• ঢাকা
  • রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

নিম্ন ও মধ্যবিত্তের বাড়ছে ক্ষোভ


বিশেষ প্রতিনিধি এপ্রিল ৩, ২০২১, ০৩:১৬ পিএম
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের বাড়ছে ক্ষোভ

ঢাকা : রোজার আগে প্রতিদিন বেড়েই চলেছে নিত্যপণ্যের দাম। এতে ক্ষোভ বাড়ছে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের। তাদের অভিযোগ কয়েক বছর ধরেই ধাপে ধাপে বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম।

সম্প্রতি বেশকিছু পণ্যের দাম অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষ করে চাল, ভোজ্যতেল, ডাল ও চিনিসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে।  এখন পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে দফায় দফায় বাড়ছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। সরকার কাঙ্ক্ষিত পদক্ষেপ না নেওয়ায় হতাশার পাশাপাশি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ।

রাজধানীর মধ্য বাড্ডায় বাজার করতে আসা আকরাম হোসেন জানান, ‘বাজারে এসে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। জিনিসপত্রের দাম বাড়বে কমবে এটা স্বাভাবিক বিষয়। তবে দাম বাড়ার সুনির্দিষ্ট কারণ থাকতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ পণ্যের দাম বেড়ে যায়।’

আরেক ক্রেতা সুমন মিয়া জানান, ‘রোজার আগে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি নিয়ে এক ধরনের অজানা ভয় কাজ করে। কখন কোন জিনিসের দাম বেড়ে যায়। কিন্তু কিছুই করার নেই। এটা যেন আমাদের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

রাজধানীর মালিবাগ কাঁচাবাজারের বাজার করতে আসা কর্মজীবী এক নারী (নাম প্রকাশ করতে চাননি) ক্ষুব্ধ হয়ে জানান, ‘যে যেভাবে পারছে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। বাজার মনিটরিংয়ের স্থায়ী কোনো সিস্টেম নেই। নেই কোনো জবাবদিহিতা। সিটি করপোরেশন একটা তালিকা ঝুলিয়ে দিয়ে যায়। কিন্তু সেটি নামকাওয়াস্তে। এমনও শুনি যে, ওই তালিকায় দোকানদাররা নিজেরাই রেট বসিয়ে দেন।’

এদিকে, পবিত্র রমজান আসার আগে প্রতিবছরই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে নিত্যপণ্যের বাজার। অধিক মুনাফালাভের আশায় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী কারসাজির মাধ্যমে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। বিশেষ করে ইফতারির জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম। এবছরও ব্যতিক্রম হয়নি। তবে অন্যবছরগুলোর তুলনায় এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। এবার দ্বিতীয় দফায় করোনার হানা দেয়ায় দাম বাড়ানোর সুযোগ নিয়েছেন দোকানিরা।   

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ইফতারির অন্যতম উপকরণ বেসন তৈরির অ্যাংকার ডাল, বোতলজাত সয়াবিন, খোলা ময়দা, আলু, রসুন, আদা ও  গুড়ো দুধের দাম বেড়েছে। এছাড়া, বিভিন্ন ধরণের সবজির দামও ঊর্ধ্বমুখী। করোনাকালে আয় কমে যাওয়ায় এ নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে আছেন নগরবাসী।

যদিও বাণিজ্যমন্ত্রীর দাবি, বাজার পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে এমন দাবি করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি বলেন, ‘সম্প্রতি হঠাৎ দেশে চাল, ভোজ্যতেল, আটা ও শুকনো মরিচের দাম বেড়ে গিয়েছিল। তবে এসব নিত্যপণ্যের মূল্য আগের মতো স্বাভাবিক, সহনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে।’

এসময় মন্ত্রী আরেকটি প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রতিবছর রমজান মাসকে কেন্দ্র করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর মধ্যে নিত্যপণ্যের মূল্য হঠাৎ বৃদ্ধি করার প্রবণতা দেখা যায়। নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে প্রতিবছরের মতো এবারও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।’

তবে বাণিজ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সাথে বাস্তব পরিস্থিতির কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ টিসিবি-র তথ্য অনুযায়ী, এই সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে দেশি আদার দাম। কেজিতে ২০ টাকা বেশি দরে বর্তমানে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ইফতারসামগ্রী তৈরির অন্যতম উপকরণটি। বোতলজাত সয়াবিন তেলের ৫ লিটারের বোতলে ১০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকা। গত সপ্তাহে যা বিক্রি হয়েছে ৬৪০ টাকা।

এছাড়া, ইফতারির অন্যতম উপকরণ বেসন তৈরির অ্যাংকার ডালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৮-১০ টাকা। ৩৮ টাকার অ্যাংকার ডাল বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা দরে। সরকারি হিসাবে, পণ্যটির দাম বেড়েছে ৮.৪৩ শতাংশ।

অন্যদিকে, ব্রয়লারসহ সব ধরনের মুরগি এবং গরু ও খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। রোজার আগে দাম কমার লক্ষণ দেখছেন না ব্যবসায়ীরা। ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৬৫ টাকা। লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকা। আর কক মুরগির কেজি ২৪০-২৬০ টাকা। ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন ৯০-৯৫ টাকা।

এদিকে, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে কেজিতে ৫-১০ টাকা। বেশিরভাগ সবজিই বর্তমানে কেজি প্রতি ৫০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামকে ডালের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানান এই প্রতিবেদককে।

এদিকে আসন্ন রমজানে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কিত খোদ ব্যবসায়ীরা। জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির জন্য তারা আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি এবং পণ্য পরিবহন খরচ বৃদ্ধি এবং সরকারের অতিরিক্ত ট্যাক্স আদায়কে দায়ী করেছেন।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ও এফবিসিসিআইএ-র সাবেক সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হেলালউদ্দিন বলেন, ‘এবারের রোজায় নিত্যপণ্যের দাম আরো বাড়বে। কারণ, প্রথমত আন্তর্জাতিক বাজারে সব জিনিসের দামই বেড়েছে। এমনকী পরিবহন ভাড়াও বেড়েছে। আগে যেখানের জাহাজের ভাড়া ছিল ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার ডলার এখন সেটা ১৪ হাজার ডলারে পৌঁছেছে। সব মিলে আমি খুবই শঙ্কিত যে এবারের রমজান কীভাবে যাবে। এখন সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে বাজারটা কীভাবে সহনীয় রাখা যায়।

কারণ, সরকার কয়েকধাপে ভ্যাট নিচ্ছে। পোর্টে পণ্য এলেই ভ্যাটের সার্টিফিকেট আনতে বলে। সার্টিফিকেট নিতে গিয়ে লেনদেন করতে হয়, ঢাকায় আসা যাওয়ার ফাঁকে ততদিন শিপিং এবং পোর্ট ডেমারেজ দিতে হয়, আবার কোনো মেথডে বেশি ট্যাক্স নেওয়া যায় সেভাবেই ট্যাক্স আদায় করা হয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। তাতে করে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’।

তিনি রমজানে জিনিসপত্রের দাম সহনীয় রাখতে অন্তত রোজার মাসটা  সরকারকে ব্যবসায়ীদের প্রতি নমনীয় হওয়ার পরামর্শ দেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!