• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

রাজনীতির টার্নিং মাস অক্টোবর, উত্তপ্ত হচ্ছে রাজপথ


বিশেষ প্রতিনিধি অক্টোবর ২, ২০২৩, ০১:২৩ পিএম
রাজনীতির টার্নিং মাস অক্টোবর, উত্তপ্ত হচ্ছে রাজপথ

ঢাকা : দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অক্টোবর মাস বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক দল এবং বিশ্লেষকদের কাছে।

একদিকে বিরোধী দলগুলো যেমন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগেই আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের দাবি আদায় করতে চাইছে, অন্যদিকে, সরকার বা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অনড় অবস্থানে থেকেই নির্বাচন সম্পন্ন করতে চাইছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানে আপাত কোন আপোষ বা পরিবর্তনের ইঙ্গিত তারা দেখছেন না। ফলে শেষ পর্যন্ত ঠিক কী হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।

সামনের বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। সেই হিসাবে তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে নভেম্বর মাসে। কিন্তু নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে সরকার এবং বিরোধীদলগুলোর মধ্যে মতবিরোধের এখনো কোন সমাধান হয়নি। ফলে রাজনৈতিকভাবে অক্টোবর মাসটি হয়ে উঠেছে তাৎপর্যপূর্ণ।

গবেষক এবং রাজনীতি বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন অক্টোবর নিয়ে এক ধরণের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

তার মতে, দুই পক্ষ থেকেই নানান আল্টিমেটাম দেয়া হচ্ছে। কেউ তো তার অবস্থান থেকে নড়ছে না। এর মধ্যেই ভিসা স্যাংশনের মতো ঘটনা ঘটে গেছে। বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়া নিয়ে একটি ইস্যু তৈরি হয়েছে। ফলে পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ঘোলাটে হয়ে উঠেছে। অক্টোবর মাসেই পরিস্থিতির আরেকটু মেরুকরণ হয়ে উঠতে পারে। এ কারণেই সবাই যার যার অবস্থান থেকে কথা বলছেন। সবমিলিয়ে আমি বলবো একটা অনিশ্চিত অবস্থার তৈরি হয়েছে।

বিএনপির নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যাচ্ছে, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে তারা আরও জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলতে চান, যাতে সরকারকে একটি সমাধানে আসতে বাধ্য করা যায়।

কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে তাদের যে রোডমার্চ রয়েছে, সেখান থেকেই সেই আন্দোলনের ঘোষণা আসতে পারে। বিশেষ করে ঢাকা অভিমুখে রোডমার্চ, জনসভা, অবরোধ কর্মসূচি তাদের বিবেচনায় রয়েছে। যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে দলটি।

বিএনপির নেতারা মনে করেন, অতীতে তাদের আন্দোলনে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দমন অভিযান থাকলেও, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার ইস্যুর কারণে এবার তাদের সেরকম কোন কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে না।

আবার বিএনপির আন্দোলনে কোনরকম অভিযান চালানো হলে বা চাপ প্রয়োগ করা হলেও সেটাকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে নিজেদের নির্যাতিত হিসাবে তুলে ধরার সুযোগ তৈরি করে দেবে তাদের। ফলে তফসিল ঘোষণার আগেই নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলতে চায় বিএনপি।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, অক্টোবর মাস বলে কথা নয়, বাংলাদেশের মানুষ তো আর একদিনও অপেক্ষা করতে রাজি নয়। মানুষের ধৈর্যের বাধ ভেঙে গেছে। আমরা সেভাবেই জনগণকে সাথে নিয়ে এগোচ্ছি।

তিনি মনে করেন তাদের আন্দোলনে এর মধ্যেই গতি সঞ্চার হয়ে গেছে। তবে আন্দোলনের সফলতা সম্পর্কে তার মন্তব্য হচ্ছে, কবে (আন্দোলন) সফল হবে, সেটার তো আর দিনক্ষণ বলা যাবে না। আন্দোলনের গতি ক্রমান্বয়ে বাড়তেই থাকবে, আন্দোলনের নিয়মই তো তাই।

নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, বিএনপির আন্দোলন ঠেকাতে রাজনৈতিকভাবে অবস্থান নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। গত কয়েক মাসে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচীর বিপরীতে আওয়ামী লীগকেও পাল্টা কর্মসূচী দিতে দেখা গেছে। ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা পরিষ্কারভাবেই বলে দিয়েছেন, বিরোধীদলের আন্দোলন তারা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করবেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ঢাকায় এক সমাবেশে বিএনপিকে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেছেন, সামনে নভেম্বর, তারপরে ডিসেম্বর, তারপরে জানুয়ারি, ফাইনাল খেলা। খেলা হবে। প্রস্তুত হয়ে যান, নেত্রী আসছেন। আপনাদের ডাক দিবেন, যখনই ডাক দেবেন রাস্তায় নেমে আসতে হবে। যারা রাস্তা দখল করতে আসবে তাদের খবর আছে। যারা আগুন নিয়ে আসবে তাদের হাত আগুন জ্বালিয়ে দেব, যারা মারতে আসবে তাদের হাত ভেঙে দেব।

রাজপথের আন্দোলন নিয়ে তিনি বলেন, সেপ্টেম্বর অক্টোবর তো চলেই গেল। তারা রাজপথ দখল করতে পারবে না বাংলার মানুষ তাদের সঙ্গে নেই।

আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, যথাসময়ে নির্বাচন হওয়ার ব্যাপারে তারা বদ্ধপরিকর। সেক্ষেত্রে যেকোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে রাজনৈতিকভাবে সেটা মোকাবেলা করা হবে।

যদিও গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি ঘোষণা এবং সেপ্টেম্বর মাসে বিধিনিষেধ কার্যকর করার ঘোষণা এসেছে। ফলে সরকার এ ধরনের চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বিশেষ করে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের তুলনায় এবারের পরিস্থিতি বেশ ব্যতিক্রম বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। কারণ এই নির্বাচনের আগে থেকেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কড়া নজর ও বক্তব্য দেখা যাচ্ছে। এটিও সরকারের ওপর এক ধরনের চাপ তৈরি করেছে।

এদিকে, অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে কারও অবস্থানের কোনরকম পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। এর মধ্যে অনেক দিন নিষ্ক্রিয় থাকার পর জামায়াতে ইসলামী আবার রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। রবিবার তারা ঢাকায় মিছিল করেছে।

এছাড়া বামপন্থী এবং ডানপন্থী বিভিন্ন ছোট ছোট দল তাদের কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সবার নজর রয়েছে মূলত প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির দিকে।

একদিকে আওয়ামী লীগ মনে করছে, নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন হতে হবে এবং সেটা হবে সংবিধান অনুসারে। সেজন্য রাজনৈতিকভাবে তারা যা করার করবে।

অন্যদিকে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে দেশের ভেতরে আন্দোলন আরও জোরালো করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে বিএনপি।

লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলছেন, সবমিলিয়ে আমি বলবো, একটা অনিশ্চিত অবস্থা। ভেতরে ভেতরে যাই ঘটুক, বাইরে কেউ কিছু প্রকাশ করছে না। তবে এটা পরিষ্কার, আওয়ামী লীগের সব কিছু নির্ভর করছে শেখ হাসিনার ওপরে।

অন্যদিকে বিএনপি মনে করে, একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন হলেই তারা ক্ষমতায় চলে আসবে। কিন্তু কোনোরকম সমঝোতা হওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না, কেউ কোন ছাড়ও দিতে চাইছে না। হয়তো আর কিছুদিন পরে বিষয়গুলো একটু পরিষ্কার হলেও হতে পারে। আর কোন ধরণের রাজনৈতিক সমঝোতার সুযোগ তৈরি হওয়ার জন্যও অক্টােবর গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!