• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পদ্মার বুকে বাংলাদেশের অহংকার


বিশেষ প্রতিনিধি জুন ২৫, ২০২২, ০৯:০১ এএম
পদ্মার বুকে বাংলাদেশের অহংকার

ঢাকা : পদ্মা সেতু আমাদের আবেগের নাম। জাতীয় অহংকার ও সাহসের আরেক নাম। সক্ষমতার প্রতীক। দেশি-বিদেশি নানা বাধা-বিপত্তিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাঙালির আত্মমর্যাদার প্রতীক হয়ে ওঠা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হচ্ছে আজ শনিবার। সকাল সাড়ে ১০টায় জমকালো আয়োজনে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২০১১ সালে দুর্নীতির ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়নে অস্বীকৃতি জানালে তাদের কাজ গুটিয়ে নিতে বলেন শেখ হাসিনা। এরপর সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করেন এ মেগা প্রকল্প।

২০১৫ সালে শুরু যে কাহিনীর, শত ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে সে কাহিনীর শুভ সমাপ্তি হচ্ছে আজ। নিজ অর্থায়নে এই প্রকল্পের শুভ সমাপ্তি টানা ছিল বাংলাদেশের জন্য এক বিশাল চ্যালেঞ্জ।

অর্থায়নের আগেই আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য দাতা সংস্থার অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পদ্মা সেতুর কাজ বন্ধ করার জন্য দেশি-বিদেশি চক্র একযোগে ষড়যন্ত্র করেছিল। মানুষের মনে সন্দেহের সৃষ্টি করা হয়।

বহু চ্যালেঞ্জ আর বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে পদ্মা সেতু। বাস্তবতার পূর্ণ রূপ নেয়া পদ্মা সেতু এখন বাংলাদেশের সক্ষমতার গৌরবকে ফিরিয়ে এনেছে।

পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির গল্প সাজিয়ে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছিল বিশ্বব্যাংক।

বিশ্বব্যাংকের সুপারিশ বাস্তবায়নে সে সময় সরকারের এক মন্ত্রী ও উপদেষ্টা দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তদবিরও করেছিল। দেশি-বিদেশি চাপে মামলা করতে হয় দুদককে। গ্রেপ্তার করা হয় সেতু সচিবসহ ২ জনকে। কথিত দুর্নীতির তদন্তে বিশ্বব্যাংক নিজেদের টিমও পাঠায় বাংলাদেশে।

এদিকে দুর্নীতির অভিযোগে জড়িতদের ছুটিতে পাঠানো, দুদকের বিশেষজ্ঞ টিম গঠন, তদন্তের অগ্রগতি জানানো এবং তাদের সুপারিশ নেয়ার তিন দফা প্রস্তাব দেয় বিশ্বব্যাংক। যদিও এমন প্রস্তাবের আগেই তদন্ত টিম গঠন করে দুদক। তবে অভিযোগ প্রমাণের আগে ছুটিতে পাঠানো, তদন্তে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ নেয়ার প্রস্তাবটি সাংঘর্ষিক হওয়ায় নাকচ করে দেয় দুদক।

দুদকের এই অবস্থানের মধ্যেই পদ্মায় বিশ্ব ব্যাংককে ফেরাতে সরকারের একজন মন্ত্রী ও উপদেষ্টা তাদের প্রস্তাব মেনে নিতে দুদকে তদবির করেন। সে সময়ের দুদক কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে ডেকে মন্ত্রী আবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার, তার ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে পরামর্শ দেন।

বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ এবং সরকারের একটি মহলের চাপে পদত্যাগে বাধ্য হন আবুল হোসেন। দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয় অর্থ উপদেষ্টা মসিউর রহমানকে। গ্রেপ্তার হন সেতু সচিব ও প্রকল্প পরিচালক।

সে বিষয়ে দুদকের সাবেক কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, আবুল মাল আবদুল মুহিত (তৎকালীন অর্থমন্ত্রী) সাহেব ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গওহর রিজভী একদিন সকালে আমাকে ডাকেন। তারা বলেন, দুদককে কিছুটা সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে। এ জন্য আপনাদের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে চায়। আমি বললাম, আমাদের তো একজন কমিশনার ও একজন চেয়ারম্যান আছে। তাদের সঙ্গে আগে আলোচনা করেন। তখন তারা বলে, তাদের সঙ্গে এরই মধ্যে আলোচনা হয়েছে।

তারা আমার কথা বলেছেন, তিনি আইনের দিকটি দেখেন, তার সঙ্গেই আপনারা কথা বলেন। আমি বললাম, আপনারা কী চান। তখন তারা বলল, বিশ্বব্যাংক টিম আসার আগে আবুল হোসেনকে মামলা করে আসামি করতে হবে। সেই সঙ্গে আবুল হোসেনের যে ফার্ম আছে, সেটাতে অভিযান চালিয়ে ওদের সব কাগজপত্র জব্দ করতে হবে। আবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে এসে কঠোর জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। ওরা এটা দেখতে পেলেই টাকাটা দিয়ে দেবে।

অন্যদিকে শুধু দেশেই নয়, বিশ্বেও একাধিক রেকর্ড গড়েছে বাঙালি জাতির গর্ব ও আত্ম-অহংকারের প্রতীক পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতু নির্মাণে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নদী নিজেই। নদীর তলদেশে নরম মাটি। এমন একটি নদীতে কাদার ওপর কীভাবে পদ্মা সেতুর মতো বিশাল অবকাঠামো নির্মাণ ও তাকে টিকিয়ে রাখা হবে, এটাই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

নদীর তলদেশে তিন মিটার ব্যাসার্ধ নিয়ে মাটির ১২২ মিটার গভীরে পাইল বসানো ছিল এই সেতু নির্মাণের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ, যা এখন রেকর্ড। এখন পর্যন্ত বিশ্বের অন্য কোথাও আর কোনো সেতুতে এত গভীরে পাইল বসাতে হয়নি। এ ছাড়া পিলারের ওপর বসানো হয়েছে ১০ হাজার ৫০০ টন সহনশীল বেয়ারিং, যা আরেক বিশ্ব রেকর্ড। এর ফলে রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পেও বুক উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে গর্বের পদ্মা সেতু।

আবার রেকর্ড পরিমাণ নদীশাসন করেই বাগে আনতে হয়েছে প্রমত্ত পদ্মাকে। নদীর পাড় ভাঙনের কারণে সেতুটি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪ কিলোমিটার (মাওয়া প্রান্তে ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার এবং জাজিরা প্রান্তে ১২ দশমিক ৪ কিলোমিটার) এলাকা নদীশাসনের আওতায় আনা হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!