ঢাকা : বিগত দিনে আন্দোলন-সংগ্রামে যারা মাঠে ছিলেন তাদের আগামী দিনে বিএনপি এবং এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতৃত্বে আনা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা।
তারা বলেছেন, দলের পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ নেতাদের পাশাপাশি তরুণ নেতাদের সামনে আনা হবে। দল পুনর্গঠনে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মনোভাব এমনই।
সম্প্রতি এসব কথা জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ নেতারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দল এখন এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশে গণতন্ত্র নেই। মানুষের কোনো অধিকার নেই। এ অবস্থায় দেশে পরিবর্তন আনতে হলে রাজপথের বিকল্প নেই। রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রাম সফল করতে হলে রাজপথে যারা থাকেন তাদেরকেই মূল্যায়ন করা হবে। অতীতেও এমনটা হয়েছে। আগামীতেও এমনটা হবে।’
তিনি বলেন, ‘দলের পুনর্গঠনে জ্যেষ্ঠ নেতাদের পাশাপাশি তরুণ নেতৃত্বকে সামনে নিয়ে আসা হবে। জ্যেষ্ঠ নেতাদের অভিজ্ঞতা ও তরুণ নেতাদের অদম্য সাহস রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে সফলতা পেতে সাহায্য করবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির নতুন যে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে তাতে জ্যেষ্ঠ নেতাদের পাশাপাশি তরুণ নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তরে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমানকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। সঙ্গে সদস্য সচিব করা হয়েছে দলের ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলামকে। একইভাবে দক্ষিণের আহ্বায়ক করা হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মহানগর বিএনপির অভিজ্ঞ নেতা আবদুস সালামকে। তার সদস্য সচিব করা হয়েছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সভাপতি রফিকুল আলম মজনুকে।
এছাড়া দক্ষিণে প্রথম সদস্য করা হয়েছে আরেক নবীন নেতা প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে এবং উত্তরে প্রথম সদস্য করা হয়েছে তাবিথ আউয়ালকে। তারা দুজনই আবার দলের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির সদস্য।’
রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ওবায়দুল হক চন্দন বলেন, ‘২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর থেকে দলের পুনর্গঠন শুরু হয়েছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এ পুনর্গঠন কার্যক্রম চলছে। বিএনপি কিংবা অঙ্গ-সংগঠন যেটাই হোক নতুন কমিটিতে রাজপথে থাকা নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে।’
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘নতুন কমিটি ঘোষণার পর বাদ পড়া নেতাদের ভেতরে ভেতরে ক্ষোভের কথা লন্ডনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জানতে পেরেছেন।
এ বিষয় নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাকে বলেছেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর মহানগর বিএনপির অনেক নেতাকে ফোন করেছিলেন তিনি। কিন্তু ফোনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাদের পাননি। আন্দোলন সংগ্রামেও ছিলেন না। তবে যাদের পেয়েছেন তাদের মূল্যায়ন করেছেন। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মহানগরীর কোনো থানা কিংবা ওয়ার্ডের নেতাদের ভোটকেন্দ্রে দেখা যায়নি। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। হামলা-মামলার ভয়ে পালিয়ে ছিলেন। দলের ক্রাইসিসে পাওয়া না গেলেও কমিটি করার সময় এরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু এসব করে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়া যাবে না। বরং যারা হামলা-মামলা উপেক্ষা করে রাজপথে থাকেন তারাই দলে মূল্যায়িত হবেন।’
স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘আহ্বায়ক কমিটি বড় হলে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই এ কমিটির আকার ছোট রাখা হয়েছে। তবে আগামীতে কাউন্সিলরদের ভোটে যে নতুন নেতৃত্ব আসবে তখন সে কমিটিতে বাদ পড়াদের জায়গা করে দেওয়া হবে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ কিংবা হতাশ হওয়ার কিছু নেই।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নতুন কমিটির আনুষ্ঠানিক বৈঠক আজ : ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, ‘দায়িত্ব পাওয়ার পর আজ শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা বৈঠকে বসব। বৈঠকে দক্ষিণের সকল থানা ও ওয়ার্ডের নেতারা থাকবেন।’
আন্দোলন-সংগ্রাম ও দলের প্রয়োজনে উপযুক্ত ভূমিকা রাখতে না পারায় পাঁচ বছর পর ভেঙে দেওয়া হয় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির দুই কমিটি।
গত ২ আগস্ট সোমবার বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরের দায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স স্বাক্ষরিত সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা মহানগরের এই দুই কমিটি অনুমোদন করেছেন।
কমিটিতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপিতে আমান উল্লাহ আমানকে আহ্বায়ক এবং বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হককে সদস্য সচিব করে ৪৭ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণে আবদুস সালামকে আহ্বায়ক এবং রফিকুল আলম মজনুকে সদস্য সচিব করে ৪৯ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিএনপি।
সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল গঠিত হয় ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি। দুই বছর মেয়াদি সেই কমিটি পাঁচ বছর অতিক্রম করলেও পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি মহানগরের কমিটি।
এছাড়া ২০১৮ সালে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করার সময়ও তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি বিএনপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই দুই কমিটি। এদিকে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন, ২০২০ সালে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে এই দুই কমিটি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়।
সর্বশেষ এম এ কাইয়ুমকে সভাপতি ও আহসানউল্লাহ হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে উত্তরের এবং হাবিব উন নবী খান সোহেলকে সভাপতি ও কাজী আবুল বাশারকে সাধারণ সম্পাদক করে দক্ষিণের কমিটি গঠন করে বিএনপি।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :