• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

জামায়াতের সক্রিয়তায় সংঘাতের শঙ্কা


বিশেষ প্রতিনিধি অক্টোবর ২৬, ২০২৩, ১২:৪৬ পিএম
জামায়াতের সক্রিয়তায় সংঘাতের শঙ্কা

ঢাকা : সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ২৮ অক্টোবর রাজধানী ঢাকায় বিএনপি এবং সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো মহাসমাবেশ ডেকেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও ওইদিন সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। বড় দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তপ্ত।

একই দিনে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মতিঝিলের শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশের ঘোষণা দেওয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ আরও ছড়িয়েছে। মহাসমাবেশ ঘিরে জনমনে শঙ্কা বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। মহাসমাবেশ সফল করতে যা যা করার দরকার, সবই করা হবে বলে জানিয়েছেন জামায়াত নেতারা।

২৮ অক্টোবরের কর্মসূচির কথা শুনে অনেকের মনে পড়ে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের লগি-লাঠি-বৈঠার আন্দোলনের কথা। সে সময় পুরানা পল্টন এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল।

রাজধানীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ঘিরে সংঘর্ষের আশঙ্কার বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আমরা শঙ্কার কিছু দেখি না। শঙ্কা দেখে তারাই যাদের প্রতি জনসমর্থন নেই। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করব। বিগত সময়ে আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছি। মহাসমাবেশ সফল করতে আমরা সব প্রস্তুতি নিয়েছি। আশা করছি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের সহযোগিতা করবে। তবে পুলিশ যা বলছে তা তাদের এখতিয়ারবহির্ভূত।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। বিশ্বের বন্ধুপ্রতিম গণতান্ত্রিক দেশগুলোও বলছে, সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ নির্বাচন করতে। কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠা ও কারাবন্দি নেতাদের মুক্তির দাবিতে আমরা বড় ধরনের শোডাউন করতে চাই। দেশবাসীকে এবং বিশ^বাসীকে দেখাতে চাই জনগণ এ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় না। কারণ তারা গত দুটি নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি।’

বুধবার (২৫ অক্টোবর) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিবন্ধনহীন রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী। তাদের শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। এমন বক্তব্যের পর জামায়াত নেতারা বলেছেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি পালনে সহযোগিতা করা। বাধা দেওয়া নয়।’ তারা সংবিধান মেনে চলবে বলে আশা করেন জামায়াত নেতারা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসছে। নভেম্বরে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করবে। এ অবস্থায় কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠায় এমন আন্দোলন কেন? সরকার দেশি-বিদেশি নানা চাপে রয়েছে। হঠাৎ জামায়াতে ইসলামী ২৮ অক্টোবর কর্মসূচি ঘোষণা করল কেন?

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম গতকাল বলেন, ‘নির্বাচন উপলক্ষে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে নামে। তাছাড়া এ সরকারের ওপর মানুষ ক্ষুব্ধ। জনগণের দাবি আদায়ে আগেও জামায়াতে ইসলামী ভূমিকা রেখেছে। তাই আমরা মাঠে নেমেছি এবং নামছি। মাথা ঠান্ডা রেখে বিরাজমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের চেষ্টা করছি। সরকার ও কুচক্রী মহল নানা ফাঁদ পাতছে। আমরা ফাঁদে পা দেব না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কল্পকাহিনি প্রচার করছে।’

তিনি বলেন, ‘সমাবেশে রাজধানী ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোর নেতাকর্মীরাও যোগ দেবে। সারা দেশ থেকেই নেতাকর্মীরা আসতে চায়। আমাদের যে জনসমর্থন আছে, তা দেশবাসীকে এবং বিশ্ববাসীকে দেখাতে চাই।’

দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের আগস্টে আদালতের রায়ে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করা হয়। ফলে দলীয়ভাবে জামায়াত নেতাদের নির্বাচন করার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, ‘নিবন্ধনহীন দল জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জামায়াত নেতা বলেন, ‘২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ করার জন্য আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করেছি। আমরা তাদের কাছে অনুমতি চাইনি। মহাসমাবেশ সফল করতে যা করা দরকার আমরা তাই করছি। যেকোনো মূল্যে আমরা মহাসমাবেশ করব।’

মহাসমাবেশ বাস্তবায়ন উপকমিটির বৈঠক : শাপলা চত্বরের সমাবেশ সফল করতে গতকাল প্রস্তুতি সভা করেছে দলটির নেতারা। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল।

সভায় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমির আবদুর রহমান মুসা, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!