• ঢাকা
  • শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১
৩ অক্টোবর পর্যন্ত বিএনপি ও সমমনাদের টানা কর্মসূচি

রাজপথের আন্দোলনেই চূড়ান্ত ফয়সালা


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৩, ০৫:৩২ পিএম
রাজপথের আন্দোলনেই চূড়ান্ত ফয়সালা

ঢাকা : একদফা দাবিতে টানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামছে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোট। আজ থেকেই রোডমার্চ ও সমাবেশের কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। বিএনপির এ কর্মসূচি চলবে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত।

সরকারের পদত্যাগসহ নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায়ের এ কর্মসূচিকে চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রথম ধাপ বলছেন নেতারা। এই দাবিতে গত জুলাই থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি ও সমমনারা।

এছাড়া একই দাবিতে গতকাল ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ ও পদযাত্রার চার দিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ।

মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ ও গাজীপুরের টঙ্গীতে সমাবেশের মধ্য দিয়ে ধারাবাহিক এ কর্মসূচি শুরু হবে।

রাজধানীসহ প্রবেশপথে ৮ সমাবেশ ও ছয় সাংগঠনিক বিভাগে ৫টি রোডমার্চ করা হবে।

এছাড়া ঢাকায় পৃথকভাবে পেশাজীবী, মহিলা, শ্রমিক ও কৃষক-চারটি সমাবেশ হবে।

সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

কর্মসূচি সফলে সিনিয়র নেতাদের দিয়ে পৃথক টিম করেছে বিএনপি। শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এমনকি সরকারদলীয় কারও উসকানিতে পা না দেওয়ার জন্যও বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে বিএনপির সঙ্গে যুগপতে না থাকলেও তাদের সঙ্গে মিল রেখে কর্মসূচি দেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ তিন দফা দাবিতে আজ দেশের সব মহানগরীতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে।

সূত্রমতে চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রথম ধাপের কর্মসূচি থেকে সরকারের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করবে বিএনপি। সরকার কঠোর হলে দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচিও কঠোর হবে। প্রথম ধাপ শেষে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচি পালনের চিন্তা করছে দলটি। এ ধাপে হরতাল-অবরোধের মতো ভিন্ন নামে কর্মসূচির প্রস্তাব করেছেন নীতিনির্ধারকরা।

নেতারা জানান, কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে রাজধানী ও এর আশপাশের জেলাকে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে মাঠে থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে। একই ধরনের নির্দেশনা সারা দেশের সব সাংগঠনিক জেলায় পাঠানো হয়েছে।

প্রথম দফায় টানা কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-মঙ্গলবার (আজ) ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ ও গাজীপুরের টঙ্গীতে সমাবেশ হবে। কেরানীগঞ্জে মির্জা আব্বাস ও ড. আব্দুল মঈন খান এবং টঙ্গীতে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী অতিথি হিসাবে থাকবেন।

২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে শুরু করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার হয়ে সিলেটে রোডমার্চ। এতে নেতৃত্ব দেবেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরে যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ। যাত্রাবাড়ীতে মির্জা আব্বাস ও ড. আব্দুল মঈন খান এবং উত্তরায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অতিথি হিসাবে থাকবেন। একইদিন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আশুরোগ মুক্তি কামনায় বাদ জুমা সারা দেশে জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে দোয়া।

২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে শুরু করে ঝালকাঠি, পিরোজপুর হয়ে পটুয়াখালী পর্যন্ত রোডমার্চ। এতে নেতৃত্ব দেবেন নজরুল ইসলাম খান ও বেগম সেলিমা রহমান।

২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরের নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ। নয়াবাজারে নজরুল ইসলাম খান এবং আমিনবাজারে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও বেগম সেলিমা রহমান থাকবেন।

২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগে রোডমার্চ। এতে নেতৃত্ব দেবেন মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী কনভেনশন। এতে থাকবেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ড. আব্দুল মঈন খান।

২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরের গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ। গাবতলীতে নজরুল ইসলাম খান ও বেগম সেলিমা রহমান এবং ফতুল্লায় ড. আব্দুল মঈন খান ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী অতিথি হিসাবে থাকবেন।

২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মহিলা সমাবেশে থাকবেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও বেগম সেলিমা রহমান।

৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় শ্রমজীবী কনভেনশনে থাকবেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস ও নজরুল ইসলাম খান। পহেলা অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জে রোডমার্চের নেতৃত্ব দেবেন ড. আব্দুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান।

২ অক্টোবর ঢাকায় কৃষক সমাবেশে থাকবেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। সবশেষ ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে শুরু হয়ে ফেনী, মীরসরাই হয়ে চট্টগ্রামে রোডমার্চ। এতে নেতৃত্ব দেবেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যুগপৎ আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দল ও জোট নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। যতগুলো করতে পারবেন তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে ঘোষণা করবেন।

তিনি বলেন, আমরা ছাত্রজীবনে আন্দোলন করেছি। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। সুতরাং আন্দোলন কখন কোনদিকে মোড় নেবে সেটা একমাত্র রাস্তাই বলে দেবে। কোনো সরকারই টিকে থাকতে পারে না জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে। এই সরকারও টিকে থাকতে পারবে না।

‘তৃণমূল বিএনপিতে’ বিএনপির সাবেক দুই নেতার যোগ দেওয়ার গুঞ্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, তৈমূর আলম খন্দকার ও শমসের মবিন চৌধুরী বিএনপির সদস্য নন। তারা তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তারা আরেকটা দল করতেই পারেন। বিএনপি একটি বিশাল রাজনৈতিক দল। এই দলে এমন খড়কুটো অনেক এসেছে আবার চলে গেছে। এতে বিএনপির কিছু যায়-আসে না।

পরে অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। আন্দোলনরত সব দল কর্মসূচিকে সমর্থন জানাবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, তাইফুল ইসলাম টিপু, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন ও শহিদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ।

প্রথম দিনে আজ টঙ্গী ও কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরায় দুটি সমাবেশ করবে বিএনপি। এ লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি।

ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুন রায় চৌধুরী বলেন, কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরা পার্টি অফিসের সামনে দুপুর ২টায় সমাবেশ হবে। এ লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ব্যাপক জনসমাগম হবে বলে আশা করছি।

রোডমার্চ ও সমাবেশ সফলে পৃথক টিম গঠন : পাঁচটি রোডমার্চ ও রাজধানীসহ এর প্রবেশপথে সমাবেশ সফলে পৃথক টিম গঠন করেছে বিএনপি। প্রতিটি টিমে একজন প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা, দলনেতা, সদস্য ও সমন্বয়কারীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ভৈরব থেকে সিলেট পর্যন্ত রোডমার্চ বাস্তবায়নে অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেনকে প্রধান উপদেষ্টা ও হাবিব উন নবী সোহেলকে দলনেতা; বরিশাল থেকে পটুয়াখালী পর্যন্ত রোডমার্চ বাস্তবায়নে বেগম সেলিমা রহমান প্রধান উপদেষ্টা ও ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরসহ পাঁচ সিনিয়র নেতাকে উপদেষ্টা; খুলনা বিভাগের রোডমার্চ বাস্তবায়নে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে প্রধান উপদেষ্টা ও শামসুজ্জামান দুদুসহ তিন সিনিয়র নেতাকে উপদেষ্টা; ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জের রোডমার্চ বাস্তবায়নে নজরুল ইসলাম খানকে প্রধান উপদেষ্টা ও সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে দলনেতা; কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামের রোডমার্চে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে প্রধান উপদেষ্টা ও আব্দুল্লাহ আল নোমানসহ চার সিনিয়র নেতাকে উপদেষ্টা করে টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া আট সমাবেশ সফল করতে মির্জা আব্বাসকে প্রধান উপদেষ্টা ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে উপদেষ্টা করে টিম গঠন করা হয়েছে।

ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসাবে ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ ও পদযাত্রার চার দিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। সোমবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করে এই জোট। কর্মসূচি হচ্ছে-আজ (মঙ্গলবার) বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ৩টায় ঢাকার কাওরানবাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা। এছাড়া ৩ অক্টোবর পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভা হবে। সেসব সেমিনার ও আলোচনা সভার তারিখ, স্থানসহ বিস্তারিত পরবর্তী সময়ে জানানো হবে।

সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম তাদের জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, ‘একদফা ঘোষিত হওয়ার পর যুগপৎ আন্দোলনের বার্তাটি খুব পরিষ্কার, অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে হবে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার রাস্তা খুলে দিতে হবে। আমরা মনে করি, চরম কর্তৃত্ববাদী বর্তমান সরকারের বিদায় নিশ্চিত করতে হবে, যাতে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিমূলক ও মানবিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠা করা যায়।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন-নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সহসভাপতি তানিয়া রব, সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন প্রমুখ।

বিএনপির সঙ্গে মিল রেখে ইতোমধ্যে কর্মসূচি দিয়েছে গণফোরাম (মন্টু) ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি। এছাড়া যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপিসহ সমমনা দলগুলোও ৩ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকাকেন্দ্রিক ধারাবাহিক কর্মসূচি দেবে বলে জানা গেছে।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!