• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

দ্রুতগতিতে বাড়ছে সংক্রমণ, সতর্ক সরকার


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ২১, ২০২২, ০৩:১৫ পিএম
দ্রুতগতিতে বাড়ছে সংক্রমণ, সতর্ক সরকার

ফাইল ছবি

ঢাকা : দেশে দ্রুতগতিতে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সংক্রমণ ২ শতাংশের নিচে ছিল। তবে ১১ জানুয়ারি থেকে শনাক্ত হার ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।

আর গত ১০ দিনে শনাক্ত ২১ শতাংশ বেড়ে বৃহস্পতিবার তা ২৬ দশমিক ৩৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সংক্রমণের এই হার গত ৬ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

এ পর্যন্ত গড় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এর মধ্যে নতুন করে আরো ৮ জনের দেহে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে দেশে ওমিক্রন ও ডেল্টা বেড়েছে। এখনই যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।

শঙ্কা প্রকাশ করে তারা বলছেন, সংক্রমণের এই হার দুই সপ্তাহ অব্যাহত থাকলে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। ভেঙে পড়তে পারে হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা।

এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার সতর্ক রয়েছে বলে দাবি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলো বন্ধ করা হয়নি বলে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালগুলোর শয্যাও বাড়ানো হবে।

তাছাড়া সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এরই মধ্যে কঠোর বিধিনিষেধ চলমান রয়েছে। বিয়ের অনুষ্ঠানসহ সব জনসমাগম বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার লকডাউনের কথা এখনই ভাবছে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে করোনা সংক্রমণের মাত্রা বিবেচনায় উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে ১২টি জেলা। সপ্তাহখানেক আগেও রেড জোনে ছিল দুটি জেলা- রাঙামাটি ও ঢাকা। কয়েকদিনের মধ্যে নতুন করে ১০টি জেলা উচ্চ ঝুঁকিতে প্রবেশ করেছে। করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো চার জনের মৃত্যু হয়েছে।

এ নিয়ে দেশে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ২৮ হাজার ১৮০ জনে। নতুন করে আরো ১০ হাজার ৮৮৮ জন আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ১৮২ জন।

এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছে ৫৭৭ জন। এ নিয়ে দেশে মোট ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৮৪৫ জন করোনা থেকে সুস্থ হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৫৭টি ল্যাবে ৪১ হাজার ২৯২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নমুনা সংগ্রহ করা হয় ৪০ হাজার ৮৯৮টি। গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী টানা ১৪ দিন সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের বেশি হলে করোনার পরবর্তী ঢেউ ধরে নিতে হবে। গতকাল টানা ১৩ দিন সংক্রমণের হার পাওয়া গেল ৫ এর বেশি। আরেকদিন এই হারে রোগী পাওয়া গেলেই করোনার তৃতীয় ঢেউ ধরে নিতে হবে।

অন্যদিকে দেশে আরো ৮ জনের দেহে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা (জিআইএসএআইডি) নতুন এসব রোগীর ওমিক্রনে আক্রান্তের তথ্য জানিয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট ৭১ জনের দেহে ওমিক্রন শনাক্ত হলো। নতুন আক্রান্তদের সবাই চট্টগ্রামের বাসিন্দা।

গত ২৮ ডিসেম্বর থেকে ৮ জানুয়ারির মধ্যে তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। শনাক্তদের মধ্যে ৫ জন পুরুষ এবং ৩ জন নারী। ঢাকা ও যশোরের পর এবার চট্টগ্রামেও পাওয়া গেল করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের অস্তিত্ব।

এদিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় সরকার ঘোষিত ১১ দফা বিধি-নিষেধের মধ্যে বিয়ের অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) জেলা প্রশাসক সম্মেলনে ডিসিদের সংগে স্বাস্থ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধিবেশন শেষে ব্রিফিংকালে তিনি সাংবাদিকদের একথা জানান।

অন্যদিকে দেশে করোনা সংক্রমণ আবারো উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় তা নিয়ন্ত্রণে নতুন করে ৫টি পরামর্শ দিয়েছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।  কমিটি জানায়, করোনা পজিটিভ রোগী লক্ষণ প্রকাশের ১০ দিন পর্যন্ত আইসোলেশনে থাকবেন।

কারিগরি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. সহিদুল্লা জানান, কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগীরা লক্ষণ প্রকাশের ১০ দিন পর্যন্ত আইসোলেশনে থাকবে।

এছাড়া কোভিড-১৯ নিশ্চিত রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন এমন ব্যক্তি যাদের কোনো উপসর্গ নেই তাদের কোয়ারেন্টাইনের প্রয়োজন নেই। তবে তাদের টাইট মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে।

বিমানবন্দরসহ সব পোর্ট অব এন্ট্রিতে সরকারি স্বাস্থ্য নির্দেশনা যথাযথভাবে পালনের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে। সব সরকারি হাসপাতালে সার্বক্ষণিক কোভিড-১৯ ও নন-কোভিড সব রোগীর জরুরি চিকিৎসা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়।

মন্ত্রিপরিষদ কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অংশীদের যেমন- পরিবহন মালিক সমিতি, দোকান মালিক সমিতি, রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির নেতারাসহ সবাইকে সম্পৃক্ত করে পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করা হয়। জাতীয় পরামর্শক কমিটি জনগণকে মাস্ক পরা নিশ্চিতকরণে সরকারের পক্ষ থেকে সাধারণ জনগণকে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণের প্রস্তাব করে।

এছাড়া জনপ্রতিনিধি ও ধর্মীয় প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণকে সঠিকভাবে মাস্ক পরিধান এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধকরণের সুপারিশ করা হয়।

করোনার সার্বিক পরিস্থিতি সব অর্থেই ভয় জাগাচ্ছে উল্লেখ করে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, দিন দিন সংক্রমণ বাড়ছেই। তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখনই দিনে ৩০ থেকে ৫০ হাজার শনাক্ত ধরা পড়তে পারে, যদি যথেষ্ট পরিমাণে টেস্ট করা হয়।    

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেলিন চৌধুরী বলেন, দেশে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন ধরা পড়ার পর ধারণা করো হয়েছিল তা প্রতিরোধে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। তা হয়নি। দ্রুততার সঙ্গে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। করণীয় নির্ধারণে সময়ক্ষেপণ করা হয়েছে।

অন্য দেশে যখন ওমিক্রমের সংক্রমণ ক্রমে বাড়ছে তখনও দেশে নানা ধরনের মেলা ও নির্বাচন চলতে দেখেছি। এই সময়ের মধ্যে দেশে ওমিক্রন ও ডেল্টা বেড়েছে। ফলে দেশে সংক্রমণ ২৬ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

এ ছাড়া ওমিক্রনের বিস্তার রোধে সরকার যে ১১ দফা বিধিনিষেধ দিয়েছে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ফলে কিছুদিনের মধ্যে হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়বে। চিকিৎসকের ওপরও বাড়তি চাপ পড়বে। চাপ বাড়বে। এমনকি হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মানার সঙ্গে টিকার পরিসর বাড়াতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, জনগণ সচেতন না হলে, তারা স্বাস্থ্যবিধি না মানলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। তবে কয়েক দিনের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়নে কঠোর হবে সরকার।

তিনি জানান, করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলো বন্ধ করা হয়নি করোনা সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে  হাসপাতালগুলোর  শয্যাও বাড়ানো হবে।  

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন- সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে, আমরা বিষয়টি নজরে রাখছি। এখন পর্যন্ত লকডাউনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সব পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রয়োজনে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!