• ঢাকা
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিত নেই রাজনৈতিক দলগুলোর


বিশেষ প্রতিনিধি অক্টোবর ১৪, ২০২৩, ১০:০৬ পিএম
অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিত নেই রাজনৈতিক দলগুলোর

ঢাকা : দিন যত যাচ্ছে ঘনিয়ে আসছে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ লক্ষ্যে তোড়জোড়ও শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংবিধান ও ইসির ঘোষণা অনুযায়ী আগামী জানুয়ারি মাসে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য রোডম্যাপও তৈরি করেছে ইসি। 

নির্বাচন সামনে রেখে আসন পুনর্বিন্যাস, নির্বাচনী কর্মকর্তা ও সারা দেশের তিনশ সংসদীয় আসনে ৪২ হাজার ৩৫০টি পোলিং সেন্টারের খসড়া তালিকাও সম্পন্ন হয়েছে। নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। এরপরই আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করবে নির্বাচন কমিশন।

এদিকে বিরোধী দলগুলো যেমন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগেই আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের দাবি আদায় করতে চাইছে, অন্যদিকে সরকার বা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের অবস্থানে অনড়। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানে আপাত কোনো আপস বা পরিবর্তনের ইঙ্গিত তারা দেখছেন না। ফলে শেষ পর্যন্ত ঠিক কী হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।

নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনিছুর রহমান বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে চলতি বছরের নভেম্বর মাসে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সব দলের অংশগ্রহণের আশা করছে নির্বাচন কমিশন। 

নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘সব দলের অংশগ্রহণ কিন্তু আমাদের ওপর নির্ভর করে না। দলের অংশগ্রহণ নির্ভর করে দলের সিদ্ধান্ত, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর। এতে আমাদের এখতিয়ার নেই। তবে আমরা নির্বাচনের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করব। আমাদের দেড় বছর পার হয়েছে। শুরু থেকেই নির্বাচনের পরিবেশের জন্য আমরা সকল দলকে একাধিকবার আহ্বান জানিয়ে আসছি। এখনো আহ্বান জানাচ্ছি তারা যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও অবাধ হয়।’ 

নির্বাচন নিয়ে বিএনপির আন্দোলনের বিষয়ে আনিছুর রহমান বলেন, ‘এটা তাদের রাজনৈতিক বিষয়, এতে আমাদের এখতিয়ার নেই। তবে বিএনপিকে আমরা বহুবার ডেকেছি। এখনো বিএনপির জন্য আমাদের দরজা খোলা আছে। তারা যদি আসতে চায়, আমরা ওয়েলকাম করব। আশা করছি এগুলোর সবকিছু সমাধান হয়ে যাবে। কারণ আমরা চাই সবাই মিলে অংশগ্রহণমূলক একটা নির্বাচন হোক। জাতিরও প্রত্যাশা তাই।’

গবেষক এবং রাজনীতি বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গনে অক্টোবর নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। দুই পক্ষ থেকেই নানান আল্টিমেটাম দেওয়া হচ্ছে। কেউ তার অবস্থান থেকে নড়ছে না। এর মধ্যেই ভিসা স্যাংশনের মতো ঘটনা ঘটে গেছে। বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়া নিয়ে একটি ইস্যু তৈরি হয়েছে। ফলে পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ঘোলাটে। অক্টোবর মাসেই পরিস্থিতির আরেকটু মেরুকরণ হয়ে উঠতে পারে। এ কারণেই সবাই যার যার অবস্থান থেকে কথা বলছেন। সব মিলিয়ে আমি বলব একটা অনিশ্চিত অবস্থা তৈরি হয়েছে।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হবে। এর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ ব্যয় হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়। গত ৪ অক্টোবর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। সেখানে নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি সম্ভাব্য ব্যয়ের হিসাবও তুলে ধরা হয়। 

এবারের নির্বাচনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং পোলিং কর্মকর্তাদের দুই দিনের সম্মানী ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগে তাদের এক দিনের ভাতা দেওয়া হতো। পাশাপাশি জ্বালানি খরচও এবার আরও বাড়বে। 

বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে তারা আরও জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলতে চান, যাতে সরকারকে একটি সমাধানে আসতে বাধ্য করা যায়। বিশেষ করে ঢাকা অভিমুখে রোডমার্চ, জনসভা, অবরোধ কর্মসূচি তাদের বিবেচনায় রয়েছে। যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে দলটি। 

বিএনপির নেতারা মনে করেন, অতীতে তাদের আন্দোলনে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দমন অভিযান থাকলেও, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার ইস্যুর কারণে এবার সেরকম কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী মনে করেন তাদের আন্দোলনে এর মধ্যেই গতি সঞ্চার হয়েছে।  বিএনপির সিনিয়র নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, কোনো ধরনের আক্রমণাত্মক পথে না গিয়ে একের পর এক কর্মসূচির মাধ্যমে তারাও একই পরিস্থিতি তৈরি করবেন, যাতে সরকার গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রশ্নে সমঝোতায় বাধ্য হয়।

নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, বিএনপির আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। গত কয়েক মাসে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচির বিপরীতে আওয়ামী লীগকেও পাল্টা কর্মসূচি দিতে দেখা গেছে। ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা পরিষ্কারভাবেই বলে দিয়েছেন, বিরোধী দলের আন্দোলন তারা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করবেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকার প্রস্তুতি নিচ্ছে। 

বিএনপিকে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেছেন, “সামনে নভেম্বর, তারপর ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফাইনাল খেলা। খেলা হবে।” 

রাজপথের আন্দোলন নিয়ে তিনি বলেন, সেপ্টেম্বর অক্টোবর তো চলেই গেল। তারা রাজপথ দখল করতে পারবে না, বাংলার মানুষ তাদের সঙ্গে নেই। যদিও গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি এবং সেপ্টেম্বর মাসে বিধিনিষেধ কার্যকর করার ঘোষণা এসেছে। ফলে সরকার এক ধরনের চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের তুলনায় এবারের পরিস্থিতি বেশ ব্যতিক্রম বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!