ঢাকা : প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন করার জন্য দলের মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদেরকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে রাখার যে কৌশল আওয়ামী লীগ নিয়েছে, সেটিতে দলটি কতটা লাভবান হবে? এনিয়ে খোদ দলটিতেই চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ৩০০ সংসদীয় আসনের বিপরীতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেছিলেন দলটির ৩ হাজার ৩৬২ জন নেতা। এদের মধ্যে মনোনয়ন পেয়েছেন মাত্র ২৯৮ জন, ফলে মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের অনেকেই এখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ফলে ভোটের লড়াইটা মূলত হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যেই।
তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৩০ নভেম্বর মনোনয়পত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। কিন্তু ইতিমধ্যেই সারা দেশের অর্ধশতাধিক আওয়ামী লীগ নেতা নিজেদেরকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন এবং এখনও অনেকে দিচ্ছেন। নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করার জন্য দল থেকেও তাদেরকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।
তবে স্বতন্ত্র এসব প্রার্থীদের নিয়ে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি দেখা যাচ্ছে। অন্য দিকে, নির্বাচনের মাঠে একই দলের একাধিক প্রার্থীর উপস্থিতি বিশৃঙ্খলা এবং দলীয় কোন্দল বাড়াতে পারে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকদের কেউ কেউ।
যদিও আওয়ামী লীগ মনে করছে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার কৌশল হিসেবে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী মাঠে রাখার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শেষ বিচারে সেটি ‘একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন’ অনুষ্ঠানে তাদেরকে সাহায্য করবে। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সবাইকে আপাতত অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হলেও প্রয়োজন হলে নির্বাচনের আগে তাদের লাগাম টানারও পরিকল্পনা করছে আওয়ামী লীগ।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিশৃঙ্খলা, ফ্রি স্টাইলে হবে না। আমরা দেখি কারা কারা চাইছেন। সেটার ওপরে আমাদের একটা সিদ্ধান্ত আছে। আমাদের একটা কৌশলগত সিদ্ধান্ত আছে।
তিনি আরও বলেন, ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের হাতে সময় আছে। কাজেই এর মধ্যে আমরা এখানে পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন, সংশোধন, অ্যাকোমোডেশন- সব কিছুই করতে পারি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ লাভবানই হবে। কারণ দলটির তৃণমূলের অনেক জনপ্রিয় নেতা, যারা দলীয় মনোনয়ন পাননি, তারা নিজেদেরকে যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ পাবেন। তারপরও এটি একটি সাজানো নির্বাচনই হবে। কারণ বিএনপি ছাড়া নির্বাচন সত্যিকার অর্থে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে উঠবে না বলে মনে করেন তিনি।
অন্যদিকে, আরেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরিন অবশ্য মনে করছেন, নিজ দলের মধ্যে একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় সুবিধার পাশাপাশি কিছু ক্ষতির মুখেও পড়তে হতে পারে আওয়ামী লীগকে।
তিনি মনে করেন, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখানোর জন্য নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোট করার সুযোগ দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। তারা আসলে দলটির ছায়াপ্রার্থী। তবে আপাতদৃষ্টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকে নিরীহ মনে হলেও ভোটের মাঠের চিত্র ভিন্ন রকম হতে পারে। এতে তৃণমূলে দলের কোন্দল আরও বাড়বে এবং সহিংসতা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
তবে আওয়ামী লীগ অবশ্য তেমন কোন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করছে না। দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ঐহিত্যবাহী সংগঠন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সব সময়ই দলীয় শৃঙ্খলা মেনে চলেন, চেইন অব কমান্ড ফলো করেন। যদিও এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। তারপরও নেতাকর্মীরা আমাদের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে।
তাছাড়া নির্বাচনের ফলাফল যেটাই হোক, আওয়ামী লীগ তা মেনে নিবে বলে জানানো হচ্ছে। তিনি বলেন, জনগণ যাকে ভোট দিবে, সে-ই নির্বাচিত হবে। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জিতলো, নাকি স্বতন্ত্র প্রার্থী জিতলো, সেটা বড় বিষয় নয়। জনগণ যা রায় দিবে, আমরা তাই মেনে নিবো। এক্ষেত্রে মনোনীত প্রার্থীরা হারলে আওয়ামী লীগ পরাজিত বোধ করবে না।
এমটিআই