• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১

সীমান্তে বিজিবির তৎপরতা


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ২৭, ২০২১, ০১:১৫ পিএম
সীমান্তে বিজিবির তৎপরতা

ঢাকা : সারা দেশে পুলিশি সতর্কতার মধ্যে এবার সীমান্তে বিশেষ নজরদারি শুরু করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পাশাপাশি সীমান্ত জেলা ও থানাকেও এই নজরদারির বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে অস্ত্র ও মাদক পাচার বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য এমন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) ভোরে টেকনাফ সীমান্তে জব্দ করা হয়েছে ২ লাখ পিস ইয়াবা। গত দুই মাসের মধ্যে ইয়াবার এই বড় চালান জব্দ করল বিজিবি। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার অস্ত্র ও ২০ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করে কোস্ট গার্ড।

সূত্র বলছে, দেশে চলমান ইউপি নির্বাচন ও ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে সহিসংতা পরিস্থিতি তৈরি করে সীমান্তের ওপার থেকে আনা অস্ত্র ব্যবহার হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই এ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গত দুই ধাপে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সহিংস ঘটনায় দেশি অস্ত্রের পাশাপাশি পিস্তল এবং রাইফেলও ব্যবহার হয়েছে। এসব ঘটনায় ৫৯ জন মারা গেছেন, আহত হয়েছেন ১২শ। এতে সরকারের টনক নড়ে।

এ পরিস্থিতিতে ৬৪ জেলার পুলিশ সুপার ও ইউনিটপ্রধানকে চিঠি দিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে ১৫ নভেম্বর থেকে দেশব্যাপী অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান শুরু হয়।

গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা বলেন, সীামন্তের ওপার থেকে সন্ত্রাসীরা অস্ত্র সংগ্রহ করে সহিংস পরিস্থিতির সময় কাজে লাগাতে পারে এমন আশঙ্কা রয়েছে।

এ কারণে সারা দেশে পুলিশের অভিযান পাশাপাশি সীমান্তে কঠোর নজরদারির বিষয়টি সামনে নিয়ে আসা হয়েছে।

চোরাকারবারিরা যাতে কোনো অস্ত্র ও মাদকের চালান দেশে না আনতে পারে এ জন্য সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি ও সীমান্ত ঘেঁষা থানা পুলিশকে এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি হায়দার আলী খান জানান, সারা দেশেই আমাদের অভিযান চলছে। অভিযান সফল করতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বিভিন্ন ইউনিটপ্রধান এবং সব জেলার এসপিদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সে অনুযায়ী অবৈধ অস্ত্র, মাদক, চোরাই ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল আটক ও উদ্ধার করা হচ্ছে। বৈধ অস্ত্র ও গুলির অবৈধ ব্যবহার হচ্ছে কিনা সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা। তিনি বলেন, সীমান্তের জেলা ও থানাগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়াও হয়েছে।

এদিকে বিজিবি সূত্র জানায়, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তারা জানতে পারে, এগারোকানী আলমগীরের প্রজেক্ট এলাকা দিয়ে ইয়াবার একটি বড় চালান মিয়ানমার হতে বাংলাদেশে পাচার হবে।

ওই তথ্যের ভিত্তিতে হোয়াইক্যং বিওপি’র একটি বিশেষ টহলদল দ্রুত বর্ণিত এলাকায় কয়েকটি উপদলে বিভক্ত হয়ে এগারোকানী এলাকায় বেড়িবাঁধের আঁড় নিয়ে গোপনে অবস্থান গ্রহণ করে। পরে চোরাকারবারী ২টি প্লাসিকের বস্তা নিয়ে নাফ নদী পার হয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আসতে দেখে। টহলদল উক্ত ব্যক্তিদের দেখা মাত্রই চ্যালেঞ্জ করে দ্রুত তাদের দিকে অগ্রসর হয়।

দুষ্কৃতকারীরা দূর হতে বিজিবি টহলদলের উপস্থিতি বুঝতে পেরে বস্তা ফেলে নাফ নদীতে ঝাঁপ দিয়ে রাতের অন্ধকারে সাঁতরিয়ে পার্শ্ববর্তী মিয়ানমার সীমান্ত অতিক্রম করে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে টহলদল সেখানে তল্লাশী অভিযান চালিয়ে ইয়াবা ২টি প্লাস্টিকের বস্তা উদ্ধার করে।

উদ্ধারকৃত বস্তার ভিতর দুই লাখ পিস ইয়াবা জব্দ করতে সক্ষম হয়। এছাড়া বৃহস্পতিবার কোস্টগার্ড টেকনাফ সীমান্তে অস্ত্র ও ইয়াবাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে।

বিজিবি সূত্র জানায়, কঠোর নজরদারি চলছে সীমান্তে। অস্ত্র, মাদকসহ চোরাই পণ্য প্রতিরোধে বিজিবি সদস্যরা কাজ করছেন। নজরদারির কারণে গত দুই মাসে ইয়াবার এ বড় চালান জব্দ করা হয়।

সূত্র জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী সীমান্ত এলাকায় বেশি বিদেশী অস্ত্র আসে। ওই এলাকায় নজরদারি চলছে। এছাড়াও দেশের অন্যান্য সীমান্ত এলাকাতেও কঠোর অবস্থান চলছে।

অন্যদিকে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট গত মাসে পার্বত্য অঞ্চলের সীমান্ত থেকে একে ৪৭ এর গুলিসহ বিপুল পরিমান অস্ত্র উদ্ধারসহ ৪ জনকে আটক করে। ওই সময়ও দেশে অবৈধভাবে অস্ত্র প্রবেশের বিষয়ে এ এলাকার বিজিবির প্রতি নজরদারির নির্দেশনা দেওয়া হয়।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, বিশৃঙ্খলা চেষ্টাকারীরা যাতে করে কোনপ্রকার নাশকতা করতে না পারে সে ব্যাপারে পুলিশ সতর্ক রয়েছে। এ সতর্কতার অংশ হিসেবে সীমান্তেও নজরদারি বাড়ানোর বিষয়ে বলা হয়। আর তারই অংশ হিসেবে সীমান্তে নজরদারী বাড়ানো হয়েছে।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) রাজশাহী-১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাব্বির আহমেদ জানান, সীমান্ত আমাদের কঠোর নজরদারি থাকে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এটি আরো একটু বাড়ানো এই যা।

তিনি বলেন, অস্ত্র ও মাদকসহ চোরাচালানি পণ্যের ব্যাপারে আমরা বরাবরি শক্ত অবস্থানে থাকি। এরপরও চোরাকারবারি নানা উপায়ে অবৈধ পণ্য দেশে নিয়ে আসার চেষ্টা করে। আবার আমরা জব্দও করি।

বিজিবির এ কর্মকর্তা বলেন, সর্বোপরি সীমান্তে আমাদের অবস্থান ও নজরদারি বেড়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!