁছেছেন।
প্রযুক্তি সাইট এনগ্যাজেট বলছে, এই প্রথম এমন গবেষণা চালিয়ে গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন। এ মুহূর্তে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে যেসব বৈশ্বিক পরিকল্পনা আছে, সেগুলোতে কার্বন-ডাইঅক্সাইড কমানোয় ঘাটতি হবে ৩২০ কোটি টন পর্যন্ত। আর এর ফলে ২০৫০ সাল নাগাদ বৈশ্বিক উষ্ণতার সবচেয়ে বাজে প্রভাবগুলো এড়ানোর জন্য যথেষ্ট হবে না। এসব প্রভাবের মধ্যে রয়েছে দাবদাহ, বন্যা, খরা, মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়া ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার মতো ঘটনা।
এই ঘাটতি পূরণে ২০১০ সাল থেকে একই রকম পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক সংগঠন ‘ইউনেপ’কে। ইউইএর গবেষণাটি প্রাথমিকভাবে কার্বন-ডাইঅক্সাইড কমিয়ে আনার বিষয়টিতে মনোযোগ দিলেও এর থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, ভূপৃষ্ঠে মানব প্রজাতি হিসেবে টিকে থাকার ক্ষেত্রে জলবায়ু নীতিমালায় আরও বড় লক্ষ্যমাত্রা রাখা প্রয়োজন।
এর মানে, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে আরও দ্রুত ও দৃঢ়সংকল্প প্রয়োজন, যেখানে আবারও নতুন করে মনোযোগ দিতে হবে নিঃসরণ কমিয়ে আনা ও নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনের দিকে। এমনকি বন কেটে ফেলার প্রবণতাও কমিয়ে আনতে হবে।
কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিভিন্ন টেকসই বিকল্প থাকলেও বিভিন্ন দেশ এটি নিয়ে কথা বলার বিষয়ে তেমন আগ্রহী নয়, পদক্ষেপ নেওয়া তো দূরের বিষয়।
এর মধ্যে রয়েছে আধুনিক এয়ার ফিল্টার সিস্টেম ও এনহ্যান্সড রক ওয়েদারিংয়ের মতো বিকল্প, যার মাধ্যমে বায়ুমণ্ডল থেকে সংগৃহীত কার্বন পাথুরে প্রকৃতিতে জমানো সম্ভব। এর মাধ্যমে পরিবেশ বছরে শুধু ২০ লাখ টন কার্বন-ডাইঅক্সাইড কমে আসবে। সে তুলনায়, গতানুগতিক বিকল্পে কমবে ৩০০ কোটি টন।
গবেষক দলের সদস্য ড. উইলিয়াম ল্যাম্ব বলেন, গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের এই লক্ষ্য পূরণের ক্ষেত্রে আসন্ন বছরগুলোয় এসব বাড়তি বিকল্পব্যবস্থা রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা পরিষ্কার যে, দ্রুতই সব খাতে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে না আনলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখা কখনোই সম্ভব হবে না।
এমটিআই