ঢাকা : গত জুলাই মাসে সারা দেশে লকডাউন, ঈদের ছুটি আর বন্দর জটিলতাসহ বিভিন্ন সংকটে তৈরি পোশাক রপ্তানি কিছুটা হোঁচট খায়।
এ কারণে, জুলাই মাসে পোশাক খাতের রপ্তানি আয় গতবছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ১৬ শতাংশ। অথচ তখন ইউরোপসহ দেশের পোশাক রপ্তানির বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা-বাণিজ্য সচল হওয়ায় প্রচুর অর্ডার আসতে শুরু করে। এসব সমস্যার কারণে অর্ডার অনুযায়ী পোশাক সরবরাহ করতে হিমশিম খেতে হয় রপ্তানিকারকদের।
তবে, এ মাসে কারখানা খুলে দেওয়ার পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য খালাসসহ বিভিন্ন জটিলতা দূর হওয়ায় আবারো ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় এই রপ্তানি খাত। এসবের মাঝে নতুন করে পোশাক খাতের জন্য সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে বাংলাদেশের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামে করোনার ভয়ানক হানা।
বর্তমানে কঠোর লকডাউনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ভিয়েতনামের তৈরি পোশাক খাত। কমে গেছে পোশাক উৎপাদন। ফলে ভিয়েতনাম থেকে পশ্চিমা যেসব নামিদামি ব্র্যান্ড পোশাক কিনে থাকে, তাদের চাহিদামাফিক অর্ডার সরবরাহ করতে পারছে না দেশটি। এমন সময়ে বাংলাদেশে করোনা কমে আসায় চলতি মাস থেকে লকডাউন তুলে দেওয়ায় পোশাক কারখানাগুলোতে পুরোদমে শুরু হয়েছে উৎপাদন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভিয়েতনামের এই সংকটের সুযোগ নিতে পারে বাংলাদেশ। তাদের মতে এটি খুবই স্বাভাবিক বিষয়, যখন কোনো একটি দেশে সংকট তৈরি হয়, তখন ক্রেতারা অন্য দেশে ছুটে যান।
এ প্রসঙ্গে বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান বলেন, ‘ভিয়েতনামে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তার সুবিধা বাংলাদেশ নিশ্চয়ই পাবে। তবে সেটি কতটুকু পাবে তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি আগস্ট মাসে পোশাক রপ্তানির পরিমাণ সন্তোষজনক। এরসঙ্গে, ভিয়েতনামের এই সাময়িক সংকটে তাদের কিছু বড় ক্রেতাকে বাগিয়ে নিতে পারলে এবছর পোশাক রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে।
সাপ্লাই চেইন বিষয়ক অনলাইন ম্যাগাজিন ‘দি লোডস্টার’ এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ভিয়েতনামে লকডাউনের কারণে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক ক্রয়াদেশ বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন কারখানা মালিকরা। ফলে ক্রেতারা প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোতে ছুটছে।
ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের নামিদামি ব্র্যান্ডগুলোর তৈরি পোশাকের প্রধান সরবরাহকারী। ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সেখানে কঠোর লকডাউন আরোপ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড রোধে আরোপিত বিধিমালা শিথিল হওয়ার বাড়ছে ক্রেতাদের চাহিদা।
যুক্তরাষ্ট্রের আরবান আউটফিটারসের সিইও রিচার্ড হায়েন বলেন, ‘ভিয়েতনামের পরিস্থিতি ভালো নয়। দেশটি লকডাউনে থাকায় আমি নিশ্চিত যে অন্যরাও আমাদের মতো ভোগান্তির শিকার। ক্রয়াদেশের তালিকায় থাকা পণ্যগুলো হাতে পাওয়াই এখন আমাদের সবথেকে বড় চিন্তা।’
চলতি বছরের জুলাইয়ের আগে ভিয়েতনামে শনাক্ত সংখ্যা দুই হাজারেরও কম ছিল। কিন্তু আওয়ার ওয়র্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, আগস্টের শুরুর দিকে দেশটিতে করোনায় শনাক্তের সংখ্যা ১০ হাজারের ছাড়িয়ে গেছে। দেশটি লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়নে বিভিন্ন এলাকায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিসটিকস রিভিউ ২০২১ এর প্রতিবেদন বলছে, ২০২০ সালে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশকে টপকে গেছে ভিয়েতনাম। বাংলাদেশের দ্বিতীয় অবস্থান থেকে ছিটকে পড়ে তৃতীয় অবস্থানে চলে যায়। যদিও ২০১০ সালে বাংলাদেশের বিপরীতে ভিয়েতনামের অবস্থান ছিল অনেক নিচে।
২০১০ সালে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের হিস্যা ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। যেখানে ভিয়েতনামের ছিল মাত্র ২ দশমিক ৯ শতাংশ। কিন্তু মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে ২০২০ সালে বাংলাদেশকে টপকে যায় দেশটি। গত বছর বিশ্বে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের হিস্যা ছিল ৬ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ভিয়েতনামের হিস্যা দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশে।
অর্থাৎ, ২০২০ সালে ভিয়েতনাম ২ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানির বিপরীতে বাংলাদেশ করেছে ২ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। অথচ এর আগের বছরেও বাংলাদেশ ভিয়েতনামের চেয়ে ৩০০ কোটি ডলার অতিরিক্ত রপ্তানি আদেশ পেয়েছিল।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :