• ঢাকা
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

খেজুরের বাজারে আগুনের তাপ


বিশেষ প্রতিনিধি মার্চ ৯, ২০২৪, ১১:২১ এএম
খেজুরের বাজারে আগুনের তাপ

ঢাকা : পরিপাটি প্যাকেটে মোড়ানো খেজুরের বক্স হাতে নিয়ে বিক্রেতার কাছে দাম জানতে চাইলেন মাহফুজুর রহমান। তবে বিক্রেতা যা বললেন, তাতে তার ভ্রু কুঁচকে গেল।

বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এলাকায় খেজুর কিনতে কয়েকটি দোকানে দরদাম করছিলেন তিনি।

আইনজীবী মাহফুজুর রহমান বলেন, কয়েক মাস আগে তিন কেজি খেজুর কিনেছিলাম। বর্তমানে তা শেষের দিকে। আসন্ন রমজানে ইফতারের জন্য কয়েক কেজি খেজুর কিনতে এসেছি। কিন্তু চড়া দামের কারণে খেজুর কেনা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিক্রেতারা জানালেন ৩০০ টাকার নিচে কোন খেজুর নেই। বাধ্য হয়ে তিন কেজির জায়গায় ৩৮০ টাকা কেজিতে এক কেজি খেজুর কিনলাম। কিছু করার নেই, রমজানে তো খেজুর লাগবেই।’

আইনজীবী মাহফুজুর রহমান খেজুর কিনলেও অনেক ক্রেতাকে দাম শুনেই চলে যেতে দেখা গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, এসব খেজুর আমাদের সৌদি আরব থেকে আনতে হয়। এবার আমাদের বাড়তি টাকায় খেজুর কিনতে হচ্ছে। তাই আমরাও দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছি।

বৃহস্পতিবার কারওয়ান বাজার, বায়তুল মোকাররম মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে সবচেয়ে কম দামি খেজুর জাহিদি জাতের। খেজুরটি প্রতি কেজি ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। অর্থাৎ এই জাতের খেজুরের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

এ ছাড়া গত বছর দাবাস খেজুরের বিক্রি হয়েছিল ২৮০ টাকা তা এ বছর  বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকায়, বরই খেজুর ২৫০ টাকা বিক্রি হলেও এবার বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ টাকায়। আজওয়া, মাবরুম, মরিয়ম জাতের খেজুরের চাহিদাও রয়েছে বাজারে অনেক। তবে এক বছরে এসব খেজুরের দামও অনেক বেড়েছে। এজন্য এসব খেজুর কিনতে ক্রেতাদের আগ্রহ কিছুটা কমেছে।

বর্তমানে প্রতি কেজি আজওয়া খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকা, যা গত বছর ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। মাবরুম বিক্রি হচ্ছে ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা। মাবরুম মরিয়ম বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা। মেডজুল বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা, যা গত বছর বিক্রি হয়েছিল ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়। আলজেরিয়া বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৪০০ টাকা।

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এলাকায় দীর্ঘ সাত বছর ধরে ব্যবসা করছেন মো. সিরাজুল ইসলাম। বরই খেজুর এখন ২২০ বেড়ে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

তার ভাষ্যমতে, ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া কামরাঙা মরিয়মের দাম বর্তমানে ৬০০, ২৫০-৩০০ টাকার চুকাইয়ের দাম ৬০০, ৩৫০-৪০০ টাকার আমবার বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৮০০, ৮০০ টাকার কার্টনের (৫ কেজি) জাহিদি খেজুর এখন ২৭০০, ২৫০০।

সিরাজুল বলেন, দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষ খেজুর কিনছে না। এক বছর আগে রমজানের আগের ‍দুই শুক্রবারও প্রচুর খেজুর বিক্রি হতো। কিন্তু এবার বিক্রি নেই। দাম শুনেই কাস্টমার চলে যাচ্ছেন।

এদিকে খেজুরের দাম প্রসঙ্গে বুধবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, খেজুরের দাম কমানো হবে কোথাও বলা হয়নি।

বলা হয়েছে, যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করা হবে। আমরা রমজানের আগে আমদানি শুল্ক কমানোর কথা বলেছি। ট্যারিফ কমিশন বিষয়টি দেখছে।

তিনি বলেন, সব সময়ই এক দল লোক থাকবে যারা ব্যবসায়িক সুযোগ নিয়ে মানুষের কষ্ট বাড়াবে। তারা প্রকৃত ব্যবসায়ী না। কারণ, দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসা করতে হলে মানুষকে ন্যায্যমূল্যে পণ্য দিতে হবে। তাহলেই কিন্তু মানুষ তাদের কাছে বারবার আসবে।

এমটিআই

 

Wordbridge School
Link copied!