• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১

যেসব শর্তে সংলাপে যেতে রাজি বিএনপি


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ২১, ২০২৩, ০১:১৬ পিএম
যেসব শর্তে সংলাপে যেতে রাজি বিএনপি

ঢাকা : সরকারের পদত্যাগ ও ‘একতরফা’ তফসিল বাতিলের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। বিভিন্ন মহলের সংলাপের আহ্বান উপেক্ষা করে ইতিমধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।

যদিও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংলাপের সময় শেষ হয়ে গেছে বলা হচ্ছে। তবু আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যেই চলমান রাজনৈতিক সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রত্যাশায় সংলাপের রাস্তা খোলা রাখতে চায় দলটি। দলের নেতারা মনে করেন রাষ্ট্রপতি চলমান সংকট সমাধানের উদ্যোগ নিলে তারা ভেবে দেখবে।

সোমবার (২০ নভেম্বর) এসব কথা জানিয়েছেন বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর একাধিক নেতা।

তারা বলেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির বিষয়টি মাথায় রেখে সরকারের দিক থেকে বিশেষ করে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সংলাপের উদ্যোগ নিলে তারা ভেবে দেখবেন।

তবে তার আগে ঘোষিত তফসিল বাতিল করতে হবে, কারাবন্দি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্য নেতাদের মুক্তি দিতে হবে, কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিপূর্ণভাবে খুলে দিতে হবে এবং নেতাকর্মীরা সেখানে গেলে তাদের কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না।

এদিকে গত রোববার (১৯ নভেম্বর) রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। বৈঠক শেষে জাতীয় পার্টির নেতাদের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে জানানো হয়, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল পিছিয়ে সব রাজনৈতিক দলকে আলোচনার জন্য আহ্বান জানানোর জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব রেখেছেন রওশন এরশাদ।

এর আগে গত ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শর্তহীন সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে চিঠি দেন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। চিঠির জবাবে বিএনপি সংলাপের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখায়। পাশাপাশি সরকার যে সংলাপের পরিবেশ রাখেনি সে কথাও উল্লেখ করা হয়।

সংলাপের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একতরফা তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে রাজপথে আমাদের আন্দোলন চলমান রয়েছে। চলমান আন্দোলন সংগ্রামে আমাদের নেতাকর্মীরা প্রত্যাশা অনুযায়ী রাজপথে নামতে না পারলেও জনগণই অবরোধ, হরতাল সফল করছে।

এরই মধ্যে সরকার জনদাবির প্রতি শ্রদ্ধা না জানিয়ে এবং দেশি ও আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ ও আপত্তি উপেক্ষার মাধ্যমে একগুঁয়েমি করে একটি একতরফা নির্বাচনের পথে হাঁটছে। দেশকে রাজনৈতিক সংকটের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সঙ্কটে নিপতিত করার পথে হাটছে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে দেশ ধ্বংস হোক আমার ক্ষমতা চাই।

এরপরও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে এবং জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মহলের অনুরোধে সরকারের দিক থেকে সংলাপের আহ্বান এলে আমরা সাড়া দিতে প্রস্তুত আছি।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘সংলাপ আয়োজনের আগে ঘোষিত তফসিল বাতিল করে নেতাদের মুক্তি দিতে হবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে এগুলো করতে হবে।’

বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা সংলাপের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখালেও সরকার বারবার তা প্রত্যাখ্যান করছে। পাশাপাশি সংলাপের পরিবেশ সৃষ্টির পরিবর্তে পরিস্থিতি আরও জটিল করছে। সারা দেশে আমাদের দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের ভাগিয়ে নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কাজে লাগাচ্ছে। ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।’

গতকাল নিম্ন আদালতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন শুনানি ছিল। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জামিনের শুনানি পেছানো হয়।

এরপর গণমাধ্যমকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য অত্যন্ত স্পষ্ট। ২৮ অক্টোবর বিরোধী দলের ওপর ক্র্যাকডাউনের পর থেকে সরকার যে মিথ্যা মামলা-হামলা ও অন্যায় গ্রেপ্তার-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। আমাদের সব নেতাকর্মীকে মুক্তি দিয়ে সবার আগে সরকারকে একটি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। কারণ গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত হচ্ছে পরমতসহিষ্ণুতা ও ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন।

আজকে তিন সপ্তাহের বেশি অতিক্রান্ত হওয়ার পরও বিএনপি মহাসচিবের বেইল পিটিশনের শুনানি পেছানোর সিদ্ধান্তে সরকার পুনরায় প্রমাণ করেছে, এ সরকারের কাছে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ও রীতিনীতির ন্যূনতম অনুশীলন আশা করা যায় না।

এমতাবস্থায় বিরোধী দলকে এই সরকার নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনে যোগ দেওয়ার শর্তে নির্বাচনী শিডিউল পিছিয়ে দেওয়ার মুলো ফুরোনোর আহ্বানের ওপর দেশের মানুষ কীভাবে আস্থা থাকতে পারে, সেটাই আজ দেশবাসীর জিজ্ঞাসা।’

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী বলেন, ‘সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সব মহলের উদ্বেগ ও আপত্তি উপেক্ষা করে ঘোষিত তফসিল বাতিল করে এবং নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের দাবি মেনে সরকারের দিক থেকে সংলাপের উদ্যোগ নিলে তাতে সাড়া দেবেন তারা।

কারণ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলন করছে জনগণের ভোটাধিকার, মানবাধিকারসহ সংবিধান স্বীকৃত সব অধিকার আদায়ের জন্য। জনগণের ভোগান্তি রোধে আন্দোলনে বিরতি দেওয়া হচ্ছে। এরপরও দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে ছাড় দিতে চাই আমরা।’

আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি) সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘আবারও একটা ভোটারবিহীন একদলীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তাতে কারও কোনো সন্দেহ নেই। এ প্রহসনের তফসিল বাতিল ও গ্রেপ্তারকৃত নেতাদের মুক্তি দিতে হবে। একটি কার্যকর অর্থবহ সংলাপের মাধ্যমে সবার অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। যদি তা না করা হয় তাহলে জাতির জন্য ঘোর অমানিশা নেমে আসবে।’

গতকাল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা বলেছেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে ফিরতে চাইলে নির্বাচন কমিশন আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। আমার জানামতে আগেও ওনারা একটু পরেই নির্বাচনে এসেছিলেন এবং সুযোগটা পেয়েছিলেন। এবারও ওনারা যদি ফিরতে চান, কীভাবে কী করা যাবে নিশ্চয়ই আমরা আলোচনা করব। ওনারা সিদ্ধান্ত নিলে, আসতে চাইলে অবশ্যই আমরা ওয়েলকাম করব। ওনারা আসতে চাইলেন আর আমরা ফিরিয়ে দেব, এমনটা হবে না।’

রাশেদা বেগমের এমন বক্তব্যের জবাবে বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ইসি কী বলছে না বলছে তা নিয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। কেননা ইসি গঠনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তাদের নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। যারা সরকারের নির্দেশে একতরফা তফসিল ঘোষণা করেছে, তাদের কোনো বক্তব্যে আমাদের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।’

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!