ঢাকা : দুয়ার খুললো স্বপ্নের পদ্মা সেতুর। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণে ৭ বছর ৬ মাস ২৬ দিন লেগেছে। সেতু সাধারণত তৈরি হয় ইস্পাত বা কংক্রিট দিয়ে। কিন্তু বহুমুখী পদ্মা সেতু তৈরি হয়েছে ইস্পাত ও কংক্রিটের মিশ্রণে। দৃষ্টিনন্দন এ সেতুর মূল কাঠামো ইস্পাত দিয়ে তৈরি, যা স্প্যান নামে পরিচিত। আর পিলার এবং যান চলাচলের পথ কংক্রিটের তৈরি।
সেতুর জন্য শক্ত ভিত তৈরিতে প্রথমে ড্রেজার দিয়ে বালু সরিয়ে নদীতে ভারী পাথর, কংক্রিটের ব্যাগ এবং জিওব্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে। পাথরগুলো একেকটি ৮০০ থেকে হাজার কেজির। প্যানেল অব এক্সপার্ট সদস্য ড. আইনুন নিশাত জানান, ভিত তৈরির পর শুরু হয় পাইল বসানোর কাজ। পদ্মা সেতুর পিলার (খুঁটি) তৈরিতে পরীক্ষামূলক পাইলিং শুরু হয় ২০১৫ সালের ১ মার্চ।
২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূল সেতু নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এরপর ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বসে পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান। আর শেষ স্প্যান বসে ১০ ডিসেম্বর ২০২০ সালে। এতে দৃশ্যমান হয় পুরো পদ্মা সেতু। ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর বসে ৪১তম স্প্যান। প্রথমদিকে স্প্যান স্থাপনের গতি কম থাকলেও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। ৪২টি পিলারের ওপর ৪১টি স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে সেতুর সম্পূর্ণ দৃশ্যমান হয়।
প্রথম স্প্যান ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয় ‘৭এ’ স্প্যানটি। এটি বসানো হয় সেতুর জাজিরা প্রান্তে। দ্বিতীয় স্প্যান ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি জাজিরা প্রান্তে ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারের ওপর বসে ‘৭বি’ স্প্যানটি। এতে ৩০০ মিটার দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু।
তৃতীয় ২০১৮ সালের ১১ মার্চ ‘৭সি’ নম্বর স্প্যানটি বসে ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলারের ওপর। আর সর্বশেষ ৪১ নম্বর স্প্যান ২-এফ বসে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের ওপর। এর মাধ্যমে দৃশ্যমান হয় সেতুর পুরো ৬ হাজার ১৫০ মিটার।
পদ্মা সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। খরস্রোতা পদ্মা নদীর ওপর ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ হয়েছে স্বপ্নের এ সেতু। ২০১৪ সালে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়।
পদ্মা সেতু নির্মাণে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নদী নিজেই। নদীর তলদেশে নরম মাটি। এমন একটি নদীতে কাদার ওপর কীভাবে পদ্মা সেতুর মতো বিশাল অবকাঠামো নির্মাণ ও তাকে টিকিয়ে রাখা হবে, এটাই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এইকম নকশা তৈরি করে। ৫১ হাজারের বেশি কর্মী রয়েছে সংস্থাটির। পদ্মা সেতুর লিড ডিজাইনার ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক রবিন শ্যাম। তবে তার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আরও অনেকেই।
পদ্মা প্রকল্পের জটিল বিষয়াদি সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য প্রয়াত ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীসহ দেশ-বিদেশের মোট ১২ জন বরেণ্য প্রকৌশল ও আইন বিশেষজ্ঞ এর দায়িত্ব পালন করেন। ইতোমধ্যে আমরা ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, অধ্যাপক ড. আলমগীর মুজিবুল হক এবং অধ্যাপক ড. এএমএম শফিউল্লাহকে হারিয়েছি, যাদের অবদান চিরস্মরণীয়।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :