• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১
২০৪৮ সাল নাগাদ এককভাবে ক্ষমতা য় যেতে নানা পরিকল্পনা

জামায়াতের মাস্টারপ্ল্যান ফাঁস


বিশেষ প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২১, ০৪:০৯ পিএম
জামায়াতের মাস্টারপ্ল্যান ফাঁস

ঢাকা : ফাঁস হয়ে গেছে স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধের অভিযুক্ত সংগঠন জামায়াতের সূদুরপ্রসারী পরিকল্পনা। ২০৪৮ সাল নাগাদ জামায়াত এককভাবে কিভাবে রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে পারে তার একটি মাস্টারপ্ল্যান এখন গোয়েন্দাদারে হাতে।

রাজধানীর ভাটারা এলাকা থেকে দলটির সেক্রেটারি জেনারেলসহ ৯ জনকে আটকের পর দফায় দফায় রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে মিলেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

এছাড়াও ওই বাসা থেকে জব্দ করা ল্যাপটপসহ বিভিন্ন কাগজপত্রে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গভীর ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনার তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার হারুনুর রশিদ বলেন, জামায়াত গোপনে মাস্টারপ্ল্যানে এগুচ্ছে। বিশেষ করে সরকারের বিভিন্ন সেক্টরে ছদ্মবেশে তাদের ২ লাখ কর্মী অনুপ্রবেশের চেষ্টা রয়েছে।

এছাড়াও ছদ্মবেশে ছাত্রলীগ ও হেফাজতে নিজেদের কর্মী ঢুকিয়ে বিশৃঙ্খলা ঘটিয়ে সরকারের নানা উন্নয়ন জনগণের নিকট কিভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা যায় সেই চেষ্টা ছিল তাদের।

তিনি বলেন, বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নের নামেও নিজেদের সংগঠিত করার একটি প্রয়াস ছিল তাদের। জামায়াতের অর্থায়নের পরিচালিত স্কুল-হাসপাতালগুলোর কলেবর আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের।

জানা যায়, গত ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ভাটারা এলাকা থেকে গোপন বৈঠককালে জামায়াতের ৯ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়।

আটককৃতরা হলেন-জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ, রফিকুল ইসলাম খান, নির্বাহী পরিষদের সদস্য ইজ্জত উল্লাহ, মোবারক হোসেন, আব্দুর রফ, ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত ও জামায়াত কর্মী মনিরুল ইসলাম ও আবুল কালাম।

গ্রেপ্তারের সময়ে তাদের কাছে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনার বৈঠকের আলামত হিসেবে কিছু বই, ল্যাপটপ ও ব্যানার জব্দ করা হয়।

জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা একত্রিত হয়ে জননিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করা, ব্যক্তিসত্তা বা প্রজাতন্ত্রের সম্পত্তির ক্ষতিসাধনসহ শেখ হাসিনা সরকারকে অবৈধভাবে উৎখাত করার উদ্দেশ্যে গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে এমন খবর পায় পুলিশ। আর সেই গোপন খবরের ভিত্তিতে তাদের আটক করে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়।

জানা যায়, সন্ত্রাসবিরোধী এ মামলায় দু-দফা রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দারা। পাশাপাশি জব্দ করা ল্যাপটপটি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে গোয়েন্দারা। আর সেখান থেকে মেলে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

গোয়েন্দারা জানান, ২০১৮ থেকে ২০৪৮ এই ৩০ বছরের মাস্টারপ্ল্যান বানিয়েছে জামায়াত। এর মধ্যে সরকারের ২৫ সেক্টরে জামায়াতের প্রায় ২ লাখ কর্মী নিয়োগ করবে।

কৃষক শ্রমিককে দলে ভেড়াতে ট্রেড ইউনিয়ন চালু, এক্ষেত্রে তরুণদের টার্গেট করা হয়েছে। জামায়াতের পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কলেবর বৃদ্ধি করা করা।  

সারা দেশে বিভিন্ন নামে অন্তত ৪০০ ট্রেড ইউনিয়ন চালু করেছে। আর এ ট্রেড ইউনিয়নের মাধ্যমে দলকে সংগঠিত করার কাজ করছে।

যুগ্ম-কমিশনার হারুনুর রশিদ বলেন, তাদের মাস্টারপ্ল্যানের খবর আমরা পেয়েছি। তাদের লোকদের ছদ্মবেশে ছাত্রলীগে ঢুকিয়ে, হেফাজতে ঢুকিয়ে গোপন তথ্য নিয়ে সে মোতাবেক কাজ করা।

তিনি আরো বলেন, বিদেশ থেকে অর্থ এনে সেগুলো দলীয় ফান্ডে খরচ করে দলকে সংগঠিত করার কাজ করছে। কি করে আগামীতে দলকে সংগঠিত করা যায় সে কাজ তারা করছে।

হারুনুর রশিদ বলেন, সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নকে তারা তাদের কর্মী, দেশি-বিদেশি মিডিয়ায় ম্লান করে অপপ্রচার চালাবে এমনও পরিকল্পনা করছে। তিনি আরো বলেন, আগামী নির্বাচনকে ঘিরে নাশকতার ছকেরও তথ্য পেয়েছি আমরা। সেগুলো নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।

জানা যায়, একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দল জামায়াত ইসলামীর ২০১৩ সালে একটি রিটে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিল করে হাইকোর্ট। এরপর ২০১৮ সালে এটি গ্যাজেট আকারে প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। বিগত নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ দলটি ধানের শিষ প্রতিকে নির্বাচন করে। কিন্তু বর্তমানে টানাপোড়নের কারণে নিজস্ব স্বকীয়তায় রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টা করছে দলটি।

সরকারবিরোধী আন্দোলনে জামায়াত-শিবির সারা দেশে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। পেট্রোল বোমা, বাসে আগুন দিয়ে সাধারণ নিরীহ মানুষ হত্যার মতো অভিযোগ উঠে দলটির বিরুদ্ধে।

এছাড়াও জামায়াত নির্বাচনকালীন সময়ে ভোট কেন্দ্র পুড়িয়ে দেওয়া, প্রিজাইন্ডিং অফিসারকে হত্যা করার মতো কাজ করতেও দ্বিধাবোধ করেনি।

গোয়েন্দারা বলছেন, আগামী নির্বাচনকেও ঘিরে দলটি গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। নির্বাচনকেন্দ্রিক নাশকতা চালাতে এখন থেকেই দল গোছাচ্ছে।

কর্মকর্তারা বলেছেন, তাদের নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে কাজ করা হচ্ছে।   

এদিকে গত কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ।

জানা যায়, সম্প্রতি নোয়াখালীতে জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমিরসহ তিন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে। একদল পুলিশ জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য, নোয়াখালী জেলা আমির মাওলানা আলাউদ্দিনকে তার চৌমুহনীর বাসা থেকে এবং একইভাবে জেলা জামায়াতের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক নাসিমুল গনি মহল চৌধুরী ও চৌমুহনী ৯ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াত কর্মী মো. ফখরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে।

চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানা পুলিশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাত নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—নগর জামায়াতের বায়তুল মাল-বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম, নগর জামায়াতের সহ-প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, নগর শিবিরের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক মিফতাহুল আলম, নগর শিবিরের সাথী ইরফান ইউনুস, জামায়াত কর্মী ইমরান আলী, মো. দেলোয়ার ও মো. আবু বক্কর সিদ্দিক।

রাজশাহীতে নাশকতা মামলায় জামায়াতে ইসলামীর এক রুকনকে (সদস্য) গ্রেপ্তার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তার নাম হুমায়ুন কবির। তিনি নগরীর মতিহার থানার ধরমপুর এলাকার মৃত কামাল উদ্দিনের ছেলে। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তার হুমায়ুন কবিরের নামে নগরীর বিভিন্ন থানায় ৯টি নাশকতার মামলা রয়েছে।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শান্তিরাম ও বেলকা ইউনিয়নের জামায়াত সভাপতিসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন— শান্তিরাম ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি সুজা মিয়া, বেলকা ইউনিয়ন সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ মিয়া, জামায়াত কর্মী মিজানুর রহমান ও মনোয়ারুল ইসলাম।  

অন্যদিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেলের গ্রেপ্তারের সময় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বিবৃতি পাঠান জামায়াতের ইসলামীর আমির ড. শফিকুর রহমান।

 এক বিবৃতিতে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দের গ্রেপ্তারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি দাবি করে বলেন, দেশে বিদ্যমান ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতিতে জামায়াত জনগণের পাশে থেকে সেবা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

জামায়াতের নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে গত ৬ সেপ্টেম্বর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের সভাপতিত্বে এক বৈঠকের আয়োজন করা হয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!