ঢাকা : অক্ষম ভিক্ষুকদের জন্য আট বিভাগে স্থায়ী নিবাস গড়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। শুরুতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে কর্মক্ষমতা হারানো বয়োবৃদ্ধ ভিক্ষুকদের আশ্রয়ের জন্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। তবে এখনো পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন শারীরিক ও মানসিকভাবে কর্মক্ষমতা হারানো বৃদ্ধ ভিক্ষুকদের আশ্রয়ের জন্য স্থায়ী নিবাস নির্মাণের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সাইফুল ইসলামকে প্রধান করে দেশের আট বিভাগে অক্ষম ভিক্ষুকদের আটটি স্থায়ী নিবাস স্থাপনের বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটি একটি মাত্র মিটিং করেছে। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
কমিটিতে মন্ত্রণালয় ছাড়াও সমাজসেবা অধিদপ্তর, জাতীয় প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি রয়েছেন। গত ২ জুন কমিটির প্রথম সভা হয়।
সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, ভিক্ষুক কিংবা অক্ষম ভিক্ষুকদের সংখ্যার পুরোপুরি সঠিক কোনো হিসাব নেই। তবে ধারণা করা হয়, ভিক্ষুকের সংখ্যা আড়াই লাখ এবং অক্ষম হয়ে পড়েছেন এমন ভিক্ষুকের সংখ্যা ৩০ হাজারের মতো। শেষ বয়সে এসে যাতে ধুঁকে ধুঁকে মরতে না হয় সেজন্য অক্ষম ভিক্ষুকদের নিয়ে বিশেষভাবে কিছু করতে চাইছে সরকার।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অক্ষম ভিক্ষুকদের জন্য স্থায়ী নিবাস করব। তবে বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটি একটি মাত্র মিটিং করেছে। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। স্থায়ী নিবাস কিভাবে করা হবে, কাকে দিয়ে করা হবে। কোন ধরনের সেবা সেখানে থাকবে। এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন নিয়ে আমাদের একটি কর্মসূচি রয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তর সেটা করে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের নেতৃত্বে একটি কমিটি আছে। উপজেলা পর্যায়েও কমিটি আছে। এছাড়া জাতীয় পর্যায়েও কমিটি আছে। জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব হচ্ছে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। এই কর্মসূচির আওতায় ভিক্ষুকদের এককালীন টাকা দিয়ে একটি ভ্যান বা রিকশা কিনে দেওয়া হয়।’
অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘তবে তাদের মধ্যে অনেকের বেশি বয়স হয়ে গেছে। তারা আসলে কর্মক্ষম নয়, তাদের পুনর্বাসনের উপায় নেই। তাদের বিষয়ে কিছু করা যায় কি-না, সেই চিন্তা থেকে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ভিক্ষা তো কোনো পেশা নয়। আমরা দেখছি তার অক্ষমতা। বয়স হয়ে যাওয়ায় তার হয়তো মানসিক বা শারীরিক প্রতিবন্ধিতা রয়েছে। তাদের আমরা কিভাবে পুনর্বাসন করতে পারি সেই উপায় বের করছি।’
সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিভাগে স্থায়ী নিবাস করা হলে সেখানে তো একসঙ্গে ৩০০ থেকে ৪০০ জনের বেশি রাখা যাবে না। আমরা যাই করি দ্রুতই সিদ্ধান্ত হবে। কী করা হচ্ছে চলতি মাসের মধ্যেই সেই বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে যাবে।’
এবিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করার সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘ভবন করলে তো হবে না। তারা ডিজঅ্যাবল, তাদের ওই ধরনের স্টাফ প্যাটার্ন দিয়ে হেল্প করতে হবে। লোকবল দিতে হবে। টেকসই কিছু করতে হবে, আমরা সেটার চেষ্টাই করছি।’
এবিষয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মোহা. কামরুজ্জামান বলেন, ‘সারা দেশে কতজন ভিক্ষুক আছে সেই বিষয়ে পুরোপুরি সঠিক ও নির্ভরযোগ্য কোনো পরিসংখ্যান নেই। এক জরিপে একেক রকমের তথ্য। প্রাথমিক এক হিসাবে দেশে ভিক্ষুকের সংখ্যা আড়াই লাখের ওপরে। তবে আমার বিবেচনায় নিচ্ছি অক্ষম ভিক্ষুক। তবে সংখ্যাটি নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।
বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী, এই সংখ্যা ৩০ হাজারের মতো হতে পারে বলে মনে করছি।’
তিনি বলেন, ‘অক্ষম ভিক্ষুকদের দেখভালের কেউ থাকে না। শেষ জীবনে এদের ধুঁকতে হয়। সেই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরকার তাদের জন্য স্থায়ী নিবাস করার উদ্যোগ নিচ্ছে।’
এখন আট বিভাগে আটটি ‘শান্তি নিবাস নির্মাণ প্রকল্প’ চলমান রয়েছে জানিয়ে পরিচালক বলেন, ‘সেখানে অসহায় বৃদ্ধ ও বৃদ্ধাদের রাখা হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ হলো-প্রতিটি শিশু পরিবারে একটি করে শান্তি নিবাস করার। অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা যাতে শেষ বয়সে নাতি-নাতনির পরিবেশটা পায়। আপাতত আট বিভাগের শিশু পরিবার চত্বরে শান্তি নিবাস করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সব জেলায় এটা হবে।’
পরিচালক বলেন, ‘আগামী অর্থবছর থেকে শান্তি নিবাস নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে যাবে। দু-বছরের মধ্যে নির্মাণ সম্পন্ন হবে। প্রতিটি শান্তি নিবাসের ক্যাপাসিটি হবে ২৫ জন। পুরুষ ও নারীদের আলাদা আলাদা ব্যবস্থা থাকবে। শিশু পরিবারের ক্যাম্পাসে করার কারণ হচ্ছে দাদা-দাদি, নানা-নানিদের নিয়ে নাতি-নাতনিদের যে পারিবারিক আবহ সেটা যাতে সেখানে থাকে।’
কামরুজ্জামান আরো বলেন, ‘অক্ষম ভিক্ষুকদের জন্য শান্তি নিবাসের সঙ্গে একীভূত করে কিছু করা যায় কি-না সেটি সেটি ভাবা হচ্ছে। আলাদা করে স্থাপনা করা যেতে পারে। তবে জমি লাগবে। জমি লাগলে তা কিভাবে সংস্থান করা হবে-সব বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। একটি যাচাই সভা হয়েছে। যা সিদ্ধান্ত আসে সেই অনুযায়ী ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) প্রণয়ন করা হবে।’
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :