ঢাকা : বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তোড়জোড়, অনেক জায়গায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সাথে জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস এবং জাতীয় পার্টি-সহ ক্ষমতাসীন দলের মিত্রদের অংশগ্রহণ সত্ত্বেও নির্বাচনটি আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা কতটা পাবে, তা নিয়ে প্রবল সংশয় রয়েই গেছে।
এমনকি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমানও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্ভাব্য পদক্ষেপের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন ভালো নির্বাচন না হলে ‘দেশের ভবিষ্যৎ ভালো হবে না’।
এসব উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যেই নির্বাচনের একেবারে দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে সরকার ও নির্বাচন কমিশন। আগামী ৭ জানুয়ারির এই নির্বাচন বিএনপি ও সমমনা দলগুলো বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর অনেক আসনে সরকারি দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করার সুযোগ পেয়েছেন দলটিরই অনেক নেতা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ডঃ আব্দুর রাজ্জাক বলছেন. নির্বাচনের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সংকটের এখন আর কোনও কারণ আছে বলে তার দল আওয়ামী লীগ মনে করে না। নির্বাচন জমে উঠেছে ও উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বিএনপি আসলে আরও ভালো হতো। কিন্তু নিজেদের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে তারা আসেনি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো জনগণের অংশগ্রহণ বা জনসমর্থন। দেশের মানুষ নির্বাচনে সামিল হওয়ায় তাই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে অস্বস্তিতে থাকার কোনও কারণই আর নেই।
যদিও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলছেন, নির্বাচনটি যত ভালোই হোক সবাই জানে কারা ক্ষমতায় আসবে এবং সে কারণে পশ্চিমারা যে মানের নির্বাচন চেয়েছিলো সেই প্রত্যাশা তাদের পূরণ হয়ে গেছে বলে মনে হয় না। পশ্চিমারা আগেই বলেছে তারা কেমন নির্বাচন চায়। সেটি না হলে কী ধরণের ব্যবস্থা হতে পারে তার ইঙ্গিতও তারা আগেই দিয়েছে। তাদের অনেক কংগ্রেসম্যান স্যাংশনের কথা বলেছেন। সে কারণে নির্বাচন নিয়ে তাদের আপত্তি থেকেই গেলে নানা আশঙ্কা থেকেই যায়।
এদিকে, নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে যুক্তরাষ্ট্র শক্ত অবস্থান নেয়ার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নও নির্বাচন প্রশ্নে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এমনকি তারা নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষণ দল না পাঠানোর কথাও জানিয়ে দিয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে কিছু আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে জনগণের অংশগ্রহণ কতটা নিশ্চিত হবে তা নিয়ে যেমন উদ্বেগ আছে আবার তেমনি নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা কী ব্যবস্থা নেয় তা নিয়েও অস্বস্তি আছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে।
ডঃ আব্দুর রাজ্জাক বলছেন, নির্বাচনের পরেও সবার কাছে জনসমর্থনের বিষয়টিই বিবেচ্য হবে বলে তারা মনে করছেন।
বাংলাদেশের জনগণ কী চাইছে সেটিই গুরুত্বপূর্ণ। তারা নির্বাচনে সামিল হলে বিদেশিদের কিছু বলার থাকবে বলে মনে হয় না। আর মানুষ ইতোমধ্যেই নির্বাচনের জোয়ারে এসে গেছে।
অবশ্য আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ বিশ্বাস করেন যে- বাংলাদেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের যে তৎপরতা দেখা যাচ্ছে তার সাথে নির্বাচনের কোনও সম্পর্ক নেই। তারা মনে করেন, এটি রাশিয়া, চীন ও ভারতের সাথে ভূ রাজনৈতিক কৌশলের একটি প্রতিফলন এবং বাংলাদেশ এক্ষেত্রে তার ‘ভিকটিম’ মাত্র।
তবে এটিও সত্য যে নেতারা যাই বলুন বা যেভাবেই বিশ্লেষণ করুন দলের সাধারণ নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্র কোনও পদক্ষেপ নেয় কি না, কিংবা নিলে কী ধরণের পদক্ষেপ নিতে পারে- এসব নিয়ে রীতিমতো আলোচনা আছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে ব্যাহত করতে পারে এমন ব্যক্তিদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র আগেই ভিসা নীতি ঘোষণা করে তার প্রয়োগ শুরুর কথা জানিয়েছে।
দেশটির কয়েকজন আইনপ্রণেতা মানবাধিকার ও নির্বাচন ইস্যুতে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ তৈরিরও পরামর্শ দিয়েছেন সে দেশের সরকারকে। সূত্র : বিবিসি বাংলা
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :