ঢাকা: ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য ডেডিকেটেড ঘোষণা করা হয় সিটি করপোরেশনের মার্কেটে অস্থায়ী ভাবে গড়ে তোলা ডিএনসিসি হাসপাতাল। হাসপাতালটির অবকাঠামো থাকলেও নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক। শুধু চিকিৎসক সংকট বলা যাবে না। এখানে প্রত্যেকটি ডিপার্টমেন্টেই তীব্র জনবল সংকটে ভুগছে। হাসপাতালটিতে সব মিলিয়ে চিকিৎসক আছেন ৭৭ জন। এর মধ্যে মেডিকেল অফিসার আছেন ৫৪ জন। যা তিন ভাগে ভাগ করলে প্রতি শিফটে চিকিৎসক থাকেন ১৮ জন। হাসপাতালে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকে ৩৫০ থেকে ৩৭০ জন। এই হিসেবে প্রতি ২০ জনের বেশি রোগীর জন্য একজন মেডিকেল অফিসার।
হাসপাতালটিতে আরো অনেক সমস্যার মধ্যে একটি নার্স। একজন চিকিৎসকের বিপরীতে প্রয়োজন ৩ জন নার্স। বর্তমানে হাসপাতালটিতে চিকিৎসক আছেন ৭৭ জন। তাদের বিপরীতে দরকার ২৩১ জন। অথচ নার্স আছে মাত্র ১০৫ জন। এই নার্স তিন শিফটে ভাগ করলে দাঁড়ায় ৩৫ জন। অথচ পুরো হাসপাতালে রোগী আছেন ৩৫০ জন। সেই হিসেবে এক শিফটে প্রতি ১০ জনের জন্য একজন নার্স। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
এই হাসপাতালটিতে তৃতীয় শ্রেণির লোকবল নাই বললেই চলে। আর চতুর্থ শ্রেণী একেবারেই নেই। বর্তমানে স্বল্প সংখ্যক লোকবল দিয়ে আয়া, বুয়া, ওয়ার্ডবয়, হাসপাতাল ক্লিনিংয়ের কাজ চলছে। এই লোকবল ডে ভিত্তিতে নেয়। কিন্তু যে পরিমাণ লোকবল দিয়ে এখন আছে তা দিয়ে হাসপাতাল চালানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে চতুর্থ শ্রেণীর লোকবল বৃদ্ধি করাও সহজ নয়। অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থ ছাড় না হওয়া পর্যন্ত এই লোকবল নিয়োগ দেয়া যাবে না।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, চতুর্থ শ্রেণীর লোকবল নিয়োগের জন্য একটি চাহিদাপত্র স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আবার সেখান থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে যায়। সেখানে অনুমোদনের পর ওপেন টেন্ডার করতে হয়। সেই টেন্ডারের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠান চতুর্থ শ্রেণীর লোকবল সরবরাহ করে। এই পদ্ধতিতে লোকবল নিয়োগ দেয়া বেশ সময়সাদ্ধ বিষয়। তবে একটি চাহিদা পত্র দেয়া হয়েছে। আশা করা যায় লোকবল পাওয়া যাবে।
এসব বিষয়ে হাসপাতালটিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরো হাসপাতালে এখনো অনেক শয্যা খালি পড়ে আছে। আপাতত ৮৪০ শয্যা ব্যবহার করবে হাসপাতালটি। তবে রোগী কম থাকায় এখন পর্যন্ত ৪০০ শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে। ৩৬০ থেকে ৩৭০ জনও ভর্তি থাকছেন হাসপাতালে। কিন্তু লোকবল সংকট থাকার কারণে রোগীদের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।
হাসপাতালটিতে ভর্তি থাকা পুর্ব রামপুরার বাসিন্দা ফারজানা আক্তারী নামের এক রোগী বলেন, এখানে যখন আমি আসি তখন সেন্স ছিলো না। পরে ছিলাম বিছানায়। শুধু স্যালাইন দেয়া হয়েছে আর ওষুধ। ডাক্তারের দেখা দিনে একবার পাওয়া গেছে। নার্সরা এসে শুধু স্যালাইন পরিবর্তন করে দিয়ে গেছেন। নার্সদের ডেকে আনতে হয়েছে। এখানে যেটা দেখলাম নার্স সংকট রয়েছে।
মোহম্মদপুরের বাসিন্দা আসলামুল হকের ছেলে ফাহমিদুল ইসলাম হাসপাতালটিতে ভর্তি ছিলো এক সপ্তাহ। এসময় তিনি বেশ কিছু সমস্যা দেখেছেন। এখানে ল্যাবে লোকবল না থাকায় রিপোর্ট পেতে সময় লাগছে অনেক। হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের ওয়ার্ডে রিপোর্ট পৌঁছে যাওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না।
তিনি বলেন, গোসল ও বাথরুমের অবস্থা খুবই খারাপ। ডেকেও কাউকে পাওয়া যায় না। এতটাই সংকট একজন বা দুই জনকে ২৪ ঘণ্টাই কাজ করতে হচ্ছে। ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতাল ঘোষণা করলেও লোকবল নেই বললেই চলে। সারারাত ডাক্তার যা থাকে তাতে রোগীর জন্য অপ্রতুল। এভাবে একটা চিকিৎসাব্যবস্থা চলতে পারে না।
হাসপাতালটির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক একেএম জহিরুল হোসেন খান সোনালীনিউজকে বলেন, আমরা সীমিত লোকবল নিয়ে এক প্রকার যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি। এখানে মেডিকেল অফিসার আছেন ৫১ জন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন ২২ জন। নার্স আছেন ১০৫ জন। তৃতীয় শ্রেণীর কিছু লোকবল আছে। চতুর্থ শ্রেণীর নেই বললেই চলে।
তিনি বলেন, আমি অসহায় হয়ে পড়েছি। তারপরও রোগীদের জন্য আমরা সর্বোচ্চ করে চলেছি। একজন রোগীও বলতে পারবেন না চিকিৎসা পাচ্ছে না। সবাই চিকিৎসা পাচ্ছেন। কিন্তু লোকবল কম থাকায় হয়তো কেউ কেউ দেরিতে পাচ্ছেন। আমাদের এখানে সুস্থ্যতার হার অনেক বেশি। আমরা সবাই মিলে একটি কম্বাইড চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ডে লেবার ভিত্তিতে আমরা চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী নিয়োগ দিবো। প্রতিদিনের টাকা প্রতিদিন দিয়ে দিতে হবে। তবে এটাও আসবে তৃতীয় কোনো পক্ষ থেকে। এই বিষয়ে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। তবে সমস্যা সমাধানে এখনো কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি।
তিনি আরো বলেন, এই মুহূর্তে আমার চিকিৎসক প্রয়োজন ২০০ জন। এর মধ্যে ১৪০ জন লাগবে মেডিকেল অফিসার। বাকিরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। নার্স দরকার ৩০০ জন। আছে মাত্র ১০৫ জন। আমাদের আইসিইউগুলো চলমান আছে। ল্যাব চলমান আছে। একেজন লোক ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা পর্যন্ত অফিস করছে। এই অবস্থায় লোকবল না বাড়ালে চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যহত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে আশা করি খুব শিগগিরি এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
সোনালীনিউজ/এম