ঢাকা: আগামী ২ নভেম্বর শুরু হবে সংসদ নির্বাচনের কাউনডাউন। এর আগেই প্রশাসনে উপ সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতি দিতে আদাজল খেয়ে নেমেছে সরকার। এজন্য গত সপ্তাহে চলেছে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) ম্যারাথন বৈঠক।
সোমবার (৯ অক্টোবর) থেকে আবারও শুরু হবে এই বৈঠক। যদিও মাত্র ৪ মাস আগে অতিরিক্ত সচিব এবং ১১ মাস আগে উপসচিব পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ও পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তারা এরই মধ্যে জোর লবিং শুরু করছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৪ এপ্রিল উপসচিব পদে পদোন্নতির যোগ্য অন্যান্য ক্যাডার কর্মকর্তার তালিকা চেয়ে মন্ত্রণালয়গুলোতে চিঠি দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। চিঠিতে বলা হয়, উপসচিব পদে পদোন্নতির যোগ্য বিসিএস ২৯তম ব্যাচ পর্যন্ত যেসব কর্মকর্তা সিনিয়র স্কেল পদে ন্যূনতম পাঁচ বছর চাকরিসহ সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের সদস্য হিসেবে অন্যূন ১০ বছর চাকরি পূর্ণ করেছেন, তাদের মধ্যে জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে ১০ জনের তালিকা সংযুক্ত ছকে পাঠাতে হবে। এরপর বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে তালিকা আসে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে।
তালিকার তথ্যানুযায়ী, ২৯ ব্যাচের বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের পদোন্নতি যোগ্য কর্মকর্তা রয়েছে ১৯৯ জন। অন্যান্য ক্যাডার থেকে প্রশাসনের উপসচিব পদে পদোন্নতি যোগ্য আবেদন করেছেন ২৪১ জন কর্মকর্তা। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে পদোন্নতি বঞ্চিত যোগ্য কর্মকর্তা রয়েছেন ৫৪ জন। সব মিলিয়ে ৫৯৪ জন কর্মকর্তা এবারের পদোন্নতির যোগ্য রয়েছেন। এসকল কর্মকর্তাদের কর্মজীবনের সব নথিপত্র পর্যালোচনা করতে গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে বৈঠক শুরু করে এসএসবি। এরপর চলতি মাসের ১ থেকে ৫ পর্যন্ত ম্যারথন বৈঠক করে এসএসবির সদস্যরা।
এমন ম্যারাথন বৈঠক গত কয়েক বছরে দেখা যায়নি বলে সংর্শ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। উপসচিব পদোন্নতির তালিকা চূড়ান্ত করতে আজও বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। উপসচিব পদোন্নতি চুড়ান্ত হলে অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতি বিষয়ে পর্যালোচনা শুরু হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানায়, গত ১২ মে নিয়মিত ১৭ ব্যাচসহ বঞ্চিত ১১৪ জন যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
এর মাত্র চার মাসের মাথায় আবারও অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতির জন্যও চলছে জোর তোড়জোড়। নির্বাচনের পরে কি পরিস্থিতি হবে তা পরিষ্কার নয়। এজন্য এই ব্যাচের কর্মকর্তারা নির্বাচনের আগেই নিজেদের পদোন্নতি নিশ্চিত করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন সচিব এবং এসএসবির সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে তদবির চালাচ্ছেনা।
এবারের অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতিতে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে প্রশাসন ক্যাডারের ১৮ ব্যাচের কর্মকর্তাদের। এই ব্যাচের পদোন্নতি যোগ্য নিয়মিত কর্মকর্তা রয়েছেন ১১৪ জন। অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তা রয়েছেন ২৮ জন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তা রয়েছেন ১১৪ জন। সর্বমোট ২৫৪ জন কর্মকর্তা এবারের পদোন্নতি যোগ্য রয়েছেন। খুব শীঘ্রই তাদের বাছাই করতে এসএসবির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পদ না থাকলেও দুই স্তরে পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। এবার উপসচিব এবং অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে প্রশাসনে সিনিয়র সচিব/সচিবের ৬৯টি পদে কর্মরত রয়েছেন ৮৩ জন। অতিরিক্ত সচিবের ১৪০টি পদে রয়েছেন ৩৮৭ জন। যুগ্ম সচিবের পদ ৩৩২টি, আছেন ৯৩৯ জন। ৪৩০টি সুপারনিউমারারি পদসহ উপসচিবের অনুমোদিত পদ ১ হাজার ৪২৮টি, কর্মরত আছেন ১ হাজার ৪৭৭ জন। সিনিয়র সহকারী সচিব পদে ২ হাজার ১৪৪ জন কর্মরত থাকলেও অনুমোদিত পদের সংখ্যা ২ হাজার ৯৭৫। আর সহকারী সচিব পদে কর্মরত রয়েছেন ১ হাজার ১৪৯ জন, যেখানে পদের সংখ্যা ১ হাজার ৩৯৩।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রয়োজনীয়সংখ্যক পদ না থাকা সত্তে¡ও প্রশাসনে পদোন্নতির প্রক্রিয়া নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। এভাবে পদোন্নতি দেওয়ায় প্রশাসনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে পদবঞ্চিতদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে। প্রশাসনের নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিধিমালাও মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তারা।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দীন আহমদ বলেন, পদোন্নতির মাধ্যমে কর্মকর্তাদের কাজে গতিশীলতা আসে। যোগ্যতা থাকার পরও পদোন্নতি না পেলে হতাশা সৃষ্টি হয়। এ জন্য কর্মকর্তাদের নিয়মিত পদোন্নতি হওয়া উচিত। তবে প্রয়োজন অনুযায়ী পদও সৃষ্টি করা দরকার।
এআর