ঢাকা : বিএনপির বিরোধিতা উপেক্ষা করে বহুল আলোচিত নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে করা আইনের খসড়া জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে।
২০১২ এবং ২০১৭ সালে যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে রাষ্ট্রপতি ইসি নিয়োগ করেছিলেন, সে প্রক্রিয়াই আইনের অধীনে আনা হচ্ছে এই বিলের মাধ্যমে। বিলটি অধিকতর পরীক্ষার জন্য আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।
ইসি গঠন আইনে সার্চ কমিটির মাধ্যমে এর আগে গঠিত সব নির্বাচন কমিশনের বৈধতা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কমিটির কাজ নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলার সুযোগ বন্ধ করা হয়েছে।
এরআগে টানা পাঁচদিন বিরতির পর রোববার (২৩ জানুয়ারি) চলতি সংসদের ১৬তম অধিবেশন (শীতকালীন) শুরু হয়।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সকাল ১১টায় সীমিতসংখ্যক সদস্যদের উপস্থিতিতে এই অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপন ও জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ নোটিশের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। পরে আইন প্রণয়ন কার্যক্রম শুরু হয়।
আইন বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল ২০২২’ সংসদে উত্থাপনের প্রস্তাব করেন।
সেই প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়ে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদ বলেন, এই আইন পাসের মাধ্যমে চলমান সংকটের কোনো সমাধান হবে না। সার্চ কমিটিকে বৈধতা দিতে অশুভ উদ্দেশ্য নিয়ে সরকার বিলটি এনেছে।
হারুন বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে। ওই কমিশনের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতি এবং নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করার অভিযোগ রয়েছে সে জন্য তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
হারুন-অর-রশিদ সংবিধানের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে যে দৃষ্টিপাত করা হয়েছে বাংলাদেশ একটি নির্বাচন কমিশন থাকলে উক্ত বিষয় প্রণীত আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেবে।
১১৮ অনুচ্ছেদের ৫ এ বলা আছে, যে কোনো আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে নির্বাচন কমিশনের কার্যাবলি রাষ্ট্রপতির আদেশ দ্বারা নির্ধারণ করবে সেইরূপ হইবে।
১২৬ অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব সহায়তা করা নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হইবে কিন্তু তারা কর্তব্য পালন না করলে কি হবে তা বলা হয়নি।’
সুতরাং এই বিষয়গুলো যাতে আইনে রাখা হয় এটিই ছিল জনগণের, রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি।
বিএনপির এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘আইনমন্ত্রী যে আইনটি উত্থাপন করেছেন এই আইনে অতীতে দুটি নির্বাচন কমিশনকে বৈধতা দেওয়ার জন্য আনা হয়েছে। এ আইন প্রশ্নবিদ্ধ। এতে বর্তমান সংকটের কোনো সমাধান হবে না। তাই আইনটি প্রত্যাহার করা উচিত। প্রত্যাহার করুন।
জবাবে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দিয়েই ওই বিলটি আনা হয়েছে। তারাও সংবিধানের আলোকে বিলটি প্রণয়নের দাবি জানিয়েছিলেন। দীর্ঘ ৫০ বছরে যে কাজটি হয়নি, এই বিলটি পাসের মাধ্যমে সরকার সেই কাজটি করতে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বিলটি আইনে পরিণত হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদান স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে, গণতন্ত্র সুসংহত ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করবে এবং জনস্বার্থ সমুন্নত হবে।
পরে কণ্ঠভোটে বিএনপির প্রস্তাব নাকচ হয়ে যায় এবং মন্ত্রী বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন। ওই বিলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে একটি সার্চ কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। যে কমিটির প্রধান হবেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি।
সদস্য থাকবেন হাইকোর্টের একজন বিচারপতি, মহাহিসাব নিরীক্ষক, সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান ও রাষ্ট্রপতির মনোনীত দুজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। যাদের নাম প্রস্তাব করা হবে তাদের বয়স কমপক্ষে ৫০ বছর হতে হবে।
এ ছাড়া তাদের সরকারি, আধাসরকারি, বেসরকারি বা বিচার বিভাগীয় পদে কমপক্ষে ২০ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
এদিকে সকল অংশীজনের মতামত না নিয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন করা হলে বিতর্কের সৃষ্টি হবে বলছেন বিশিষ্টজনরা। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান অভিযোগ করে বলেন, প্রস্তাবিত আইন আগের মতো আরেকটি নির্বাচন করার উদ্দেশ্য নিয়েই করা হচ্ছে। এই আইনে গঠিত সার্চ কমিটিও পক্ষপাতদুষ্ট হবে বলে মনে করেন তিনি।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশন নিয়োগের আইনের খসড়া অনুযায়ী সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত নামগুলো কারো জানার সুযোগ নেই। এতে স্বচ্ছতার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এর চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে যে প্রক্রিয়ায় এটি প্রেসিডেন্টের কাছে যাবে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
তিনি বলেন, খসড়া আইনে নাগরিক সমাজের মতামতের প্রতিফলন ঘটেনি। আইনটিতে বেশ কিছু ত্রুটি রয়েছে যেগুলো সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই আইনের মাধ্যমে যে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ হবে তা অতীতের দুটি নির্বাচন কমিশনের মতো প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন আয়োজন করবে।
সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, বর্তমান সরকার কী ধরনের সার্চ করবে সেটা আগে থেকেই অনুমেয়। তারা সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীলদের খুঁজে পাবেন। দুজন নাগরিককে রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন দেবেন। রাষ্ট্রপতির এই ক্ষমতা হঠাৎ করে কীভাবে এলো তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কোন ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হচ্ছে আমরা জানব না। হঠাৎ দেখা যাবে ৫ জনের নামে নির্বাচন কমিশন কমিশন গঠন হবে।
তিনি বলেন, সারা বিশ্বে কর্তৃত্ববাদী সরকারের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা এমনভাবে নির্বাচনের খেলা করে যেন তারা জয়ী হয়। এর প্রথম ধাপ পছন্দের নির্বাচন কমিশন গঠন করা। এটা এই আইনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করছে। নির্বাচন নিয়ে যে খেলা হচ্ছে, আগামী নির্বাচনে সরকারি দল যেন জিতে সেটাই মনে হচ্ছে।
তিনি সন্দেহ পোষণ করে বলেন, বর্তমান সরকার যেন জয়ী হয় সেটা নিশ্চিত করার জন্য এই আইন হচ্ছে।
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে না পারলেও বিতর্কিত নির্বাচন ঠেকাতে পারে। নির্বাচন চলমান অবস্থায় ব্যবস্থা নিতে পারে। তাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের প্রণীত নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইনের খসড়ায় অনুসন্ধানের কথা বলা হয়েছে। রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবীদের থেকে নাম নেওয়ায় অনুসন্ধান নয়।
সরকার কারো সঙ্গে আলাপ আলোচনা না করে আইন করেছে, তাদের মতো করে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য। ছলচাতুরি করার জন্য এই আইন বেছে নিয়েছে। নির্বাচন কমিশন আইনকে ক্ষমতায় আসার অস্ত্র হিসেবে সরকার ব্যবহার করবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ইসি বিলে বলা হয়েছে :
১. রাষ্ট্রপতি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারদের শূন্যপদে নিয়োগদানের জন্য এই আইনে বর্ণিত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করবার উদ্দেশ্যে নিম্নবর্ণিত ৬ জন সদস্য সমন্বয়ে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করবেন, তারা হলেন, (ক) প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত আপীল বিভাগের একজন বিচারক, যিনি ইহার সভাপতিও হবেন; (খ) প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক; (গ) বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক; (ঘ) চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন; এবং (ঙ) রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত ২ জন বিশিষ্ট নাগরিক।
২. অনুসন্ধান কমিটি তাদের সভার কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করবে।
৩. অন্যূন ৩ জন সদস্যের উপস্থিতিতে অনুসন্ধান কমিটির সভার কোরাম গঠিত হবে।
৪. অনুসন্ধান কমিটির সভায় উপস্থিত সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে এবং ভোটের সমতার ক্ষেত্রে সভায় সভাপতিত্বকারী সদস্যের দ্বিতীয় বা নির্ণায়ক ভোট প্রদানের ক্ষমতা থাকবে।
৫. অনুসন্ধান কমিটি গঠনের ১০ কার্যদিবসের মধ্যে এর সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করবে
অনুসন্ধান কমিটির দায়িত্ব ও কার্যাবলিতে বলা হয়েছে :
১. অনুসন্ধান কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করিয়া দায়িত্ব পালন করবে এবং এই আইনে বর্ণিত যোগ্যতা, অযোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, সততা ও সুনাম বিবেচনা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগদানের জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট সুপারিশ করবে।
২. অনুসন্ধান কমিটি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগদানের উদ্দেশ্যে এই আইনে বর্ণিত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের অনুসন্ধান করবে এবং এতদুদ্দেশ্যে রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবী সংগঠনের নিকট হতে নাম আহ্বান করিতে পারিবে।
৩. অনুসন্ধান কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদানের উদ্দেশ্যে প্রতিটি শূন্যপদের বিপরীতে রাষ্ট্রপতির নিকট ২ জন ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবে।
৫. প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারের যোগ্যতা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগদানের জন্য কোনো ব্যক্তিকে সুপারিশ করবার ক্ষেত্রে তার নিম্নরূপ যোগ্যতা থাকতে হবে। এগুলো হলো:- (ক) তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। (খ) তার বয়স ন্যূনতম ৫০ বৎসর হতে হবে এবং (গ) কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা-সরকারি বা বেসরকারি পদে তার অন্যূন ২০ বৎসরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
৬। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারের অযোগ্যতা এ ধারায় বলা হয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার হিসাবে নিয়োগদানের জন্য কোনো ব্যক্তিকে সুপারিশ করা যাবে না, যদি (ক) তিনি কোনো উপযুক্ত আদালত কর্তৃক অপ্রকৃতিস্থ ঘোষিত হন। (খ) তিনি দেউলিয়া ঘোষিত হইবার পর দায় হতে অব্যাহতি লাভ না করিয়া থাকেন। (গ) তিনি কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেন কিংবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করেন। (ঘ) তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন ২ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। (ঙ)
তিনি International Crimes (Tribunals) Act, 1973 Act No. XIX of 1973) বা Bangladesh Collaborators (Special Tribunals ) Order, 1972 ( President's Order No. 8 of 1972 ) এর অধীন যে কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত হইয়া থাকেন; বা (চ) প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকলেও পদের যোগ্য হবেন না।
সাচিবিক দায়িত্ব : মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অনুসন্ধান কমিটির কার্য-সম্পাদনে প্রয়োজনীয় সাচিবিক সহায়তা প্রদান করবে।
বিধি প্রণয়ন : এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার, রাষ্ট্রপতির নির্দেশক্রমে, আবশ্যক হলে, বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে।
হেফাজত : প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদানের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ইতঃপূর্বে গঠিত অনুসন্ধান কমিটি ও তৎকর্তৃক সম্পাদিত কার্যাবলি এবং উক্ত অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ বৈধ ছিল বলে গণ্য হবে এবং উক্ত বিষয়ে কোনো আদালতে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।
বিলটির উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতি বলা হয়েছে—সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদে বিধান রয়েছে যে, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলি-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করবেন।’
(২) সংবিধানের ওই বিধান বাস্তবায়নকল্পে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে একটি আইন প্রণয়ন করা আবশ্যক। সেলক্ষ্যে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ শীর্ষক বিলের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে।
(৩) প্রস্তাবিত বিলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদানের জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট সুপারিশ প্রদানের নিমিত্ত অনুসন্ধান কমিটি গঠন, অনুসন্ধান কমিটির দায়িত্ব ও কার্যাবলি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদানের জন্য যোগ্যতা-অযোগ্যতা সংক্রান্ত বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়া প্রস্তাবিত বিলে অনুসন্ধান কমিটি কর্তৃক মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারদের নাম সুপারিশ করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবী সংগঠনের নিকট হতে নাম আহ্বান করার বিধান রাখা হয়েছে।
(৪) প্রস্তাবিত বিলটি আইনে পরিণত হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদান স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে, গণতন্ত্র সুসংহত ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করবে এবং জনস্বার্থ সমুন্নত হবে মর্মে আশা করা যায়।
সংবিধানের আলোকে আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে গত ১৭ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত আইনের খসড়া অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
ইসি বিলটি ছাড়াও গতকাল অধিবেশনে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) বিল ২০২২’ ও ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) বিল ২০২২’ এবং বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ‘বাণিজ্য সংগঠন বিল-২০২২’ উত্থাপন করেন। বিল উত্থাপন শেষে অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাব নিয়ে সাধারণ আলোচনা শুরু হয়।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :