ঢাকা : আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ২৩ দফার ভিত্তিতে গঠিত ১৪ দলীয় জোট আর বড় হবে না। সংগত ও যৌক্তিক কোনো জটিলতা সৃষ্টি না হলে এ জোট ছোটও হবে না। যদিও জোট গঠনের শুরুতে ১৪ দল থাকলেও এখন এ জোটে ১৪টি দল নেই। যারা আছে তাদের বাইরে আর কোনো দল আদর্শিক এ জোটে অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে নানা আলোচনা ছিল।
কিন্তু রোববার (৪ জুন) ১৪ দলীয় জোটের সভায় জোট বড় না করারই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
জোটের অন্যতম শরিক তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্প্রতি এ নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীও ১৪ দলীয় জোট বড় হবে না বলে জানিয়েছেন।’
বৈঠকে উপস্থিত জোটের একাধিক নেতা একই তথ্য জানিয়ে বলেন, জোটের এ বৈঠকে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর বিশদ আলোচনা হয়েছে। দ্রব্যমূল্য বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ১৪ দল। জোটের পক্ষ থেকে দ্রুত বাজার ও বিদ্যুৎ পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক পর্যায়ে আনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
বৈঠকে জোটের সমন্বয়ক-মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মিটিং-সিটিং ও নানা আলোচনা হতে পারে। তার মানে এই নয় যে, এ দল ১৪ দলে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে।
জোটের এক নেতা আমুর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘নির্বাচনে যত বেশি দলের অংশগ্রহণ ঘটে সরকারপ্রধান সেই চেষ্টা করছেন। আমি ও আমরা ১৪ দল তাই চায়। তার উদ্দেশ্য জোটে নেওয়া নয়। এ ব্যাপারে ভাবনার কোনো কারণ নেই।’
বৈঠকের আলোচনায় আরও ছিল যে, বিএনপি নির্বাচনে এলেও জোটগতভাবেই আগামী নির্বাচন করবে, না এলেও জোটগতভাবেই নির্বাচন হবে। এক্ষেত্রে আসন ভাগাভাগি নিয়ে দফারফা হবে।
১৪ দলীয় জোটের আরেক নেতা বলেন, এই সময়ে আসন ভাগাভাগির বিষয় নিয়ে জোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন আলোচনা তুললে সে আলোচনা এখন নয় জানিয়ে তার বক্তব্যের রাশ টেনে ধরেন সমন্বয়ক আমু।
বৈঠকে জোটগতভাবে সারা দেশে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে ৬ জুন মঙ্গলবার ঢাকায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ কর্মসূচি ঠিক করা হয়েছে জোটের এ সভায়। এরপর ধারাবাহিক কর্মসূচির দিনক্ষণও ঠিক করবেন তারা।
বৈঠকে উপস্থিত জোটের একাধিক নেতা আমির হোসেন আমুর উদ্ধৃতি দিয়ে আরও বলেন, আসন্ন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে অনেক দলকে নির্বাচনে আনতে প্রয়োজনে ভিন্ন কোনো ফ্রন্ট হলেও হতে পারে। সেটা নির্বাচনী জোট হবে। আদর্শিক জোট নয়। এর আগেও জাতীয় নির্বাচনে মহাজোট হয়েছে, সামনেও তেমন কিছু হতে পারে। কিন্তু ১৪ দলে যুক্ত করে নয়।
মার্কিন ভিসানীতি দুরভিসন্ধিমূলক : যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইতিবাচকভাবে দেখে এলেও ১৪ দলীয় জোট নেতারা ভিসানীতিকে নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন। ১৪ দলের দাবি, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি দুরভিসন্ধিমূলক। ভিসানীতি নিয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থানের সঙ্গে একমত হয়নি ১৪ দল।
ইস্কাটনে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের বৈঠকে আলোচনা শেষে জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু এ দাবি করেন। জোটের সমন্বয়কের ইস্কাটনের বাসভবনে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন আমির হোসেন আমু। জোটের বৈঠক শেষে আমু দাবি করেন, এ ভিসানীতি অনাকাক্সিক্ষত।
তবে জোটের অন্যতম নেতৃত্ব আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বারবার দাবি করেছেন, এটা আওয়ামী লীগকে টার্গেট করে করা হয়নি।
এ বিষয়ে আমু বলেন, ‘আমরা ভিসানীতিকে অনাকাক্সিক্ষত মনে করি। আরেকটা কথা হলো, এটা তো ১৪ দল। আওয়ামী লীগের মিটিং না। মনে রাখবেন। আমরা তো রাবার স্ট্যাম্প না। এখানে আরও ১৩টা দল আছে, সবাই তো আওয়ামী লীগ না, এটা আপনাকে মনে রাখতে হবে। এখানে কথাটা হচ্ছে ১৪ দল যেটা ফিল করে, সেটাই বলবে।
অন্যদল কে কী বলবে, সেটা আমাদের দেখার বিষয় না। আমাদের আলোচনায় যেটা আসবে সেটা আমরা প্রকাশ করব।’
আমির হোসেন আমু বলেন, ‘মার্কিন ভিসানীতি অনাকাক্সিক্ষত ও অনাহূতভাবে আসায় তা অত্যন্ত দুরভিসন্ধিমূলক মনে হচ্ছে। এটা কারও কারও পক্ষে ব্যবহার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা মনে করি জাতি সংবিধানের প্রত্যেকটি প্রক্রিয়াকে সমুন্নত রাখার জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকবে। আমরা একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। এক্ষেত্রে অন্য কোনো হস্তক্ষেপ আমরা কামনা করি না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি যারা নির্বাচনকে বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে বানচাল করতে চায়, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, তাদের জন্য এটা (ভিসানীতি) সহায়ক হতে পারে। সেদিকে লক্ষ রেখে আমরা কথাগুলো বলতে চাই।’
বাজেট নিয়ে সংসদে বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে জানিয়ে আমু বলেন, ‘আমরা যেহেতু পড়াশোনার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছি, প্রধানমন্ত্রী নবম শ্রেণি পর্যন্ত বিনা পয়সায় বই বিতরণ করছেন। সবকিছু ঠিক আছে। সেক্ষেত্রে কলম ও কাগজের দাম বৃদ্ধি পড়াশোনার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। সংবাদপত্রের ওপর ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। তাই আমরা মনে করি কাগজ-কলমের দাম কমানো উচিত। আরোপিত কর প্রত্যাহার করা উচিত।’
বৈঠকে আরও ছিলেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ওয়াজেদুল ইসলাম খান, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন প্রমুখ।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :