• ঢাকা
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

বিনা ভোটে জয় আ. লীগের ভয়


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ১৮, ২০২৩, ০২:৩৩ পিএম
বিনা ভোটে জয় আ. লীগের ভয়

ঢাকা : নির্বাচন পরিচালনা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা, উপকমিটি চূড়ান্ত ও দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রির উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পুরোপুরি নির্বাচনী কর্মকান্ড শুরু করেছে। 

দলটি চায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে। সে জন্য দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ মনে করছে, গত দুইবারের নির্বাচনের মতো এবারের নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। কারণ সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার বিষয়ে দেশের বিভিন্ন মহল ও বিদেশিদের চাপ আছে। সে জন্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলের প্রার্থীরা এবার জিতে আসুক, সেটা চায় না আওয়ামী লীগ।

দলের প্রধান শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে-বিদেশে ভোটকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে ভোটার উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারের স্লোগান ‘তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’। দলের এক নেতা নাম প্রকাশ না করে এ কথা জানান।

নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভা : শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) তেজগাঁওয়ের ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলটির নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির রুদ্ধদার বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটি চেয়ারম্যান শেখ হাসিনা।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, দলের নেতাদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগপ্রধান বলেছেন, জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে, স্বাধীনভাবে জনগণ ভোট দিতে পারে, সে পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘জনগণের কাছে যেতে হবে, ভোট চাইতে হবে। যে যেখানে থাকেন। আর যাকে আমরা মনোনয়ন দেব তার জন্য সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।’

দুর্যোগ ও দুর্বিপাকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মানুষের পাশে থেকে সেবা করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা মানুষের সেবা, অধিকারটা সুনিশ্চিত করেছি বলেই তাদের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করেছি। আজ সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে কোন দলের ওপর তাদের আস্থা আছে? সেটা আওয়ামী লীগের ওপরই আছে। এ আস্থা-বিশ্বাসটা ধরে রেখেই আমাদের এগোতে হবে।’

বৈঠকে উপস্থিত থাকা একাধিক নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন এবার ‘ওমুক-তমুক’ ভোটে আসবে না ধরে নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, প্রত্যেক প্রার্থীকে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতে আসতে হবে।

ওই নেতারা জানান, সব রাজনৈতিক দলকে ভোটে আসার আহ্বান জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, দূরে না থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে দলগুলো জনপ্রিয়তা যাচাই করুক। সন্ত্রাসী-নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করে কেউ নির্বাচন প্রতিহত করতে পারবে না, এমন প্রত্যয় জানিয়ে তিনি বলেছেন, নির্বাচন হবেই।

শেখ হাসিনা বলেছেন, ভোটকে দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হলে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে গুরুত্ব দিতে হবে। 

তিনি বলেন, ভোটের পরে নানা অজুহাত তুলে দেশে-বিদেশে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার চক্রান্ত করা হবে। তাই নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করতে আওয়ামী লীগকে বেশি এগিয়ে আসতে হবে। পাড়া-মহল্লায় নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় উৎসব-আমেজ সৃষ্টি করতে হবে।

বৈঠকে নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। সেখানে বলা হয়, ইশতেহারে কেউ কোনো পরামর্শ দিতে চাইলে আওয়ামী লীগের ওয়েব সাইটে ঢুকে যেকোনো পরামর্শ দিতে পারবেন।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ইশতেহারের কাজ চলছে। প্রচার শুরুর আগের ইশতেহার প্রস্তুত হয়ে যাবে।

১৫ উপকমিটি চূড়ান্ত : আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে সদস্য সচিব করে দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ঘোষণা আগেই দেওয়া হয়েছিল। কো-চেয়ারম্যানের পদটি তখন খালি ছিল। 

গতকাল এই পদে দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহকে দায়িত্ব দিয়ে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য এইচ টি ইমামের মৃত্যুতে দীর্ঘদিন পদটি শূন্য ছিল।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি, উপদেষ্টা পরিষদ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে জাতীয় নির্বাচন ২০২৪ নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। এ কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে আছেন সরকারের অবসরপ্রাপ্ত আমলা, আইনশৃঙ্খলা কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রদূতরা।

এ ছাড়া নির্বাচন পরিচালনায় ১৫টি উপকমিটিও চূড়ান্ত করা হয়েছে। সেগুলো হলো: ইশতেহার প্রণয়ন, আইনি সহায়তাবিষয়ক, নির্বাচন কমিশন সমন্বয়বিষয়ক, দপ্তর ব্যবস্থাপনা, নির্বাচন পর্যবেক্ষক সমন্বয়, লিয়াজোঁ, পেলিং এজেন্ট প্রশিক্ষণ, প্রচার ও প্রকাশনা, পেশাজীবী সমন্বয়, আইটি বিষয়ক, বিদেশি মিশন/সংস্থা, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও ক্রীড়া, অর্থ ও ধর্মবিষয়ক উপকমিটি।

বৈঠক শেষে দলটির দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ইশতেহার উপকমিটির আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক, সদস্য সচিব সেলিম মাহমুদ। নির্বাচন সম্পর্কিত আইনি সহায়তাবিষয়ক উপকমিটির আহ্বায়ক ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সদস্য সচিব নজিবুল্লাহ হিরু।

নির্বাচন কমিশন সমন্বয়বিষয়ক উপকমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মদ ফারুক খান, সদস্য সচিব তারানা হালিম। দপ্তর ব্যবস্থাপনা উপকমিটির আহ্বায়ক কাজী জাফরউল্যাহ্, সদস্য সচিব বিপ্লব বড়ুয়া।

নির্বাচন পর্যবেক্ষক সমন্বয় উপকমিটির আহ্বায়ক রাষ্ট্রদূত মো. জিয়াউদ্দিন, সদস্য সচিব ওয়াসিকা আয়শা খান। লিয়াজোঁ উপকমিটির আহ্বায়ক রশিদুল আলম, সদস্য সচিব বি এম মোজাম্মেল হক। পোলিং এজেন্ট প্রশিক্ষণ উপকমিটির আহ্বায়ক সাবের হোসেন চৌধুরী, সদস্য সচিব সানজিদা খানম।

প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির আহ্বায়ক কামাল আবু নাসের চৌধুরী, সদস্য সচিব আবদুস সোবহান গোলাপ। মিডিয়া উপকমিটির আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান নূর, সদস্য সচিব মোহাম্মদ আলী আরাফাত।

পেশাজীবী সমন্বয় উপকমিটির আহ্বায়ক ড. মশিউর রহমান, সদস্য সচিব রোকেয়া সুলতানা। আইটিবিষয়ক উপকমিটির আহ্বায়ক ড. মো. হোসেন মনসুর, সদস্য সচিব আবদুস সবুর। বিদেশি মিশন বা সংস্থা উপকমিটির আহ্বায়ক সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির, সদস্য সচিব শাম্মী আহমেদ। সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও ক্রীড়া উপকমিটির আহ্বায়ক মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, সদস্য সচিব অসীম কুমার উকিল। অর্থবিষয়ক উপকমিটির আহ্বায়ক কাজী আকরাম উদ্দীন আহমদ, সদস্য সচিব সিদ্দিকুর রহমান।

ধর্মবিষয়ক উপকমিটির আহ্বায়ক খন্দকার গোলাম মওলা নকশবন্দী, সদস্য সচিব সিরাজুল মোস্তফা।

প্রার্থী মনোয়ান : বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড প্রার্থিতা চূড়ান্ত করবে বলে জানান শেখ হাসিনা। দলীয় সভাপতি বলেছেন, যাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে, তারাই নির্বাচন করবেন।

মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু আজ : শনিবার (১৮ নভেম্বর) সকাল ১০টা থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ।

দলের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়, ২১ নভেম্বর মঙ্গলবার প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দলীয় মনোনয়নের আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার কার্যক্রম চলবে।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে আগ্রহীদের ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রশাসনিক বিভাগ অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট বুথ থেকে দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র সংগ্রহ এবং জমা দিতে হবে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দোতলায় ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগ এবং তিনতলায় রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় সব বিভাগের মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হবে।

আবেদনপত্র সংগ্রহের সময় অবশ্যই প্রার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সঙ্গে আনতে হবে এবং ফটোকপির ওপর মোবাইল নম্বর ও বর্তমান সাংগঠনিক পরিচয়সহ ৩টি পদ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!