ঢাকা : বাংলাদেশে নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি তাদের দাবি আদায়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে বাধ্য করতে সামনে ‘পরিস্থিতি বুঝে আরও শক্ত কর্মসূচি’র দিতে যেতে চাইছে।
দলটির নেতারা প্রথম দফায় তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট। কারণ তারা মনে করছেন ইউনিয়ন থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত নেতা ও সংগঠকদের ব্যাপক ধরপাকড় সত্ত্বেও সড়ক-মহাসড়ক কার্যত অচল ছিলো, এমনকি রাজধানী ঢাকাতেও রাস্তাঘাটে লোক চলাচল ছিলো ‘তুলনামূলকভাবে অনেক কম’।
এদিকে, অবরোধের মধ্যেই গত চব্বিশ ঘণ্টায় কেন্দ্রীয় নেতা জহির উদ্দিন স্বপন ও ঢাকা মহানগর সদস্য সচিব আমিনুল হকসহ অন্তত ২৭২ জনকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক করেছে বলে তথ্য দিয়েছে বিএনপি।
দলটির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলছেন, পুলিশের আগ্রাসী ভূমিকার পরেও মানুষের জোরালো অংশগ্রহণ আমাদের কর্মসূচিতে দেখছি। সামনেও পরিস্থিতির আলাকে দাবি আদায়ের রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি আমরা সফল করবো।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ অক্টোবরে নয়াপল্টনের সমাবেশ পণ্ড হওয়ার পরদিন হরতাল পালন শেষে তিনদিনের সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি দিয়েছিলো বিএনপি। তিনদিনের অবরোধ কর্মসূচি শেষে আবার ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি দেয়া হয়েছে যা রবিবার (৫ নভেম্বর) সকাল ছয়টা থেকে শুরু হওয়ার কথা।
মঙ্গলবার থেকে টানা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি শেষে দলের মধ্যেই অনেকে মূল্যায়ন করছেন যে এ অবরোধ কেমন হলো কিংবা এ থেকে দল কী অর্জন করলো। দলের নেতারা বলছেন ব্যাপক ধরপাকড়ের মধ্যেও দেশজুড়ে যে যেখানেই পেরেছে রাস্তায় নেমেছে অবরোধ সফলের জন্য-এটিই তাদের বড় অর্জন এবং তাদের কাছে মনে হয়েছে যে সাধারণ মানুষও খুব একটা প্রয়োজন ছাড়া বের হয়নি বলেই ঢাকার পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ ছিলো না।
জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে আর পুলিশের সাথে মিলে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা রাস্তায় অবস্থান করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ঢাকাতেই মানুষজন রাস্তায় নামেনি খুব একটা। এটাই বিএনপির সাফল্য। তার মতে, বিএনপিকে সরকার বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যতই আক্রমণের মুখে রাখুক না কেন, এই অবরোধই বার্তা দিয়েছে মানুষ ভোটের অধিকারের দাবিতে বিএনপির সাথে একমত।
বিএনপি নেতারা মনে করছেন যে- অবরোধের মতো কর্মসূচি সফল করতে তাদের নেতারা রাস্তায় খুব একটা নামতে না পারলেও তিনদিন যে সড়ক মহাসড়কে চলাচল স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম ছিলো-এটাই দলটির বড় ‘সাফল্য’।
২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পর থেকেই ওয়ার্ড-ইউনিয়ন থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দলটির নেতাকর্মীদের ধরপাকড়ের খবর আসছে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়াও বিভিন্ন দেশ রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ঘিরে ‘অতি মাত্রায় শক্তিপ্রয়োগ’ থেকে বিরত থাকার জন্য সরকারকে আহবানও জানিয়েছে।
দলের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তফসিল ঘোষণার সময় যত এগিয়ে আসবে বিএনপির কর্মসূচির মাত্রা তত বাড়বে। যদিও প্রাথমিক ভাবে নির্বাচন কমিশন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সচিবালয় ঘেরাওয়ের পর ১০-১২ নভেম্বরের দিকে সর্বাত্মক অবরোধের দিকে যাওয়ার চিন্তা করেছিলো দলটির নীতিনির্ধারকরা। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মীর্জা আব্বাসসহ নেতাকর্মীদের ব্যাপক গ্রেপ্তারের পর পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনে সরাসরি অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি।
আগামী রবি ও সোমবারের অবরোধ শেষে ৭ নভেম্বর দলটির নিজস্ব কর্মসূচি পালনের কথা রয়েছে। এরপর আবারও হরতাল -অবরোধের মাধ্যমেই আগামী সপ্তাহ পার করবে দলটি। এ সপ্তাহে সরকারের অবস্থান, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী কৌশল নির্ধারণ করার কথা জানিয়েছেন দলটির একাধিক নেতা। আগামী সপ্তাহের শেষ নাগাদ কিংবা এর পরের সপ্তাহের শুরুতে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথা জানালে ওই দিনকে ঘিরে এবং এর আগে ও পরে কী ধরণের কর্মসূচি পালন করা যায় তা নিয়েও নানা আলোচনা হচ্ছে নীতিনির্ধারকদের মধ্যে।
দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা যে ইঙ্গিত দিচ্ছেন তা হলো তারা মনে করেন তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে তারা তাদের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ আরও জোরালো করে তুলতে পারবেন এবং এর জের ধরে সরকার ব্যাপকভাবে চাপের মুখে পড়বে বলেই তাদের ধারণা।
এমটিআই