• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

টিকার খোঁজে চলছে দৌড়ঝাঁপ


বিশেষ প্রতিনিধি এপ্রিল ২৬, ২০২১, ০১:৪৫ পিএম
টিকার খোঁজে চলছে দৌড়ঝাঁপ

ঢাকা : নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট ও বহুগুণ শক্তি নিয়ে করোনা ভাইরাস দ্বিতীয় দফায় আক্রমণ করায় দিশেহারা বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী দেশ। পরিস্থিতি সামাল দিতে অধিকাংশ দেশই এখন করোনার টিকা পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এই দৌড়ে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও।

কারণ ভারতের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী টিকা না পাওয়ায় বিকল্প টিকা উৎপাদনকারী দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করছে সরকার।

ইতোমধ্যে চীন ও রাশিয়ার কাছ থেকে টিকা পাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে। তারপরও শতভাগ ভরসা না পেয়ে দেশেই যৌথ উদ্যোগে টিকা উৎপাদনের চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার।

বর্তমানে বিশ্বে সর্বোচ্চ টিকা উৎপাদন করে ভারত। বিশ্বে বছরে বিভিন্ন রোগের যত টিকা উৎপাদন হয়, তার ৬০ শতাংশের বেশি উৎপাদন করে তারা।

আর জাতিসংঘ বছরে যত টিকা কেনে, তার ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ সরবরাহ করে ভারত। করোনার প্রতিষেধক তৈরিতে ভারত তাই শুরু থেকেই সচেষ্ট ছিল। উন্নত দেশের সঙ্গে এক্ষেত্রে ভারতীয় বিজ্ঞানীরা পাল্লা দিয়ে সফলও হয়েছেন। এখন করোনার সবচেয়ে বেশি ভ্যাকসিন ভারতই উৎপাদন হচ্ছে।

কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সেই ভারতের অবস্থাও আজ শোচনীয়।

বর্তমানে করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণের দিক দিয়ে ভারত সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। দেশটিতে ভয়ংকর রূপ নিয়ে দাপটের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট। এতে ভারতের করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এ অবস্থায় সব ধরনের টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্র অভ্যন্তরীণ চাহিদার চাপে ভারতে টিকা উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল রপ্তানি বন্ধ রেখেছে।

কাঁচামাল না পেলে চুক্তির আওতায় ভারত থেকে বাংলাদেশে টিকা রপ্তানি স্থগিত থাকবে বলে জানা গেছে। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ টিকা সরবরাহের কী হবে, তা নিয়ে চলছে কূটনৈতিক পর্যায়ে তৎপরতা।

এছাড়া বাংলাদেশেও করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টের কারণে মৃত্যু ও সংক্রমণ বেড়েছে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী টিকা না পাওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যাওয়ায় ভ্যাকসিন কূটনীতি জোরালো করেছে সরকার।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে তিন কোটি ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন আনার চুক্তি হলেও কথা রাখতে পারছে না দেশটি। প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়ার কথা থাকলেও গত দুই মাসে কিছুই দিতে পারেনি। তাই ভ্যাকসিন পেতে টিকা উৎপাদনকারী অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়ানো হয়েছে।

বিশেষ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ইতোমধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে শুধু একটি দেশের ওপর ভরসা না রেখে বিকল্পও পথে হাঁটতে চাইছে সরকার।

সূত্র জানায়, ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশের সাথে গভীর সম্পর্ক বজায় রাখতে চায় ভারত ও চীন। এ কারণে উভয় দেশই বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন দিতে শুরু থেকেই আগ্রহী ছিল। তাই বাংলাদেশকে ঘিরে ভারত ও চীন উভয় দেশই ভ্যাকসিন কূটনীতি চালিয়ে আসছে।

কিন্তু ভারতীয় টিকা আসার অনিশ্চয়তার মধ্যে সম্প্রতি জরুরি প্রয়োজনে টিকা পেতে বাংলাদেশসহ ৬টি দেশের সমন্বয়ে একটি জোট তৈরি হয়। এই জোটে ভারত বাদে রয়েছে বাংলাদেশ, চীন, পাকিস্তান, নেপাল, আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। এসব দেশে যদি টিকা আসে বাংলাদেশও টিকা পাবে। বাংলাদেশের এই জোটে অংশগ্রহণে ভারতও কিছুটা মনোযোগী হয়েছে বাংলাদেশকে টিকা দিতে।

এ কারণে বিষয়টি নিয়ে মোদি সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে গত সপ্তাহে দিল্লি যান ঢাকায় নিযুক্ত সেদেশের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী দিল্লি থেকে ফেরার পর হাইকমিশন থেকে এ সংক্রান্ত একটি নোট-ভারবাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
নোট-ভারবালে প্রস্তাব দেওয়া হয়, ভারত এখনই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা বাংলাদেশকে দিতে পারছে না। বিনিময়ে ভারত তাদের বায়োটেক উদ্ভাবিত কোভ্যাকসিনের যৌথ উৎপাদনে বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছে। ভারতে এখন কোভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে। এ টিকার ৭৮ শতাংশ কার্যকর বলে জানিয়েছে ভারত বায়োটেক।

অন্যদিকে, করোনার টিকা সংকটের মধ্যেই আশার কথা জানালেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাশার খুরশীদ আলম।

তিনি বলেন, আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহে করোনা ভাইরাসের প্রায় ২১ লাখ টিকা দেশে আসবে। এর মধ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন এবং কোভ্যাক্স থেকে ফাইজারের উৎপাদিত ১ লাখ টিকা পাওয়া যাবে। এছাড়া চীন থেকেও ৫ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে পাওয়ার কথা রয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, এখন ভারতে করোনার ব্যাপক সংক্রমণের মধ্যে ভ্যাকসিনের চাহিদা বেড়েছে। ওই দেশের অনেকেই নিজেদের চাহিদা পূরণ না করে বিদেশে রপ্তানির বিরোধিতা করছে।

এ অবস্থায় ডব্লিউএইচওর অনুমোদিত না হলেও চীন ও রাশিয়া থেকে ভ্যাকসিন আনার এবং বাংলাদেশে রাশিয়ার ভ্যাকসিন যৌথভাবে উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

করোনা মোকাবিলায় টিকাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে গঠিত নতুন জোটের সদস্য বাংলাদেশ, চীন, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আগামীকাল মঙ্গলবার ভার্চুয়াল বৈঠকে বসছেন। কিন্তু এই জোটে ভারত বাদ পড়ায় আঞ্চলিক টিকা কূটনীতিতে নতুন মেরুকরণ হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

 

Wordbridge School
Link copied!