ঢাকা : ৭ জানুয়ারির নির্বাচন-পূর্ব আন্দোলনে প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় বিএনপিতে শুরু হচ্ছে শুদ্ধি অভিযান। নতুন করে নতুন করে ঢেলে সাজানো হবে দলের সব পর্যায়ের কমিটি। এরই মধ্যে ছাত্রদল-যুবদলের কমিটি ভেঙে দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
জেলাপর্যায়ে নতুন কমিটি দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে আসন্ন রমজান মাস থেকে। রমজান মাস দলটি সংগঠন পুনর্গঠনের মাস হিসেবে কাজে লাগাতে চায়। পাশাপাশি বিএনপিতে ফিরতে ইচ্ছুক নেতাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে দলের শীর্ষ পর্যায়ে সিরিজ বৈঠকে এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
দলের দায়িত্বশীল নেতারা বলেছেন, বিএনপির ডাকে সাড়া দিয়ে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন জনগণ বর্জন করেছে। সরকার পরিবর্তনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত না হলেও হতাশার কোনো সুযোগ নেই। নতুন করে ফের আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে। এ কারণেই দলকে নতুন নেতৃত্বে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হবে।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ ঘিরে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের পর হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচিতে নামে দলটি। কিন্তু পুলিশের সাথে সংঘর্ষের জেরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
দলটির দাবি, ২৮ অক্টোবরের পর থেকে তাদের ২৬ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় গ্রেপ্তার এড়াতে বাকি নেতারা আত্মগোপনে চলে যান। ঘুরেফিরে অল্প কিছু নেতা হরতাল-অবরোধের সমর্থনে ঝটিকা মিছিল করেন। এ চিত্র রাজধানী ঢাকা থেকে দলের তৃণমূল পর্যন্ত সর্বত্র। হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে বারবার তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও নেতাকর্মীরা প্রত্যাশিত হারে মাঠে নামেনি। এর মধ্য দিয়ে সাংগঠনিক দুর্বলতার বিষয়টি সামনে চলে আসে, যা হাইকমান্ডের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বিএনপির সিদ্ধান্ত হচ্ছে- ছাত্র ও যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেয়া হবে। কারণ এই দু’টি সংগঠনের যারা নেতৃত্বে আছেন, আন্দোলনে তাদের অধিকাংশের পারফরম্যান্সে হাইকমান্ড তেমন সন্তুষ্ট নয়। দলের মূল্যায়ন, বিক্ষিপ্তভাবে পাঁচ-দশ জন নিয়ে পৃথক মিছিল হলেও একত্রে মাঠে নামতে পারেনি গুরুত্বপূর্ণ এই দুই সংগঠনের নেতারা।
সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বে সমন্বয় ও সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে এমনটি হয়েছে বলে দল মনে করে। এছাড়া জেলা নেতাদের সাথেও কেন্দ্রীয় নেতাদের তেমন সমন্বয় ছিল না, যেটা নির্বাচনের পরে ধারাবাহিক জুম মিটিংয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে তারা অভিযোগ করেন।
সারাদেশে বিএনপির ৮২টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। দলের মূল্যায়ন, আন্দোলনে এগুলোর মধ্যে ২০-২৫টি জেলার পারফরম্যান্স সন্তোষজনক ছিল না। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কেবল এসব জেলা ও মহানগরে দল ও অঙ্গসংগঠনের কমিটি ভেঙে আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয়দের দিয়ে কেন্দ্র থেকে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও ওই কমিটির নেতারা আন্দোলনে সক্রিয় থাকলে সেই কমিটি বিলুপ্ত করা হবে না।
এদিকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ নানা কারণে বিভিন্ন সময় বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হওয়া নেতাদেরও দলে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাইকমান্ড। এক্ষেত্রে ২৮ অক্টোবরের পর থেকে আন্দোলনে যেসব নেতা নিজেরা সরাসরি মাঠে সক্রিয় ছিলেন কিংবা তাদের তত্ত্বাবধানে অনুসারী নেতাকর্মীরা রাজপথে ছিল এবং আন্দোলনজুড়ে কেন্দ্রের সাথে সমন্বয় রক্ষা করেছেন, তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে। তাদেরকে পদোন্নতি দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কমিটিতে শূন্য পদগুলোও পূরণের চিন্তা করছে বিএনপি। এ ক্ষেত্রেও যোগ্যদের পদ প্রাধান্য দেয়া হবে বলে জানা গেছে।
এমটিআই