• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৪ পৌষ ১৪৩১

আলোচনার কেন্দ্রে ভোট পেছানো, অনড় আওয়ামী লীগ


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ২১, ২০২৩, ০২:৩৩ পিএম
আলোচনার কেন্দ্রে ভোট পেছানো, অনড় আওয়ামী লীগ

ঢাকা : নির্বাচনের তারিখ ৭ জানুয়ারি ঠিক রেখে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিলে অন্য দিনক্ষণ এদিক-সেদিক হলেও আপত্তি নেই আওয়ামী লীগের। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের তারিখে বদল ঘটানো যাবে না, তফসিল বাতিলও মানবে না দলটি। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা এ কথা নিশ্চিত করেছেন।

নেতারা আরও বলেন, পুরো বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারাধীন। কিন্তু তফসিল বাতিল ও নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের ঘোর বিরোধিতা করবে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন নিয়ে নানা শঙ্কায় তফসিল কিছুটা আগে দিতে হয়েছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনকে (ইসি)। এতে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে সরকারি দল।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফরউল্যা বলেন, ‘তফসিল নিয়ে আওয়ামী লীগের কথা বলার কোনো এখতিয়ার নেই। পুরোটাই নির্বাচন কমিশনের বিষয়। তফসিল এগোনো-পেছানো হলে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ নিশ্চয়ই তার অবস্থান ব্যক্ত করবে। তফসিল ঘোষণাকে আওয়ামী লীগ স্বাগত জানিয়েছে। পাশাপাশি পুরোদমে প্রস্তুতি শুরু করেছে।’

জানা গেছে, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর চিঠির কারণে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিলে কিছুটা তড়িঘড়ি করতে হয়েছে। তবে ঘোষিত তফসিলে বিশেষ কারণে ৪ থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত একটি লম্বা সময় ইসি পরিকল্পনা করেই ফাঁকা রেখেছে। ৪ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের শেষ দিন আর ১৭ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। প্রয়োজনে ওই সময়ে কিছু করবে নির্বাচন কমিশন।

আওয়ামী লীগ ও নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, যে ১৩ দিন রিজার্ভ রাখা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সে সময় পুনর্বিবেচনা করা হবে।

ইসি সূত্র জানায়, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থেই তা করা হবে।

সূত্র জানায়, সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি প্রকাশ্যেই তফসিল পেছানোর আহ্বান জানিয়েছে। আড়ালে-আবডালে অন্যান্য দলেরও তফসিল পেছানোর আবেদন আছে। দেশের রাজনীতি নিয়ে তৎপর বিদেশিদেরও কেউ কেউ তফসিল পেছানোর অবস্থান ব্যক্ত করেছে। সর্বশেষ নির্বাচন উপলক্ষে সৃষ্টি হওয়া তৃণমূল বিএনপিও চায় তফসিল পেছাক।

তৃণমূল বিএনপি গর্জিয়াস প্রার্থী না পাওয়ায় গত রবিবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে গিয়ে তাদের দুই শীর্ষ নেতা শমসের মবিন চৌধুরী ও তৈমূর আলম খন্দকার দেখা করেছেন। তারা শেখ হাসিনাকে প্রার্থী না পাওয়ার বিষয়টি জানান। এ যুক্তিতে তারাও তফসিলে কিছুটা পরিবর্তন আনার অনুরোধ রেখেছেন।

সূত্র আরও জানায়,  সোমবার (২০ নভেম্বর) তৃণমূল বিএনপি থেকে নির্বাচন করতে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতার কাছে নতুন করে প্রস্তাব গিয়েছে। তারা আরও দুয়েক দিন সময় চেয়েছেন। তৃণমূল বিএনপি মনোনয়ন বিক্রি শুরু করলেও এখনো কাক্সিক্ষত সংখ্যায় বিক্রি না হওয়ায় তফসিল একটু এদিক-সেদিক করার পক্ষে মত দিয়েছে। তফসিল পেছানোর মাধ্যমে বিএনপি নির্বাচনে আসে কি না, সেটিও দেখতে চায় তারা।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক তিন নেতা বলেন, ডোনাল্ড লুর সমঝোতার চিঠি বিএনপির নির্বাচনে আসার রাস্তা সৃষ্টি করার একটি উপায় ছিল। তাই লুর চিঠিকে আমলে না নিয়ে এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেবে না জানিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি সংলাপ ও সমঝোতার সময় এখন আর নেই বলে পাশ কাটিয়ে গেছে আওয়ামী লীগ।

ওই চিঠির কারণেও তড়িঘড়ি তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ঢুকে গেছে আওয়ামী লীগ। দেশের মানুষকেও নির্বাচনী উৎসবে শামিল করতে সমঝোতার আলোচনার ভেতরেই তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা আরও বলেন, সংলাপে বসলে বিএনপিকে নির্বাচনে আসার বরং আওয়ামী লীগের জন্য ভালো। আমেরিকার চাওয়া অনুযায়ী সংলাপে বসলে আটকে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। বিএনপি নির্বাচনে এলে এমনিতেই আসতে হবে, সমঝোতায় বসে ছাড় দিয়ে বিএনপিকে নির্বাচনে আনা ঠিক হবে না।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক ওই নেতারা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এখনকার তৎপরতা বিএনপি নির্বাচনে আসুক। অথবা নির্বাচন যদি পারে প্রতিহত করুক। ২৮ অক্টোবরের পর বিএনপি নির্বাচন প্রতিহত করার শক্তি হারিয়েছে। ফলে নির্বাচনে না এলে বিএনপি আরও ক্ষতি হবে। এটি আপাতত যুক্তরাষ্ট্রও মনে করে। এখন সমঝোতা মানে বিএনপির নেতাকর্মীদের মুক্ত করা, মাঠে থেকে নির্বাচন করতে পারার নিশ্চয়তা সরকারের কাছ থেকে নেওয়া। এটাই এখন যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া।

নাম প্রকাশ না করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘আন্দোলনে পরাস্ত হওয়া বিএনপিকে পথ করে দেওয়া কোনোভাবেই ঠিক হবে না। নিজেদের তাগিদে বিএনপি নির্বাচনে এলে স্বাগত জানাবে আওয়ামী লীগ। বিএনপি আসুক না আসুক, সব হিসাব করেই নির্বাচনী ছক তৈরি করে রাখা হয়েছে। এ ছক নষ্ট করে নতুন দিকে মোড় নিলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আওয়ামী লীগ।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই আওয়ামী লীগ স্বাগত জানিয়েছে। নির্বাচনের উৎসবে মেতে উঠেছে পুরো দেশ। এখন তফসিল পেছানোর দাবি কেউ করে থাকলে সেটিকে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র হিসেবেই চিহ্নিত করা উচিত। নির্বাচন এখন কমিশনের বিষয়।’

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!