• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর, ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১
২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ

সুযোগ বুঝে তারাও মাঠে


বিশেষ প্রতিনিধি অক্টোবর ২৬, ২০২৩, ০১:১১ পিএম
সুযোগ বুঝে তারাও মাঠে

ঢাকা : ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে সেদিন থেকেই ঢাকাসহ সারাদেশে ‘প্রতিরোধ গড়ে’ তোলার চিন্তা রয়েছে বিএনপির। দলটির নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, মহাসমাবেশের ক্ষেত্রে সরকার, ক্ষমতাসীন দল এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কী ধরনের ভূমিকা নেয়, তার ভিত্তিতে পরবর্তী কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। যদিও প্রতিরোধ গড়ে তোলার ধরন সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি দলটির নীতিনির্ধারকরা।

তবে মহাসমাবেশ থেকে আগামী ৩০ অক্টোবর ঢাকায় সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা দিতে পারে জানা গেছে। এর পর পরিস্থিতি অনুযায়ী রেলপথ, নৌপথ ও রাজপথ অবরোধ করার কোনো সুযোগ আসতে পারে।

গুলশানে বিএনপি চেয়াপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের বৈঠকে সচিবালয় ঘেরাওয়ের ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানা গেছে। এছাড়াও বিএনপি স্থায়ী কমিটির বেশ কয়েকটি বৈঠকে আরও নানা কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

এসব বৈঠকে মূলত মহাসমাবেশকে সফল করার ব্যাপারে এবং ওই দিন সরকার পক্ষ উসকানি দিয়ে কর্মসূচি ভণ্ডুল করতে চাইলে উদ্ভূত পরিস্থিতিকে কীভাবে প্রতিরোধ করা হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মহাসমাবেশ থেকে কী ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হবে তা নিয়েও আলোচনা করেছেন তারা।

এদিকে আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে ‘একঘরে’ করে সরকার পদত্যাগের এক দফা আন্দোলনে সফলতা পেতে মহাসমাবেশকে ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এ আন্দোলনে শরিক দলগুলোও নিচ্ছে। মহাসমাবেশে ব্যাপক জনসমাগম ঘটাতে পারলে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে- এই ধারণা থেকে সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো।

এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘যখন যে কর্মসূচির প্রয়োজন হবে, সে কর্মসূচিই দেওয়া হবে। পরিস্থিতিই বলে দেবে কী কর্মসূচি দিতে হবে।’ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপি গণ-অভ্যুত্থান পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চায় বলে জানিয়েছেন তিনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মহাসমাবেশ করতে চাই। আমাদের দাবি আদায়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে নামিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাই। তবে পরিস্থিতিই বলে দেবে আমরা পরবর্তী সময় কী করব।’

গত ১৮ অক্টোবর সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এক দফা দাবিতে আগামী ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের কর্মসূচি দেয় বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। বিএনপি বলেছে, সেদিন থেকে আন্দোলনের মহাযাত্রা শুরু হবে। এ ধরনের বক্তব্যের পরপরই এ কথা ছড়িয়ে পড়ে, মহাসমাবেশের দিন ঢাকার রাস্তায় বিএনপির নেতাকর্মীরা বসে পড়বে।

এর প্রতিক্রিয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মন্তব্য করেন, ‘আমরা শুধু এটুকুই বলব, তারা যেন কোনো সহিংসতায় লিপ্ত না হয়, রাস্তা বন্ধ না করে, চলাচলের জায়গা যেন সচল রাখে।’ অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২২ অক্টোবর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় নেতাদের যৌথসভা শেষে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, মহাসমাবেশের দিন ঢাকায় বসে যাওয়ার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

বিএনপির মহাসমাবেশে ঢাকার আশপাশের জেলা থেকে নেতাকর্মীদের ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করতে বলা হয়েছে। দেশের অন্যান্য এলাকার নেতাকর্মীদের প্রতি এক বিশেষ নির্দেশনায় বলা হয়েছে, দলের জেলা, উপজেলা ও ইউনিট কমিটির সভাপতি যদি মহাসমাবেশে আসেন, তাহলে সাধারণ সম্পাদককে এলাকায় থাকতে হবে। একইভাবে সাধারণ সম্পাদক কর্মসূচিতে ঢাকায় বা অন্য কোথাও গেলে এলাকায় থাকবেন সভাপতি। কেউ হঠাৎ করে গ্রেপ্তার হয়ে গেলেও মাঠপর্যায়ে আন্দোলন সংগঠিত করতে যাতে সমস্যা না হয়, সেজন্য মাঠপর্যায়ের কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা সবাইকে ঢাকায় আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

সম্ভাব্য বাধাবিপত্তিকে পাশ কাটিয়ে সমাবেশে যোগ দিতে ঢাকায় কীভাবে আসতে হবে এবং ঢাকায় এসে গ্রেপ্তার এড়িয়ে কীভাবে অবস্থান করতে হবে ও কর্মসূচিতে অংশ নিতে হবে- সে ব্যাপারেও মাঠপর্যায়ের নেতাদের ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এসব নির্দেশনার পরও যদি মহাসমাবেশে বিঘ্ন ঘটানো হয়, দলীয় নেতাকর্মীরা যদি বাধার মুখে পড়েন, তাহলে ‘ব্যাপক বিক্ষোভ’ শুরু করবেন বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

নয়াপল্টনেই মহাসমাবেশে অনড় বিএনপি : ২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনে নিজেদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করতে চায় বিএনপি। সেজন্য ২১ অক্টোবর তারা ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে আবেদনও করেছে। তবে পুলিশ এখনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। অবশ্য গতকাল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, আগামী শনিবার রাজধানীতে মহাসমাবেশ করার জন্য পুলিশের অনুমতি চাওয়া হয়নি, বরং অবহিত করা হয়েছে মাত্র।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, কোনো ধরনের ‘অরাজকতা করবে না’ প্রতিশ্রুতি দিলে বিএনপিকে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশ করার অনুমতি দিতে পারে পুলিশ। তবে তিনি কোনো স্থানের নাম উল্লেখ করেননি।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন বলেন, “সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হলে এমনিতেই কিছু শর্ত থাকে। অরাজকতা না করার বিষয়টিও তার মধ্যে থাকে। তবে বিএনপিকে অনুমতির বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।”

এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘কোনো কিছুই মহাসমাবেশকে আটকে রাখতে পারবে না।’ গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, এবারকার আন্দোলন ফলাফলের দিকে যাচ্ছে এবং জনগণের বিজয় অনিবার্য।’

পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ও সংঘাতের ঝুঁকি : একই দিন ২৮ অক্টোবর শনিবার বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশের ডাক দিয়েছে আওয়ামী লীগ। সেদিন রাজধানী দখলে রাখার ঘোষণা দিয়েছে তারা। এ ঘোষণায় জনমনে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ। এদিকে ২৮ অক্টোবর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব ‘প্রবারণা পূর্ণিমা’ থাকায় সেদিন রাজনৈতিক দলগুলোকে কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতারা।

একই দিনে বড় দুই দল কর্মসূচি দেওয়ায় সংঘাতের কোনো ঝুঁকি দেখছেন কি না, জানতে চাইলে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যদি দেশের সরকারে থাকে, প্রতিটি পদক্ষেপই  ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকির চিন্তা করলে তো কোনো লাভ নেই। মানুষ এখন জেগে উঠছে, মানুষ জেগে উঠে তার দাবি আদায়ে বদ্ধপরিকর।’

তিনি বলেন, ‘একটার পর একটা আন্দোলন করে মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। তখন আওয়ামী লীগের এই কর্মসূচি শান্তির নামে অশান্তি সৃষ্টি করা। শান্তি ও উন্নয়নের নাম করে অশান্তি আর পেছনের দিকে নিয়ে গোটা রাষ্ট্রকে ফেইল্ড স্টেটে পরিণত করা- এই কাজটা তারা সুচারুরূপে করে যাচ্ছে।’

ধর্মভিত্তিক দলগুলোর তৎপরতা : বিএনপির যুগপৎ ধারার আন্দোলনে সরাসরি সম্পৃক্ত নয়-এমন কয়েকটি ধর্মভিত্তিক ইসলামী দল সরকারবিরোধী আন্দোলনে তৎপর হচ্ছে। তারা আগামী শনিবার ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে দলীয় কর্মসূচি দিয়েছে। এই দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একই দিন রাজধানীর শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে।

এ ব্যাপারে জামায়াতের প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘আগামী শনিবার ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ আমাদের দলীয় কর্মসূচির অংশ। লগিবৈঠা দিয়ে প্রকাশ্যে আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যার দিন স্মরণে এই কর্মসূচি পালন করা হবে।’

বিএনপির হাইকমান্ড, বিশেষ করে তারেক রহমানের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর বৈঠক হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আনঅফিসিয়ালি অনেক বৈঠক হয়েছে, হচ্ছে।’

এছাড়া ইসলামী আন্দোলন আগামী ২৭ অক্টোবর জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছে। পাশাপাশি দলটি ৩ নভেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ ডেকেছে। খেলাফত মজলিস ২৭ অক্টোবর রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে গণমিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে জোটে না থাকলেও তাদের সঙ্গে দাবি ও মতের মিল আছে। যারাই সুষ্ঠু নির্বাচন ইস্যুতে সরকারের বিরুদ্ধে থাকবে, তাদের কর্মসূচির বিষয়ে আমাদের সমর্থন থাকবে। তবে আমরা নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছি।’

ধর্মভিত্তিক দলগুলোর এসব কর্মসূচি নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে। ধারণা করা হচ্ছে, এই কর্মসূচি নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির এক ধরনের বোঝাপড়া হয়েছে। এ ছাড়া কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সঙ্গেও বিএনপির একটি যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন কোন দিকে গড়ায় তা মাথায় রেখে হেফাজতে ইসলাম তাদের সিদ্ধান্ত নেবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন।

এমটিআই

Wordbridge School

সোনালী বিশেষ বিভাগের আরো খবর

Link copied!