• ঢাকা
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
আওয়ামী লীগের ইশতেহার গুরুত্ব

জনজীবনের সংকট নিরসন ও কর্মসংস্থানে


বিশেষ প্রতিনিধি ডিসেম্বর ২৫, ২০২৩, ১১:৩৮ এএম
জনজীবনের সংকট নিরসন ও কর্মসংস্থানে

ঢাকা : স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে চারটি ভিত্তিকে গুরুত্ব দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রণয়ন করা হয়েছে।

এবারের ইশতেহারে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধাগুলোকে কাজে লাগিয়ে শিল্পায়নের মাধ্যমে উন্নত দেশ গড়ে তোলার পাশাপাশি জনজীবনে নিত্যদিনের সংকট দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ।

সেই সঙ্গে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও সুশাসন নিশ্চিত করা, আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ছাড়াও বৈদেশিক বিনিয়োগ এনে দেশে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর বিস্তারিত পরিকল্পনা থাকছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে।

টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় আসার লক্ষ্যে এসব বিষয় যুক্ত করে নির্বাচনি ইশতেহারের শিরোনামে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের অঙ্গীকারকে সামনে এনেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, ২৭ ডিসেম্বর (বুধবার) দলের নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করা হবে। সোমবার ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, দলের সভাপতি শেখ হাসিনা নির্বাচনি এই ইশতেহার ঘোষণা করবেন।

এর আগে ইশতেহার প্রণয়ন উপকমিটির আহ্বায়ক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, এবারের নির্বাচনি ইশতেহারে কর্মসংস্থানের বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পাবে। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে পেশাজীবীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রণয়ন উপকমিটির মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এই তথ্য জানিয়ে বলেন, ইশতেহারে যেন জাতির আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটে তা লক্ষ্য রাখা হয়েছে।

জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ যে ইশতেহার প্রণয়ন করেছে সেখানে দেশের মানুষের দৈনন্দিন চাহিদাকে খুবই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি এসব জিনিস যাতে দেশে উৎপাদন করা যায়-সে বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনার কথা ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিদেশি বিনিয়োগ এনে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা অব্যবহৃত ইপিজেডগুলোকে কার্যকর করার অঙ্গীকারও রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনি ইশতেহারে। এর মধ্যে চিনিকলগুলোকে সক্রিয় করার কথা রয়েছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনি ইশতেহারে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি নামে চার মূল ভিত্তি উল্লেখ করা হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের ঘোষণা দেবে আওয়ামী লীগ। নাগরিকদের ডিজিটাল সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মার্ট সিটিজেন হিসাবে গড়ে তোলা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ইশতেহারে।

স্মার্ট অর্থনীতি গঠনের মাধ্যমে ক্যাশলেস ব্যবস্থাপনার দিকে এগিয়ে যাওয়া অর্থাৎ ব্যাংকিংয়ে দেশের অধিকসংখ্যক মানুষকে অনলাইনের আওতায় এনে গড়ে তোলা হবে স্মার্ট ইকোনোমি।

সেই সঙ্গে সরকারের কর্মকাণ্ডকে আরও বেশি ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে স্মার্ট হিসাবে গড়ে তোলা এবং এই তিনটি ভিত্তির সমন্বয়ের মাধ্যমে স্মার্ট সোসাইটি গঠনের পরিকল্পনা করেছে আওয়ামী লীগ, যা তাদের এবারের নির্বাচনি ইশতেহারে যুক্ত করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, ইশতেহার প্রণয়নে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষক, স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, শ্রমজীবী মানুষসহ সমাজের নিু আয়ের মানুষের প্রতিনিধিদের মতামত নেওয়া হয়েছে।

ঢাকায় নভেম্বরে পেশাজীবীদের সঙ্গে ইশতেহার প্রণয়ন নিয়ে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছ থেকে পাওয়া পরামর্শ ও সুপারিশগুলো যুক্ত করা হয়েছে এবারের নির্বাচনি ইশতেহারে। সেখানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান তৈরি, আর্থিক খাতে সুশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার বিষয়গুলো রয়েছে।

আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির এক সদস্য বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকারই হবে এবারের নির্বাচনি ইশতেহারের মূল ঘোষণা। তাই ইশতেহারের শিরোনাম এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই রাখা হয়েছে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি এর (জিনিসপত্রের) জোগান বা সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য উৎপাদনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বিষয়ে রয়েছে বিস্তারিত পরিকল্পনা এবং শিল্পায়নের মাধ্যমে যুব সমাজের জন্য বিপুল কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা গুরুত্ব পেয়েছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে। ২৭ ডিসেম্বর বুধবার সকালে রাজধানীর প্যান-প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে এটি ঘোষণা করা হবে।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারের শিরোনাম ছিল ‘দিনবদলের সনদ’। ‘ভোট ও ভাতের অধিকার দারিদ্র্য বিমোচনের হাতিয়ার’ স্লোগান দিয়ে সংকটের আবর্তে নিমজ্জমান অবস্থা থেকে দেশকে পুনরুদ্ধার করে একটি উন্নত সমৃদ্ধ সুখী সুন্দর জীবন গড়ে তোলাই আওয়ামী লীগের একমাত্র ব্রত বলে উল্লেখ করা হয়েছিল ওই ইশতেহারে।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ইশতেহারে আরও বলা হয়েছিল, ‘আমরা ২০২০-২১ সাল নাগাদ এমন এক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি যেখানে সম্ভাব্য উচ্চতম প্রবৃদ্ধি অর্জনে সম্ভব একটি দ্রুত বিকাশশীল অর্থনীতি দারিদ্র্যের লজ্জা ঘুচিয়ে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ নিশ্চিত করবে।’

এই (২০০৮) নির্বাচনি ইশতেহারে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য এবং সংসদ-সদস্য ও তাদের পরিবারের সম্পদের হিসাব এবং আয়ের উৎস প্রতিবছর জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে বলেও অঙ্গীকার করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ অঙ্গীকার বাস্তবায়ন থেকে পিছু হটে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ সালের নির্বাচনি ইশতেহার থেকে বিষয়টি তুলে দেওয়া হয়।

‘শান্তি গণতন্ত্র উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ স্লোগানে সুশাসন, গণতন্ত্রায়ন ও ক্ষমতার বিকেন্দ্রায়নকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ২০১৪ সালে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ।

সেখানে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা দূর করে রাষ্ট্র এবং সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে শান্তি, শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা, সংসদকে কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমুন্নত এবং নিরবচ্ছিন্ন উন্নয়ন নিশ্চিত করার মতো মৌলিক প্রশ্নে সব রাজনৈতিক দল, শ্রেণি ও পেশাজীবী সংগঠন এবং সিভিল সমাজসহ দলমত নির্বিশেষে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলার উদ্যোগের অঙ্গীকার ছিল।

টানা দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় যেতে জনগণের জীবনযাত্রার ক্রমাগত মানোন্নয়ন, তাদের আয়-রোজগার বৃদ্ধি এবং খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে স্থিতিশীল রাখার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল আওয়ামী লীগ।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যে ইশতেহার ঘোষণা করে তার স্লোগান ছিল ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’।

এতে গণতন্ত্র, নির্বাচন ও কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন ও মানবাধিকার সুরক্ষা, দক্ষ, সেবামুখী ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন, জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গড়ে তোলা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও মাদক নির্মূল, স্থানীয় সরকারে জনগণের ক্ষমতায়নসহ দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোঠায় নামানোর অঙ্গীকার করা হয়।

ইশতেহারে ১০টি মেগা প্রকল্প এগিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়, যেখানে পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র, পদ্মা সেতু রেল সংযোগসহ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন স্থাপন প্রকল্প ছিল।

‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ স্লোগানে দেশের প্রত্যেকটি গ্রামে শহরের সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার অঙ্গীকারও করা হয়েছিল আওয়ামী লীগের ওই নির্বাচনি ইশতেহারে।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের আগের তিনটি ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তা কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে তার উল্লেখ থাকবে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ভাষণে। এরপর ইশতেহারে উল্লেখ করা নতুন অঙ্গীকার ঘোষণা করবেন তিনি।

এসব অঙ্গীকারের মধ্যে রয়েছে কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে উৎপাদন পরিচালনা ও বৃদ্ধির পরিকল্পনা, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের বিকাশ, গবেষণার মাধ্যমে খাদ্যের পুষ্টিগুন বৃদ্ধি, উন্নত জাত সৃষ্টি এবং চলমান বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা।

২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ এবং মাথাপিছু গড় আয় পাঁচ হাজার ৯০৬ ডলার ও ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে রূপান্তর এবং এই সময় মাথাপিছু আয় ১২ হাজার ৫০০ ডলারের উপরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার ঘোষণা দেবেন শেখ হাসিনা।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!