• ঢাকা
  • রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১
প্রভাবশালীদের দখল আর দূষণে 

জীবিত থেকেও যেন মৃত নদী ও খাল! 


শেখ শান্ত, খুলনা ব্যুরো  জুলাই ২০, ২০২৩, ০৩:৩৭ পিএম
জীবিত থেকেও যেন মৃত নদী ও খাল! 

খুলনা: প্রভাবশালীদের মাধ্যমে প্রবাহমান নদী ও খাল দখল। প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করলেও রক্ষা করা যাচ্ছে না এসব নদ, নদী ও খাল। সরকারি হিসেবে খুলনা জেলায় ২ হাজার ২০০ কিলোমিটার সরকারি খাল রয়েছে। এরমধ্যে ৫৬০ কিলোমিটার বা প্রায় ২৫ শতাংশ ভরাট হয়ে বেদখল হয়ে গেছে। নির্মাণ করা হয়েছে নানা স্থাপনা। গ্রামপর্যায়ে এসব সরকারি খাল দখল অথবা ইজারা নিয়ে খন্ডে খন্ডে বিভক্ত করে মাছচাষ করছেন প্রভাবশালীরা। আর শহর ও শহরতলীর সরকারি খাল দখলে নিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে আবাসন প্রকল্প। বাকি খালগুলো ময়লা-আবর্জনা ও দূষণে ধুকছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, খুলনা নগরের বুকচিরে বয়ে যাওয়া ‘ময়ূরনদ’ এখন দখতে অনেকটা বড় খালের মতোই। গত তিনবছরে এ নদ দখল করে নতুন কোনো স্থাপনা গড়ে না তোলা হলেও নদ ভরাট করে যে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছিল, সেগুলো অপসারণ করা হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বছরখানেক আগে থেকেই এই নদে জলজপ্রাণী বেঁচে থাকার মতো দ্রবীভূত অক্সিজেন নেই। ফলে নদ দখলমুক্ত করার সঙ্গে প্রাণ ফিরিয়ে আনার যে দাবি উঠেছিল, তা বাস্তবায়িত হয়নি। প্রভাবশালীরা যেভাবে পেরেছে খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা ও সুবিধাবাদীরা তঞ্চকতার মাধ্যমে নিজ নামে রেকর্ড করে অন্যের নামে বিক্রি করে দেয়। নগরী ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ৫০ খালের মধ্যে ৩টির অস্তিত্ব নেই। আর যা আছে তার ৮০-৯০ শতাংশ অবৈধ দখলে গেছে। এ দখল প্রক্রিয়ার সাথে ৮১ প্রভাবশালী জড়িত।

নগর ও পার্শ্ববর্তী ৪৭ খালের মালিক জেলা প্রশাসন। সিটি কর্পোরেশন এগুলো তদারকি করেন মাত্র। জেলা প্রশাসন ও কেসিসি’র জরিপে অবৈধ দখলে থাকা খালগুলো হচ্ছে ময়ূর নদ, নিরালা খাল, তাবলীগ মসজিদ সংলগ্ন খাল, নিরালা আবাসিক এলাকার পূর্ব পাশের খাল, ছড়িছড়া, মতিয়াখালী, ক্ষুদিয়ার খাল, মিয়াপাড়া পাইপের মোড়, ক্ষেত্রখালী, লবণচরার গোড়ার খাল, লবণচরা ১নং স্লুইচগেট খাল, লবণচরা খান-এ-সবুরের বাগানবাড়ির খাল, বড় বাজার স্টেশন রোড এলাকার ড্রেন, লবণচরা ২নং স্লুইচগেট খাল, নর্থ ব্যাংক খাল, মন্দা, হাজী তমিজউদ্দিন খাল, বাস টার্মিনাল আবাসিক এলাকার খাল, বাস টার্মিনালের পশ্চিম পাশের খাল, তালতলা, তালতলা ইউসুফ স্কুলের দক্ষিণ পাশের খাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পশ্চিম পাশের খাল, ছোট বয়রা শ্মশান ঘাট, বাটকেমারী, হাতিয়া, ডুবি, রায়েরমহল মোল্লাপাড়া, রায়েরমহল বাজার খাল, বাস্তুহারা, দেয়ানা মধ্যস্ত চৌধুরীর খাল, দেয়ানা দক্ষিণপাড়ার খাল, তেঁতুলতলা দশ গেট সংলগ্ন খাল, মাথাভাঙ্গা, সুড়িমারী, খোলাবাড়িয়া, কয়লাতলা, আবাইবুনিয়া, হরিণটানা, মজুমদারের খাল, কাদেরের খাল, চকমুথরাবাদ, বিলপাবলা বাঁশতলা, বিলপাবলা লাইলের খাল, লতা পাহাড়পুর ও বিল পাবলার ক্ষুদে নদী সংলগ্ন খাল।

লবণচরা খালের এক অংশ ভরাট করে কেসিসি’র ৩১নং ওয়ার্ড অফিস, রূপসা সাহেবখালী খালের ওপর কেসিসি’র মার্কেট, পিটিআই মোড়ের খাল বন্ধ করে ২৮নং ওয়ার্ড অফিস, সাবেক মেয়র শেখ তৈয়েবুর রহমানের বাড়ির পেছনে একজন সাবেক ডেপুটি মেয়র প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, বয়রা শ্মশান ঘাটের খালের মুখ বন্ধ করে ইসলামিয়া কলেজ, নগর ভবনের পেছনে খাল বন্ধ করে একজন আইনজীবীর গাড়ির গ্যারেজ নির্মাণ, সোনাডাঙ্গা খালের মুখ বন্ধ করে মহিলা কমপ্লেক্স নির্মাণ ও নবী নগর খাল ভরাট করে আন্ত:জেলা বাস টার্মিনাল ও বাইপাস সড়ক নির্মাণ হয়েছে। খালের মুখ বন্ধ হওয়ায় আষাঢ়-আশ্বিন মাস পর্যন্ত নগরীর একটি বড় অংশে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বর্ষার চার মাস নিম্নাঞ্চলের দুই লাখ মানুষ দুর্ভোগ পোহায়।

নব-নির্বাচিত খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, যেসব খাল দখল করা হয়েছে ওই সব খাল দখলমুক্ত করা হবে।

এছাড়া দখল-দূষণের কবলে থাকা ময়ূর বাঁচাতে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্যনারায়ন চন্দ্র চন্দ বলেন, নিয়ম নীতির না মেনে প্লট ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যে খাল ও ফসলি জমি ভরাট করে বিক্রিও করে দিয়েছে।

ইচ্ছাকৃতভাবে কোন প্লট ব্যবসায়ীরা কৃষি জমি ভরাট করে বিক্রি করতে পারে না এর জন্য গভমেন্ট থেকে অনুমোদন নিতে হবে।

দ্বিতীয়ত কথা এভাবে যদি ফসলি জমি নষ্ট হয় তাতে ভবিষ্যতের জন্য খারাপ হবে। ফুলতলা উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ আকরাম হোসেন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তিনটি ফসলের জমি যেখানে আছে সেখানে ইন্ডাস্ট্রিজ ফ্যাক্টরি বা প্লটের ব্যবসা করা যাবে না। খুলনা ডুমুরিয়া বিল এলাকায়  বছরে চার বার ফসল হয়।

ফসলি জমি ও সরকারি খাল দখল করার অধিকার কাউকে দেয়নি সরকার। সরকারি খাল দখল করলে আইনত অপরাধ আইনকে সহযোগিতা করুন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ফসলি নষ্ট করা যাবে না। দেশকে ভালবাসলে দেশের মানুষকে ভালবাসুন। আসলে জমি রক্ষা করুন।

সোনালীনিউজ/এম
 

Wordbridge School
Link copied!