ঢাকা : সরকার পতনের একদফা দাবিতে ২৮ অক্টোবর শনিবার ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। সঙ্গে রয়েছে তাদের মিত্ররাও। এই কর্মসূচি সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো।
অন্যদিকে বিএনপির মহাসমাবেশ মোকাবিলায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন সরকারের শেষ সময়ে এসে এই মহাসমাবেশ হতে পারে বিএনপির মরণকামড়।
এদিন সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কাও করছেন তারা। বিশেষ করে বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের রোববারের সাক্ষাৎ শাসক দলের নেতাকর্মীরা সন্দেহের চোখে দেখছেন। এর পেছনে কী কারণ থাকতে পারে তা জানার চেষ্টা করছেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা এ তথ্য জানিয়েছেন।
সোমবার (২৩ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টির ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে ২৮ অক্টোবর তথাকথিত সমাবেশের নামে বিএনপি জনমনে ভীতি সঞ্চার করছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শান্তিকামী জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করবে। আওয়ামী লীগের নেতাকার্মীরা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ও স্থিতিশীল পরিবেশ কোনোভাবে ব্যাহত হতে দেবে না।
ওবায়দুল কাদের জনগণের স্বাধীনতা, মুক্তি এবং গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আওয়ামী লীগের অজস নেতাকর্মী আত্মত্যাগ করেছে জানিয়ে বলেন, এবার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন-অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির অভিযাত্রাকে সমুন্নত রাখতে দলের নেতাকর্মীরা যে কোনো আত্মত্যাগের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
এদিকে ঢাকায় ২৮ অক্টোবর বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি নিয়ে শাসক দলের সাধারণ সম্পাদকের শঙ্কা প্রকাশ ও সতর্কতার পরের দিনই লাঠি কেড়ে নিয়ে পেটানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবেদীন ফারুক।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণতান্ত্রিক ফোরাম আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি আওয়ামী লীগকে ইঙ্গিত করে বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, যখন দেওয়ালে আমার পিঠ ঠেকেছে, লাঠির আঘাত আমার মাথায় এলে অবশ্যই সেই লাঠি কেড়ে নিয়ে তাকে পেটাতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা ১৭ জন সহকর্মী হারিয়েছি। দরকার হলে ২৮ তারিখ আরও ১৭ হাজার জীবন দেব। তবুও আপনাদের (আওয়ামী লীগ সরকারকে) ক্ষমতায় থাকতে দেব না।
তারেক রহমান (বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) বলেছেন, তিনি এই দেশে আর মৃত ভোট দেখতে চান না। ২৮ তারিখ (শনিবার) মহাযাত্রা শুরু হবে, সেই যাত্রায় এই স্বৈরাচার সরকারের পতন হবে।
বিএনপির নেতার এই হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) বলেন, আমরা সংঘাত-সহিংসতা আশা করি না। তারপরও ২৮ অক্টোবর বিএনপি যদি এ রকম কিছু করতে চায় তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি দেখবে। আর জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আমরাও আমাদের দায়িত্ব পালন করব।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য আবদুর রহমান বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে যদি সংঘাত-সহিংসতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হয় তাহলে অবশ্যই তা প্রতিহত করবে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এছাড়া তাদের প্রতিহত করতে আমরাও প্রস্তুত থাকব।
বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংঘাত ও সহিংসতার আশঙ্কা করছেন কিনা জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ মঙ্গলবার বলেন, যে কোনো রাজনৈতিক দল শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করলে সরকার সহযোগিতা করবে। কিন্তু তা না করে সংঘাত-সহিংসতার সৃষ্টি করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা প্রতিহত করবে। বিএনপি নেতা জয়নুল আবেদীন ফারুকের ‘লাঠি কেড়ে নিয়ে পেটানো’ বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহাসমাবেশ উপলক্ষ্যে বিএনপি সারা দেশের নেতাকর্মীদের ঢাকায় ডেকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে এমন আশঙ্কা তারা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। এমনকি তারা (বিএনপি) আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিও ঘটাতে পারে।
শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির কথা বললেও সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বিএনপির কর্মীরা হঠাৎ কিছু করে বসতে পারে-সে আশঙ্কাও করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
সেজন্য ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত পাড়ায়-মহল্লায় সতর্ক অবস্থানে থেকে পাহারা দিতে নেতাকর্মীদের বলা হয়েছে।
শাসক দলের নেতারা আরও জানান, এই ধরনের পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয়-সেজন্য সন্দেহজনক কাউকে দেখলে তাকে পুলিশে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এমটিআই