• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

হুমকিতে সীমান্ত পরিস্থিতি


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১৩, ২০২১, ০১:১৪ পিএম
হুমকিতে সীমান্ত পরিস্থিতি

ঢাকা : বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের যদি এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তাহলে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াও সীমান্ত পরিস্থিতি এবং দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গোলাগুলিতে কক্সবাজারের টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক লোক নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে স্থানীয়রাও রয়েছেন। এছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা স্থানীয় কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিককে গলা কেটে ও গুলি করে হত্যা করেছে।

সর্বশেষ গত ৯ জানুয়ারি টেকনাফের একটি ক্যাম্পে দুই রোহিঙ্গা ডাকাত দলের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় একজন নিহত এবং ২৩ জন আহত হয়েছেন। এখনই যদি রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে সীমান্তবর্তী ওই অঞ্চলে পরিস্থিতি গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে।

এ বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মোহাম্মাদ আলী শিকদার বলেন, ক্যাম্পে বিশাল অপরাধচক্র গড়ে উঠেছে। নিজেদের মধ্যে গোলাগুলিতে মারা গেছে বা ওই ধরনের সহিংস ঘটনায় নিরীহ রোহিঙ্গাদের মারা যাওয়ার সংখ্যা প্রায় ৫০ জন। এর মধ্যে বাংলাদেশিও রয়েছেন। এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটেছে।

প্রশ্ন হলো, ক্যাম্পের মতো সংরক্ষিত এলাকায় এরা অস্ত্র পায় কোথায় থেকে? যার কোনো সদুত্তর মিলছে না। ক্যাম্পের মধ্যে শত শত কোটি টাকার মাদক ও মানবপাচারের মতো ভয়াবহ অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। মানব ও নারী পাচারের মতো জঘন্য কাজ হচ্ছে গত কয়েক বছর ধরে।

পরিস্থিতি দেখে এখন মনে হচ্ছে ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ রোহিঙ্গারাই নিয়ে নিয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ আছে কি না সেটাই বড় প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে। সেখানে সহিংস ঘটনার আরো বিস্তার ঘটতে পারে। তাদের যদি এখনই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে না আনা যায়, নিরস্ত্র করা না যায়, তাহলে দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়তে পারে।

একই মত প্রকাশ করেছেন মিয়ানমারে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সাবেক ডিফেন্স এটাশে মোহাম্মাদ শহীদুল হক। বলেন, মাদক চোরাচালান ও মানবপাচারসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হচ্ছে সেখানে। এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে স্থানীয় কিছু চক্র জড়িত, যাদের সবাই চেনে।

এ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড এখনো সংঘবদ্ধ অপরাধ বা অর্গানাইজড ক্রাইম হিসেবে রূপ নেয়নি, কিন্তু এরা যদি সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রে পরিণত হয় এবং পরবর্তী সময়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে গোটা অঞ্চলটির পরিস্থিতি অত্যন্ত ভীতিকর হয়ে উঠবে। রাখাইনে আরাকান আর্মি নামে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী রয়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রতি তারা সহানুভূতিশীল। এ গ্রুপের সঙ্গে যদি রোহিঙ্গারা মিশে যায়, তাহলে সীমান্ত পরিস্থিতি ব্যাপক অস্থিতিশীল হয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে।

মিয়ানমার নাগরিকদের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক ও আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম।

বলেন, গত ৬ জানুয়ারি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় নিরাপত্তা কার্যক্রম জোরদারের ব্যবস্থা চলমান আছে। সভায় কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সেগুলো বাস্তবায়নে কিছু সময়ের প্রয়োজন হবে।

একই বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য কাজ করার পাশাপাশি ক্যাম্পে স্বাভাবিক পরিস্থিতি নিশ্চিত ও নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। যখন প্রত্যাবাসন শুরু হবে তখন ক্যাম্পে স্বাভাবিক পরিস্থিতি নিশ্চিত করা জরুরি। এর জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।

সম্প্রতি বিভিন্ন সহিংস ঘটনার কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ৬ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি বৈঠক হয়। যেখানে ক্যাম্পের নিরাপত্তা ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এর মধ্যে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন, রোহিঙ্গাদের চলাচল সীমিত করতে ক্যাম্পের চারপাশে ফেন্সিং (কাঁটাতারের বেড়া) ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা আরো জোরদার করা। ক্যাম্প পরিস্থিতি দেখভালের পুরো দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ক্যাম্পগুলোতে মোট ১৪২ কিলোমিটার বেড়া দেওয়ার কাজ চলছে।

ইতোমধ্যে ১১১ কিলোমিটার বেড়ার কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ আগামী ৬ মাসের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

এছাড়া ক্যাম্পের লোকজনের গতিবিধি নজরদারিতে রাখতে চারপাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণ এবং সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে সাত লাখ ৪১ হাজার ৮৪১ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৭৬ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের ৩৫টি ক্যাম্পে অবস্থান করছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!