ঢাকা : আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় রাজনীতিতে নানা সমীকরণ শুরু হয়েছে। অপরিচিত দুটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার পর রাজনীতিতে নতুন আলোচনা তৈরি হয়। এর আগে নিবন্ধন পাওয়া তৃণমূল বিএনপি নিয়ে মাঠে খেলা হতে পারে বলে আলোচনা আছে।
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) তৃণমূল বিএনপির কাউন্সিল ঘিরেও গুঞ্জনের ডালপালা বাড়ছে। ইতিমধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য তৈমুর আলম খন্দকার দলটির নেতৃত্বে আসছেন বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
তৃণমূল বিএনপি নেতারা বলছেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদসহ আরও অনেকে বিএনপিতে যোগ দেবেন।
তবে মেজর (অব.) হাফিজ বলেছেন, তৃণমূল বিএনপিতে যোগদানের কোনো ইচ্ছা তার নেই।
এদিকে বিএনপির সাবেক নেতাদের তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু বলেন, ‘পরিত্যক্ত, জনবিচ্ছিন্ন, নীতিনৈতিকতাহীন রাজনীতিবিদরা কে কোথায় যোগদান করলেন, তা নিয়ে ভাবার সময় আমাদের নেই।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূল বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিচ্ছেন। এ ছাড়া বিএনপিদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামানসহ আরও অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) দলটির কাউন্সিলে নেতারা আসতে পারেন।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জুনের মধ্যে নতুন দলের নিবন্ধন বিষয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার কথা ঘোষণা দিয়েছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন। দলটি প্রতীক হিসেবে পাচ্ছে ‘সোনালি আঁশ’।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) নামের অপরিচিত দুটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার পর এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। মূলত সরকার এই দুটি দলকে নিবন্ধন দিয়ে নির্বাচনে আনবে এমন আলোচনা হয় তখন। বিএনএম নামের দলটির প্রধান বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ডা. আবদুর রহমান।
অন্যদিকে বিএসপি নেতা শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমেদ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক তরিকত ফেডারেশনের নেতা ও সংসদ সদস্য নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর চাচাতো ভাই।
এর মধ্যে তৃণমূল বিএনপি নেতা অন্তরা হুদা বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তার দল ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে।
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দলটির কাউন্সিল হবে। সভাপতিত্ব করবেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অন্তরা সেলিম হুদা।
তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মেজর (অব.) হাফিজ সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বলেন, ‘আমি ইতিপূর্বে একাধিকবার এমপি হয়েছি, মন্ত্রী হয়েছি। রাজনীতিতে অনেক কিছু পেয়েছি। এখন অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই, কিংবা কিছু পাওয়ার নেই। যারা কখনো এমপি কিংবা মন্ত্রী হতে পারেননি তারা চেষ্টা করতে পারেন। কেউ যদি বিনা ভোটে এমপি হতে চান, তবে তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন।’
তৃণমূলে যোগদানের বিষয়ে জানতে মেজর (অব.) আখতারুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি দাওয়াত পাইনি। দাওয়াত ছাড়া আবার আমি কোথাও যাই না।’
বিএনপি থেকে অব্যাহতি পাওয়া খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘পদ না থাকলেও বিএনপিতে আছি, বিএনপিতেই থাকব। অন্য কোথাও কেউ আমাদের ডাকবে না। আমারও যাওয়ার ইচ্ছা নেই। শেষ পর্যন্ত বিএনপিতেই থাকব।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘শরীরের চেয়ে মাথা বড় হয়ে গেলে সে মাথা কোনো কাজে আসে না। ইতিহাস বলে বিএনপি থেকে চলে যাওয়া কিংবা বহিষ্কৃত, অব্যাহতি পাওয়া নেতারা অতীতে কখনো রাজনীতিতে জায়গা করতে পারেনি। আগামী দিনেও রাজনীতিতে তারা জায়গা করে নিতে পারবে না।’
তৃণমূল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হুদা। তিনি ১৯৯১ ও ২০০১ সালে দুই দফায় খালেদা জিয়ার সরকারে মন্ত্রী ছিলেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় ২০১২ সালে নাজমুল হুদা বেরিয়ে যান এবং বিএনএফ (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট) নামে নতুন দল গঠন করেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে দলটি অংশ নিয়ে একটি আসন পায়। পরে নাজমুল হুদাকে বহিষ্কার করেন দলটির প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ।
এরপর বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (বিএনএ) এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি (বিএমপি) নামে দুটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন নাজমুল হুদা। এরপর ‘তৃণমূল বিএনপি’ গঠন করেন তিনি।
২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে নির্বাচন কমিশন নবম সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু করে। সর্বশেষ ৪৪টি দল নিবন্ধন পায়। এর মধ্যে ৫টি দলের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় বর্তমানে নিবন্ধিত রয়েছে ৩৯টি দল। তৃণমূল বিএনপিসহ নতুন তিনটি দল নিবন্ধন পাওয়ায় নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২।
এমটিআই