ঢাকা: কয়েকদিন ধরে সংলাপ ইস্যুতে সরগরম রাজনীতির মঞ্চ। কেউ বলছেন সংলাপ হবে, কেউ বলছেন হবে না। কেউবা আবার নির্বাচনকে ঘিরে সংলাপের সম্ভাবনাই নাকচ করে দিচ্ছেন।
গত ৬ জুন সংলাপের বিষয়টি সামনে আনেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪ দলীয় মহাজোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু। বলেছিলেন, সংবিধানের মধ্যে থেকে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখতে আলোচনার দরজা সবসময় খোলা। বিএনপির সাথে যেকোনো আলোচনা হতে পারে। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে আলোচনার দ্বার সবসময় খোলা আছে। প্রয়োজনে জাতিসংঘের প্রতিনিধির মধ্যস্থতায় বিএনপির সাথে আলোচনা হতে পারে।
যদিও এমন বক্তব্যের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অবস্থান পরিবর্তন করেন আমু। বুধবার (৭ জুন) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের আলোচনাসভায় তিনি বলেন, ‘নির্বাচন ইস্যুতে কাউকে আলোচনার জন্য আহ্বান করা হয়নি। আলোচনার জন্য কাউকে বলা হয়নি, কাউকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। কাউকে আহ্বান করা হয়নি। কাউকে আহ্বান করার সুযোগ নেই। এটা আওয়ামী লীগের বাড়ির দাওয়াত নয় যে দাওয়াত করে এনে খাওয়াব।’
এরপর বৃহস্পতিবার (৮ জুন) সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন খোদ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
যদিও আমুর বক্তব্যের পর সংলাপের পালে হাওয়া লাগান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ৭ জুন তিনি বলেন, রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই।রাজনৈতিক যেকোনো সমস্যা সমাধানে আলোচনা প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ দল হিসেবে সব দলকে নিয়ে আলোচনা করে সমাধানে বিশ্বাসী।
তার এমন বক্তব্যে বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হতে যাচ্ছে এমনটিই মনে করছিলেন সাধারণ মানুষ। তবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের কথায় সে আশায় আবারও ছেদ পরে। তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হতে পারে’ আমির হোসেন আমুর এমন বক্তব্য ব্যক্তিগত। এ বক্তব্য নিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় ফোরামে কোনো আলোচনা হয়নি, এমনকি ১৪ দলেও আলোচনা হয়নি।
সবশেষ বৃহস্পতিবার ওবায়দুল কাদের বলেন, সংলাপ নিয়ে আপাতত আমরা ভাবছি না, ভাবব কি না সেটা পরের বিষয়। ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সমাবেশে তিনি আরও বলেন, সংলাপের কথা শুনে বিএনপির নেতাদের জিহ্বায় পানি এসেছে। গতবারের কথা আমাদের মনে আছে; এক বার নয়, দুই বার তাদের সঙ্গে সংলাপে বসেছি। রেজাল্ট কী?
অন্যদিকে সংলাপ প্রশ্নে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য ‘জনদৃষ্টি ভিন্নখাতে নেওয়ার কৌশল’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ‘এরা (আওয়ামী লীগ) একটা জিনিস খুব ভালো জানে, ডাইভারশন করা। যখন মানুষ বিদ্যুৎ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে, তখন আরেকটা ইস্যু তৈরি করে ফেলে যেন এটাকে ডাইভার্ট করা যায়।’
এদিকে সংলাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সিনিয়র নেতাদের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্যে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে যখন বিএনপির সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন, সেখানে তাদের এমন বক্তব্যে দলের ভেতরে-বাইরে বিভ্রান্তির সুযোগ তৈরি হতে পারে। তাই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সতর্কতার সঙ্গে কথা বলা উচিত বলে মনে করছেন অনেকে।
তবে সংলাপ হোক বা না হোক, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ঘরে বাইরে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পরতে হতে পারে আওয়ামী লীগকে। দীর্ঘদিন টানা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা দলটির তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ মেটানো বড় চ্যালেঞ্জ। ইতোমধ্যে নানা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নেমেছে বিএনপি। তাদের আন্দোলন মোকাবিলার পাশাপাশি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে ক্ষমতাসীনদের ওপর। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আমেরিকার নতুন ভিসানীতি। নির্বাচনি বছরে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখও তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ভোটের আগে আসন ভাগাভাগিসহ কয়েকটি ইস্যুতে শরিকদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে হবে দলটিকে।
এমনকি খোদ শেখ হাসিনাই বলেছেন, নানামুখী ষড়যন্ত্রের কারণে আগামী নির্বাচনটা চ্যালেঞ্জের হবে। এঅবস্থায় আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী সংগঠন হিসাবে গড়ে তোলার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, আমাদের সংগঠনটা যথেষ্ট শক্তিশালী। সংগঠনটা যেন আরও মজবুত থাকে। সেদিকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সোনালীনিউজ/আইএ