• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১
সবার নজর এখন নতুন ইসিতে

কে হচ্ছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার?


বিশেষ প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২, ০৩:৩৫ পিএম
কে হচ্ছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার?

ঢাকা : বিতর্ক ও নানা আলোচনার মধ্য দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা ও চার কমিশনারের পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হলো গতকাল সোমবার। বিদায়ী সিইসির দাবি পাঁচ বছরে ৬ হাজার ৬৯০ নির্বাচন সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছে।

তবে বিরোধী দলের রাজনীতিবিদদের দাবি, হুদা কমিশন দেশের নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। তাই সংবিধানের প্রতি জনগণের আস্থা-বিশ্বাস বিনষ্ট করার দায়ে বিদায়ী ইসিকে ‘বিচারের’ সম্মুখীন হতে হবে। আর রাজনৈতিক দলগুলোর দৃষ্টি এখন নতুন নির্বাচন কমিশন-ইসি গঠনে।  

এদিকে সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ইসির মেয়াদ শেষ হলেও নতুন কমিশন এখনো ঠিক হয়নি। তবে নতুন কমিশন গঠনে দেরি হলেও মাঝখানের সময় আইনে শূন্যতা হিসেবে গণ্য হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

তিনি বলেন, সংবিধান বা আইনে পদ শূন্য থাকতে পারবে না, এ রকম কথা নেই। এ সময় নির্বাচন কমিশনের প্রশাসনিক কাজ চলবে। কিন্তু নতুন নির্বাচন কমিশন এলেই কোনো নির্বাচনের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারবে।

অন্যদিকে নতুন ইসির জন্য সার্চ কমিটিতে মোট ৩২৯ জনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে আলোচনায় রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ১০ জনের নাম। তাদের মধ্যে থেকে বিভিন্ন মহলে সিইসি হিসাবে সাবেক সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার নাম শোনা যাচ্ছে। তাছাড়া বিকল্পধারাও সিইসি হিসেবে মোশাররফ ভূঁইয়ার নাম প্রস্তাব করেছে।

ইসি গঠনে সার্চ কমিটিতে থাকা কোন নামগুলো গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে? কে হচ্ছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার? এই কমিশনের অধীনে কেমন হবে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। যদিও নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির কার্যক্রমকে নাটক বলে আখ্যা দিয়েছে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো।

তাদের দাবি, বর্তমান সরকারের অধীনে যে প্রক্রিয়ায় ইসি গঠন হচ্ছে; এই ইসি দিয়ে কোনোভাবেই অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। এই কমিশন থেকে সুবিধা পাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই আইনে দেশের সাধারণ মানুষের কোনো সমর্থন নেই। তবে ভিন্নকথা বলছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।

তারা বলছেন, সার্চ কমিটি দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এমন একটা কমিশন গঠন করবে, যা সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে।

ইসি সূত্রে জানা যায়, ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হলো বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ। নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার পদের জন্য যোগ্য ব্যক্তি খুঁজে বের করতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছেও নাম দেওয়ার প্রস্তাব দেয় সার্চ কমিটি।

রাজনৈতিক দলগুলোকে গত ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে যোগ্য ব্যক্তিদের নামের তালিকা দিতে বলা হয়েছিল। রাজনৈতিক দলগুলো থেকে প্রস্তাবের ভিত্তিতে নবগঠিত সার্চ কমিটি সিইসি ও চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, কয়েকটি রাজনৈতিক দল বাদে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইসি গঠনে নাম প্রস্তাব করেছে। সর্বশেষ গত ১০ ফেব্রুয়ারি দলের পক্ষ থেকে ১০ জনের নাম লিখিতভাবে জমা দেওয়া হয়। তারা হলেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দুইজন সাবেক বিচারপতি মো. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ও আবু বকর সিদ্দিকী, পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসির) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক ও সাবেক আইনসচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল প্রমুখ।

নির্বাচন কমিশন গঠনে বিএনপিসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল সার্চ কমিটিতে নাম প্রস্তাব করেনি। তারা বলছে, ক্ষমতাসীনরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতেই ইসি গঠনের নতুন আইন করেছে। এই আইনে দেশের সাধারণ মানুষের কোনো সমর্থন নেই। এছাড়া সার্চ কমিটির অধিকাংশ সদস্যই আওয়ামী লীগের। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে মতামত গ্রহণ ও  তালিকা নেওয়া হলেও বিগত দিনের মতোই হুদা মার্কা নির্বাচন কমিশন গঠন করার প্রক্রিয়ায় অটল সরকার।

সরকারের অধীনে যে প্রক্রিয়ায় ইসি গঠন হচ্ছে, এই ইসি দিয়ে কোনোভাবেই অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। এই কমিশন থেকে সুবিধা পাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তারা ফের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতেই নির্বাচন কমিশন গঠন আইনকে কৌশলে অপব্যবহারের চেষ্টায় লিপ্ত।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতি যে সংলাপ করেছেন সেই সংলাপে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। সুতরাং নতুন ইসি গঠনের জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে নাম প্রস্তাব করার প্রশ্নই উঠে না।

যারা বিগত দিনে ভোট চুরি করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেছে, তারাই আবার ভোট চুরি করার জন্য ইসি গঠনের নামে নতুন করে পাঁয়তারা শুরু করেছে। তারা নানাভাবে উঁকিঝুঁকি মারছে।

দেশের মানুষ যারা আইনের শাসনের বিশ্বাসী, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, ভোটের রাজনীতিতে বিশ্বাসী, তাদের এ নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই।  ইসি গঠনের নামে এটা ভোট চুরির নতুন কৌশল। তারপরও আপেক্ষায় আছি এ সার্চ কমিটি মাধ্যমে আওয়ামী লীগ কাদের দিয়ে কমিশন গঠন করে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিএনপির কোনো আগ্রহ নেই। শুধু সার্চ কমিটি নয়, নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের বিষয়ে কোনো প্রক্রিয়াতে থাকবে না বিএনপি।

তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে কোন ধরনের সমস্যা হলে জনগণকে সাথে নিয়ে তার সমাধান হবে রাজপথে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করে খাদের কিনারে রেখে যাওয়া ও সংবিধানের প্রতি জনগণের আস্থা-বিশ্বাস বিনষ্ট করার দায়ে বিদায়ী নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) ‘বিচারের’ সম্মুখীন হতে হবে।

এদিকে, নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের জন্য সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি বাংলাদেশে পাওয়া অসম্ভব বলেই মনে করে ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন। এর বদলে তিনি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক কমিশন চাইছেন, যেখানে নাগরিক সমাজের সদস্যরা থাকবেন। নিয়োগ পাবেন নারী ও সংখ্যালঘুরাও।

মুনতাসীর মামুন বলেন, সার্চ কমিটির ক্ষমতা সীমিত।  নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সুষ্ঠুভোট করা সম্ভব নয়। সুষ্ঠু নির্বাচনে অনেক অংশীজন রয়েছেন, সেটা রাজনৈতিক দল, প্রশাসন, স্থানীয় ভোটার আর নির্বাচন কমিশন সেটা পরিচালনা করতে পারে। সবকিছু ইসির একার ওপরে চাপিয়ে দিলে হবে না।

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বলেন, এই সার্চ কমিটি মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া লোক দেখানো। এখানে সবাই সরকারের পক্ষে কাজ করছে। তারপরেও কাদের দিয়ে নতুন ইসি গঠন করা হয় তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে মানুষ।

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির প্রেসিডেন্ট ডক্টর অলি আহমেদ বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ অনুপস্থিত। এমন পরিস্থিতি নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। তারপরে নতুন ইসি দিয়ে এ সরকার নতুন নতুন নাটক তৈরি করবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এছাড়া, জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের বলেছেন, এমন ইসি দরকার যারা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সমর্থ হবে। ক্ষমতাহীন নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারে না। তাই অনুসন্ধান কমিটির দিকে জাতি তাকিয়ে আছে। দেশের মানুষ অপেক্ষা করে আছে কাদের নাম নতুন ইসিতে আসে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সার্চ কমিটিতে তারা (বিএনপি) নাম দিলো কি-না, তাতে কিচ্ছু যায়-আসে না। দেশের আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে।

তবে আমি বিশ্বাস করি, বিএনপি যতই আন্দোলন-সংগ্রামের হুমকি দিক না কেন, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে তারা শিক্ষা নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে করার জন্য সরকার নির্বাচন কমিশনকে সার্বিক সহযোগিতা দেবে বলেও জানান তিনি।

বিদায়ী নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে ওই নির্বাচনে গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্রের লাশ পড়ে আছে। এই লাশ সৎকারের দায়িত্ব কে নেবে? কথাটা রূপকার্থে বলা হলেও এটাই সত্য। নির্বাচনের নামে সারা দেশে এমন অরাজকতা কখনো কাঙ্ক্ষিত ছিল না। নির্বাচনের নামে ইসি তৃণমূল পর্যায়ে এই দ্বন্দ্ব-সংঘাতের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে দিয়েছে।

বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা বলেছেন, আমরা এই পাঁচ বছরে দেশের জাতীয় সংসদের নির্বাচনসহ প্রায় ৬ হাজার ৬৯০টি নির্বাচন করেছি। গত পাচঁ বছরে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে কাজ করতে গিয়ে হয়তো ছোট-খাট কিছু ভুলত্রুটি থাকতে পারে। তবে আমি এবং আমার কমিশন চেষ্টা করেছি সর্বোচ্চটা দিয়ে দায়িত্ব পালন করতে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!