ঢাকা: লাখ টাকা দামের অনিবন্ধিত মোবাইল ফোনের ব্যবহারকারীদের ট্র্যাক করে বের করার নির্দেশ দিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরে টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি সাংবাদিকদের সংগঠন টিআরএনবি (টেলিকম এন্ড টেকনোলজি রিপোর্টারস নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ) আয়োজিত ‘দেশে মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদনে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে এ নির্দেশনা দেন।
দেশে ব্যবহৃত নিবন্ধিত মোবাইল ফোনের ডাটাবেইজ বিটিআরসিকে সংরক্ষণ এবং তা প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, এনবিআর এবং ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে তাৎক্ষণিক সরবরাহেরও নির্দেশ দেন পলক।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ, ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ, বিটিআরসির মহাপরিচালক মনিরুজ্জামান জুয়েল, রবি আজিয়াটার চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম, বাংলালিংক ডিজিটালের চিফ কর্পোরেট এন্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান, এমটব মহাসচিব লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ জুলফিকার, মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (এমআইওবি) সভাপতি জাকারিয়া শাহিদ বক্তব্য দেন।
প্রতিবছর দেশে প্রায় ৫ কোটি মোবাইল ফোনের চাহিদা আছে জানিয়ে পলক বলেন, ২০২২ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যাক ৩ কোটি মোবাইল ফোন বাংলাদেশে সংযোজন বা উৎপাদন করতে পেরেছিলাম। বিদেশ থেকে আমদানি হয়েছিল, আবার কিছু অবৈধ পথে এসেছে। ২০২৩-২৪ সালে এসে উৎপাদনের সংখ্যাটা কমে গেছে। কিন্তু মোবাইল ব্যবহারকীর সংখ্যা কিন্তু কমছে না।
মোবাইল ফোন উৎপাদনকারীদের দাবির বিষয়ে পলক বলেন, আপনাদের দাবির সাথে একমত পোষণ করছি। বিটিআরসি আপনাদের ইনফরমেশন এবং টেকনোলজি সাপোর্ট দেবে। বিটিআরসি এবং ডিবি প্রধান আশ্বস্ত করেছেন তার গোয়েন্দা বিভাগ পুলিশের পক্ষ থেকে সব সহযোগিতা দেবে। ভোক্তা অধিদপ্তরও আপনাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন।
কয়েকটি সিদ্ধান্ত বিষয়ে পলক বলেন, আমাদের মোবাইলের রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম এবং কাস্টমস থেকে ট্যাক্স পেইড আমদানিকৃত মোবাইলে ফোনের ডেটাবেজ যেন বিটিআরসিতে সংরক্ষিত থাকে। যাতে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ভোক্তা অধিদপ্তর যখনই অভিযানে যাবে তখন যেন ইনস্ট্যান্ট রিয়েল টাইম ভেরিফাই করতে পারে, যাতে করে তারা কোনো সমস্যার সম্মুখীন না হয়।
দ্বিতীয়ত, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন থেকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন করছি। আমরা নিয়ন্ত্রণের থেকে সম্প্রসারণের দিকে নজর দিচ্ছি যাতে করে কর্মসংস্থান বাড়ানো যায়, রপ্তানি আয় বাড়ানো যায়। আইনে মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং মোবাইল ফোনের বিষয়টি অনুপস্থিত ছিল। আইনে সংযোজন করে যাতে অবৈধ হ্যান্ডসেট ব্যবহারকারীদের প্রতিরোধ করা যায়, নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়া যায় তার জন্য চেষ্টা করছি।
তৃতীয়ত, এনইআইআর সিস্টেম আপডেট করবো। এটা এখন একটিভ আছে। সেটা যাতে কোনো নাগরিক নিজেরা চেক করতে পারে সেটি চালু আছে। আমরা মিডিয়াতে প্রচার করবো। সচেতনতামূলক বার্তা দেব যে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য তারা রেজিস্ট্রেশন করবেন। বিদেশ থেকে কোনো ফোন নিয়ে আসলে যেন রেজ্রিস্টেশন করেন।
আর তা না হলে আমরা এনবিআরকে অনুরোধ করবো, ডেটাবেজ দেখে যে ফোনের দাম দুই লাখ, এক লাখ, ৫০ হাজার; তারা নিশ্চয়ই ট্যাক্স দেওয়ার যোগ্যতা রাখে। তাহলে এনবিআর সেই ডেটাবেজে ঢুকে অনিবন্ধিত ফোন ব্যবহারকারীদের ট্র্যাক করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। আমরা ব্লক করবো না, কিন্তু এনবিআরকে ডাটাবেইজ ব্যবহারের সুবিধা দেব।
পলক বলেন, পাশাপাশি আমরা রেগুলোর মার্কেট মনিটরিং করতে চাই। ডিবি প্রধানকে অনুরোধ করবো, অবৈধ হ্যান্ডসেট যেগুলো চোরা পথে বা গ্রে চ্যানেলে এসেছে সেগুলোর বিরুদ্ধে যেন একটা অভিযান শুরু করেন।
পাশাপাশি রপ্তানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ ক্যাশ ইনসেনটিভ দেব। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেব।
টুজি এবং ফোরজি ফোনের ইন্টিগ্রেশনের দাবির বিষয়ে পলক বলেন, সেটা আমরা বিবেচনা করবো। তবে আমরা চাই স্মার্টফোন পেনিট্রেশন বাড়াতে। এক্ষেত্রে সহযোগিতা থাকবে।
তিনি বলেন, আজকে মোবাইল সিম ১৯ কোটি। যখনই প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৮ সালে মোবাইলের লাইসেন্স ওপেন করে দিলেন, আজকে তার ফলে ১৯ কোটি গ্রাহক। সরকারের মালিকানাধীন টেলিটকে ১৮-২২ লাখের বেশি নয়। তাহলে এই ১৯ কোটি গ্রাহক কারা; গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক- প্রাইভেট কোম্পানি।
মোবাইল উৎপাদনকারীদের পক্ষ থেকে কর ইনসেনটিভ প্রদান, চোরাই পথে ফোন আসা বন্ধকরার দাবি করা হয়। তাদের দাবির বিষয়ে প্রস্তাবনা তৈরি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীকে দেবেন বলে জানান টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী।
আইএ