• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১

কানেকটিভিটির সম্ভাবনা বেড়েছে


বিশেষ প্রতিনিধি মার্চ ৩১, ২০২১, ০৩:১৮ পিএম
কানেকটিভিটির সম্ভাবনা বেড়েছে

ঢাকা : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এবারের ঢাকা সফরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও পারস্পরিক আস্থা যেমন বেড়েছে, তেমনি আঞ্চলিক কানেকটিভিটির ক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে নতুন সম্ভাবনার। এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

তাদের মতে, এর আগে বিভিন্ন সময় দুদেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য-বিনিয়োগ ও অমীমাংসিত ইস্যুগুলো বেশি গুরুত্ব পেলেও এবার আঞ্চলিক উন্নয়নে কানেকটিভিটির গুরুত্ব নিয়ে বিশেষ জোর দেওয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল ও ভুটানের (বিবিআইএন) মধ্যে যে সমঝোতা রয়েছে সে বিষয়ে আগে নজর দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির এবারের ঢাকা সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল আঞ্চলিক কানেকটিভিটি। তবে এই কানেকটিভিটি শুধু সড়কপথ, রেলপথ, নৌপথ বা আকাশপথে পণ্য পরিবহনই, এটি এই অঞ্চলের জনগণের মধ্যে বহুমাত্রিক কানেকটিভিটির সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

এ থেকে বাংলাদেশ কীভাবে লাভবান হতে পারে তা নিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় আসতে হবে।

এ ছাড়া এই সফরে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানকে নিয়ে চার দেশীয় কানেকটিভিটি (বিবিআইএন) গড়ে তোলার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এসেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ-ভারতের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকেও ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, মোদির এবারের সফর ছিল কিছুটা ব্যতিক্রমী। তার সফরের দুটি দিক প্রতিফলিত হয়েছে।

প্রথমত, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ও বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে আরো কাছাকাছি আসার সুযোগ হয়েছে। এই সফরে মোদিসহ যেসব শীর্ষ নেতা ঢাকায় এসেছিলেন তাদের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে আরো গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।

এছাড়া দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বৃদ্ধি ও চ্যালেঞ্জগুলো একসঙ্গে মোকাবিলা করার বিষয়ে একমত হয়েছে দুদেশ। তবে হাসিনা-মোদি বৈঠকে যেসব দিকনির্দেশনা এসেছে তা বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিতে হবে।

দ্বিতীয়ত, ভারত ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে যেভাবে সমর্থন দিয়েছিল, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এবারের সফরে সেই সমর্থন আরেকবার প্রমাণ হলো। মোদি নিজেও বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে ভারত সহযাত্রী হতে চায়, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়।

এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরে আঞ্চলিক কানেকটিভিটির ক্ষেত্রে ঢাকা-শিলিগুড়ি ট্রেন চলাচল নতুন সংযোজন।

এছাড়া বাংলাদেশ-ভারত ও নেপালের মধ্যে যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী পরিবহন চলাচলের বিষয়েও একমত হয়েছে। এই তিন দেশের মধ্যে যাত্রীবাহী বাস চালানোর বিষয়ে ইতোমধ্যে সমীক্ষার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন এই তিন দেশ মিলে এ বিষয়ে একটি চুক্তিতে উপনীত হবে শিগগির।

সূত্র জানায়, ভারত যেমন বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ৭টি রাজ্যে পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রানজিট চায়, তেমনি বাংলাদেশও ভারতের ওপর দিয়ে নেপাল ও ভুটানে পণ্য পরিবহনে ট্রানজিট চায়।

ঢাকার কূটনীতিকরা জানিয়েছেন, নেপাল ও ভুটানের পাশাপাশি বাংলাদেশ এ অঞ্চলের অন্য দেশ মিয়ানমারের সঙ্গেও কানেকটিভিটিতে আগ্রহী। এই লক্ষ্য থেকে সম্প্রতি ভারতকে ত্রিদেশীয় মহাসড়কে যুক্ত হতে আগ্রহ দেখিয়েছে।

বাংলাদেশ মনে করে, ভারতের সহযোগিতায় থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের সঙ্গে ওই নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়া সহজ হবে। পাশাপাশি ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভুটানে পণ্য পরিবহনও করতে চায়। বাংলাদেশ এরই মধ্যে ভারতকে সড়ক ও রেলপথে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে কানেকটিভিটির জন্য পাঁচটি রুটে পণ্যবাহী যান চলাচলের অনুরোধ জানিয়েছে এবং তা দ্রুত বাস্তবায়নের অনুরোধ জানায় বাংলাদেশ।

সড়কপথে নেপালের জন্য মেছিনগর, বিরাটনগর, বীরগঞ্জ ও রেলপথে রোহানপুর-সিংহাবাদ ব্যবহারে অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। আর ভুটানের সঙ্গে রেলপথে চিলাহাটি-হলদিবাড়ীতে যুক্ত হতে অনুমতির আহ্বান জানানো হয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে নেপাল ও ভুটানকে নিয়ে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতায় ভারত সাম্প্রতিক সময়ে অতীতের যে-কোনো সময়ের চেয়ে মনোযোগী। এই পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ সড়ক, রেল, নৌ আর সমুদ্রপথে ভারতের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে কানেকটিভিটির উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছে। তাই বাংলাদেশ দুই দেশের বিদ্যমান নৌ প্রটোকলের আওতায় নেপালকে এ দেশের নৌপথ ও ভূখণ্ড ব্যবহার করে পণ্য পরিবহন করতে দিতে চায়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে আঞ্চলিক কানেকটিভিটির ক্ষেত্রে ঢাকা-শিলিগুড়ি ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করেন দুই প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া বাংলাদেশ-ভারত ও নেপালের মধ্যে যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী পরিবহন চলাচলের বিষয়েও সমঝোতা হয়েছে। ভুটানও বাংলাদেশের সঙ্গে বহুমাত্রিক কানেকটিভিটিতে আগ্রহ জানিয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও কানেকটিভিটির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি জানান, সম্পর্কোন্নয়নে আমরা কানেকটিভিটিকে বড় লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, কানেকটিভিটি হচ্ছে উৎপাদনশীলতা। যদি আমরা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কানেকটিভিটি ঠিক রাখতে পারি, তবে এই অঞ্চলের সামগ্রিক ভূ-অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসবে। এক্ষেত্রে বঙ্গোপসাগর খুব কার্যকর।

তিনি আরো বলেন, যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন ৫০ বছর পার হয়ে গেছে এবং পরের ২০ বছর কী করা যেতে পারে, আমি বলব, কানেকটিভিটি। এছাড়া দুদেশের মানুষে মানুষে যোগাযোগও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দিন শেষে দুই দেশের সম্পর্ক মানেই জনগণের সম্পর্ক। আমাদের উচিত সাধারণ জনগণকেন্দ্রিক সম্পর্ক গড়ে তোলা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!