• ঢাকা
  • রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

হারিয়ে গেছেন বেশ কয়েকজন দাপুটে নেতা


বিশেষ প্রতিনিধি জুন ১৭, ২০২১, ০৪:৩১ পিএম
হারিয়ে গেছেন বেশ কয়েকজন দাপুটে নেতা

ঢাকা : দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির অনেক দাপুটে নেতাই হারিয়ে গেছেন। তাদের মধ্যে কেউ আছেন বিদেশ পালিয়ে, কেউ পদত্যাগ করেছেন দল থেকে, অসুস্থতাজনিত কারণেও অনেকে রাজনীতি থেকে দূরে আছেন। আবার বেশ কয়েকজন মৃত্যুবরণ করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে দলের গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য পড়ে আছে। শূন্যস্থান পূরণেও দলটিতে নেই কোনো উদ্যোগ।

একদিকে দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া দীর্ঘ কারাবাসের পর জামিন পেয়ে এখন অসুস্থ। অন্যদিকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াও মামলার বোঝা নিয়ে ফিরতে পারছেন না দেশে। সবকিছু মিলিয়ে যেন স্থবিরতা ভর করেছে তিনবারে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা দলটিতে। শুধু বক্তৃতা আর বিবৃতির মাঝেই নিজেদের অস্থিত্বের জানান দিচ্ছে বিএনপি।

জানা গেছে, গত একযুগে বিএনপির কমপক্ষে ৫ জন শীর্ষ নেতা বিদেশে আত্মগোপনে আছেন। দল থেকে পদত্যাগ করেছেন ১০ জন শীর্ষনেতা। খালেদা জিয়াসহ গুরুতর অসুস্থ আছেন ৪ জন। আর বিদেশে আটক আছেন একজন। এই সময়ে মৃত্যুবরণ করেছেন বিএনপির শীর্ষ ১৪ জন নেতা।

বিএনপির পলাতক নেতাদের মধ্যে আছেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ওসমান ফারুক, শাহজাহান সিরাজ ও  বিএনপির ক্ষুদ্র ঋণবিষয়ক সম্পাদক এম এ কাইয়ুম। এদের মধ্যে কায়কোবাদ আছেন মধ্যপ্রাচ্যে, ওসমান ফারুক আছেন যুক্তরাষ্ট্রে। তবে অন্য তিনজন কোথায় আছেন কেউ জানেন না।

২০০৭ সালের রাজনৈতিক পট-পরিবর্তের সঙ্গে সঙ্গেই গা ঢাকা দেন তৎকালীন হাওয়া ভবনের দাপুটে নেতা হারিছ চৌধুরী। আজ পর্যন্ত তার কোনো হদিস নেই। ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৫ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্ধিতা করে পরাজিত হন। তারপরও ২০০১ সালে বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে তিনি হয়ে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা। দাপটের সঙ্গে হাওয়া ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিএনপির সর্বোচ্চ মহল ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করে গড়ে তোলেন বিপুল অবৈধ সম্পদ।

২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে দেশে ছেড়ে পালিয়ে যান হারিছ চৌধুরী। কথিত আছে, তখন তিনি সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতের করিমগঞ্জে অবস্থিত নানা বাড়িতে পালিয়ে যান। সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে তোলেন।

কখনো শোনা যায়, তিনি ভারতে নানা বাড়িতে থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। আবার কেউ বলেন, তিনি লন্ডনে আছেন। আবার অনেকের কাছে শোনা যায়, তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর মৃত্যুবরণ করেছেন। আসলে হারিছ চৌধুরী জীবিত নাকি মৃত তা আজো রহস্য।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, ২০১০-১২ সাল পর্যন্ত বিএনপির শীর্ষনেতাদের সঙ্গে হারিছ চৌধুরীর যোগাযোগ ছিল। কিন্তু এরপর বিএনপির কোনো নেতার সঙ্গে তার যোগাযোগ নেই বলে আমি জানি।  হারিছ চৌধুরী ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি।

এছাড়া তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা, দুর্নীতিসহ প্রায় শতাধিক মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ ২০১৪ সালের পর থেকে আইনের চোখে পলাতক। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তিনি অধিকাংশ সময় সৌদি আরবের মদিনায় অবস্থান করেন। মাঝেমধ্যে দুবাইতেও আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকেন। তবে তার শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয় বলে জানা গেছে।

বিএনপির সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ওসমান ফারুকের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠলে ২০১৬ সালে দেশত্যাগ করেন তিনি। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।

বিভিন্ন কারণে বিএনপি থেকে পদত্যাগকারী নেতারা হলেন-বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোর্শেদ খান, বিএনপির ক্ষমতাধর নেতা মোসাদ্দেক আলী ফালু, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, বিএনপির কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সিনহা, সহ-অর্থবিষয়ক সম্পাদক মো. সাহাব উদ্দিন, বিএনপির সংস্কৃতিবিষয়ক সহ-সম্পাদক ও সংগীতশিল্পী মনির খান, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. ফাইয়াজ শুভ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আলী আসগর লবি এবং মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া।

খালেদা জিয়াসহ বিএনপির অসুস্থ অন্য দুই নেতা হলেন ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া এবং ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান। এছাড়া অনুপ্রবেশের দায়ে দীর্ঘদিন ধরে ভারতে আটক আছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ।

এছাড়া মৃত্যুবরণকারী নেতাদের মধ্যে আছেন-সাদেক হোসেন খোকা, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার, হান্নান শাহ, তরিকুল ইসলাম, তরিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার মো. আমিনুল হক, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, আইনবিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক, বদরুজ্জামান খসরু, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আউয়াল খান, সহ-স্থানীয় সরকার সম্পাদক আমজাদ হোসেন সরকার, নির্বাহী কমিটির সদস্য শফিউল বারী বাবু এবং আহসান উল্লাহ হাসান।

মৃত্যুবরণকারী, পদত্যাগকারী কিংবা পলাতক বা বিদেশে আটক নেতাদের মধ্যে আছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি ও নির্বাহী কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য। ফলে বিএনপি শীর্ষস্থানীয় পদের অনেকগুলরাই বর্তমানে ফাঁকা আছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিএনপির ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটির সাতটি পদ ফাঁকা আছে। ৩০ সদস্যের ভাইস চেয়ারম্যান পদের মধ্যে বর্তমানে ফাঁকা আছে ১৩টি পদ। এভাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটি ও ভাইস চেয়ারম্যান পদসহ দলটির ৫০২ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে অনেকগুলো পদ বর্তমানে ফাঁকা আছে।

এ প্রসঙ্গে দলটিতে বহু মতামত রয়েছে। শীর্ষ নেতাদের একটি অংশ বলছেন, বিএনপির গঠনতন্ত্রে শূন্যপদ পূরণ করতেই হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সাধারণত কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠন হয়। পরবর্তীতে শূন্যপদগুলো পূরণ হয়।

অন্যদিকে বিএনপির মধ্যম সারির নেতারা মনে করছেন, যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে শূন্যপদগুলো পূরণ হচ্ছে না। দলটির নীতিনির্ধারকদের দূরদর্শিতা, বিচক্ষণতা এবং সঠিক সময়ে সঠিক পরিকল্পনার অভাবে গত ১২ বছরে একটা আন্দোলনেও সফলতা আসেনি বলে মন্তব্য করেন তারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, দলের পরবর্তী কাউন্সিলের মাধ্যমে শূন্য হওয়া পদ পূরণ করা হয়। তবে দলের চেয়ারম্যান চাইলেও তা পারেন। তাঁকে সেই ক্ষমতা দেওয়া আছে। এখন যেহেতু তিনি সেই দায়িত্ব পালন করছেন না তাই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান চাইলেও তা পারেন। তবে দলের স্থায়ী কমিটির সেই ক্ষমতা নেই।

উল্লেখ্য,বিএনপির সর্বশেষ কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ। সেটি ছিল বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিল। সেখানে খালেদা জিয়াকে পুনরায় চেয়ারপারসন আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব থেকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব করে কমিটি গঠিত হয়। তিন বছর মেয়াদের এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০১৯ সালের মার্চে। দুই বছরের বেশি সময় পার হলেও কাউন্সিল করতে পারেনি দলটি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!