• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১
বাঁচবে সময় কমবে দূরত্ব

উত্তরের সঙ্গে ঢাকার ট্রেন যোগাযোগে আসছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন


বিশেষ প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ২১, ২০২১, ০৩:৪৬ পিএম
উত্তরের সঙ্গে ঢাকার ট্রেন যোগাযোগে আসছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন

ঢাকা : উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার ট্রেন যোগাযোগেও আসছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। বিশেষ করে বগুড়া হয়ে সিরাজগঞ্জ-ঢাকা কানেক্টিং হচ্ছে। এতে করে একদিকে যেমন সময় কমবে, অন্যদিকে কমে যাবে দূরত্ব। বগুড়ার যাত্রীদের শান্তাহার হয়ে ঘুরে আসতে হবে না। সিরাজগঞ্জ হয়ে সরাসরি বগুড়ায় যেতে পারবে। একই সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য জেলাগুলোও একই লাইন ব্যবহার করতে পারবে। অর্থাৎ ১২২ কিলোমিটার পথ কমে যাবে ৯ জেলার মানুষের।

জানা গেছে, বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত দূরত্ব কমাতে প্রকল্প চূড়ান্ত হচ্ছে। প্রকল্পের কাজের জন্য চলতি মাসেই ভারতীয় একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতে যাচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ঢাকা থেকে বগুড়ার দূরত্ব ১১২ কিলোমিটার কমে আসবে। ফলে যাতায়াতের সময়ও কমবে।

সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর একনেকের সভায় বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন পায়। সে সময় প্রকল্পের ব্যয় ৫ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা ধরা হয়েছিল। এই টাকায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাজ করবে নতুন করে কোনো ব্যয় বাড়েনি। তখন ২০২৩ সালের জুলাই মাসে পুরা প্রকল্প শেষ করার কথা বলা হয়েছিল।

প্রকল্প সূত্র জানান, বগুড়া-সিরাজগঞ্জ ৮৬ দশমিক ৫১ কিলোমিটার লিংক রেললাইনের আগের একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন আছে। চুক্তি হওয়ার পর পরামর্শক সংস্থা আগের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা হালনাগাদ করার পাশাপাশি নকশা ও দরপত্র প্রস্তুত করবে। চুক্তি শুরুর পরে ২০২২ সালের অক্টোবরে এসব কাজ শেষ করার কথা রয়েছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের। তারপর শুরু হবে মূল রেললাইনের কাজ।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত সরাসরি কোনো রেলপথ নেই। ফলে ট্রেনে করে বগুড়া থেকে ঢাকায় আসতে দীর্ঘ পথ ঘুরতে হয়। ঢাকা থেকে যাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধু ব্রিজ পার হওয়ার পরে, উল্লাপাড়া, পাবনা, ঈশ্বরদী, সান্তাহার হয়ে বগুড়ায় আসতে হয়।

প্রকল্পের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যমান রেললাইনে ঢাকা থেকে বগুড়ার দূরত্ব প্রায় ৩২৪ কিলোমিটার। কিন্তু বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত লিংক রেললাইন হওয়ার পরে এই দূরত্ব ১১২ কিলোমিটার কমবে। বর্তমানে বগুড়া থেকে চারটি জেলা ঘুরে বঙ্গবন্ধু সেতুতে পৌঁছাতে সময় লেগে যায় প্রায় তিন থেকে চার ঘণ্টা। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এই সময় অনেক কমে যাবে।

সূত্র জানায়, একনেক অনুমোদিত ৮৬ দশমিক ৫১ কিলোমিটার সরাসরি এবং ১৬ কিলোমিটার লুপসহ মোট ১০২ দশমিক ৮১ কিলোমিটার মিশ্র গেজ (ডুয়েল গেজ) রেলপথ নির্মিত হবে। মূল রেললাইন হবে বিদ্যমান বগুড়া রেল স্টেশনের পশ্চিমে ছোট বেলাইল থেকে সিরাজগঞ্জের এম মনসুর আলী রেল স্টেশন পর্যন্ত ৮৬ দশমিক ৫১ কিলোমিটার।

এই পথে বগুড়া, নওগাঁ, রংপুর, লালমনিরহাট জেলার যাত্রীরা আন্তঃনগর ট্রেনে ঢাকা পৌঁছবে। তার সঙ্গে বগুড়ার কাহালু রেল স্টেশন থেকে রানীরহাট পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৩০ কিলোমিটার কানেকটিভিটি লুপ রেলপথ হবে।

লুপ লাইনের যৌক্তিকতা হলো সান্তাহার থেকে ঢাকাগামী এবং ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া সান্তাহার ও পার্বতীপুর হয়ে দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, চিলহাটিগামী আন্তঃনগর ট্রেনগুলো বগুড়া স্টেশন এড়িয়ে সরাসরি চলাচল করবে। এই দুই রেলপথ মিলিত হওয়ার কারণে বগুড়া নগরী থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে রানীরহাটে রেল জংশন স্থাপিত হবে।

রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘদিনের এ সমস্যা সমাধান করতে যাচ্ছি আমরা। এ রেলপথ নির্মাণ হলে ১১২ কিলোমিটার পথ কমে যাবে। পাশাপাশি সময়ও কমে যাবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে কাজ শুরু হওয়ার অপেক্ষা। আশা করছি দ্রুত আমরা কাজ শুরু করতে পারব।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে উভয় অঞ্চলে ৫২টি স্টেশন আধুনিকায়ন ও সংস্কার করা হচ্ছে। স্টেশনগুলোর প্ল্যাটফরম উঁচু করা হচ্ছে। এ ছাড়া ভারতের ক্যাটারিং সার্ভিসের আদলে বাংলাদেশেও ক্যাটারিং সার্ভিস ও ট্রেনিং একাডেমিকে আধুনিক ও উন্নত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, বগুড়া-সিরাজগঞ্জ ডুয়েল গেজ রেল লাইনের আওতায় সাতটি নতুন রেল স্টেশন নির্মাণ করা হবে। একই সঙ্গে বিদ্যমান তিনটি স্টেশনকে আধুনিকায়ন করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার বলেন, এই রেললাইন উত্তরাঞ্চল মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে দূরত্ব কমে যাবে এবং কম সময়ে যাত্রীরা ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলে পৌঁছাতে পারবেন।

এই রেলপথ হলে রংপুর ও লালমনিরহাটের যাত্রীদের আর সান্তাহার ঘুরে আসতে হবে না, সরাসরি বগুড়া-সিরাজগঞ্জ হয়ে ঢাকায় আসতে পারবে। তা ছাড়া ভবিষ্যতে এই লাইন হয়ে গেলে ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলের মধ্যে ট্রেনের সংখ্যাও বাড়বে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!