• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

স্বজনদের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আ.লীগের কৌশল!


বিশেষ প্রতিনিধি মে ৬, ২০২৪, ১০:৪৭ এএম
স্বজনদের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আ.লীগের কৌশল!

ঢাকা : আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের (এমপি) স্বজনদের নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার আওয়ামী লীগের নির্দেশনাকে দলের কৌশল হিসেবেই দেখছেন নেতারা।

তারা বলছেন, নির্বাচনী উত্তাপ ছড়াতে, ভোট জমজমাট করতে ও আলোচনায় রাখতেই এই কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে।

দলীয় নির্দেশনা দেওয়া ও তা না মানার ধরন পর্যালোচনা করে আওয়ামী লীগের অসংখ্য ছোট-বড় নেতা এমনটাই বলছেন। তারা মনে করেন, ভোট জমানোর আওয়ামী লীগের এ কৌশলে বিএনপিও পা দিয়েছে দলীয় প্রার্থী বহিষ্কার করার মধ্য দিয়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালের পরে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর নানা কৌশলের কারণে জনগণের কাছে ভোটের আবেদন হারাতে শুরু করে। বিনা ভোটে জয়ী হওয়ার সংস্কৃতি ও বিএনপির ভোট বর্জনের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ভোটারদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এতে করে মানুষ ভোটদানের বিষয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। ধীরে ধীরে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি তলানিতে নেমে আসছে। ফলে নির্বাচন এলে একধরনের অস্বস্তি আওয়ামী লীগের মধ্যে কাজ করে। দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া গেছে।

নির্বাচনে কেন উত্তাপ থাকবে, এমন প্রশ্ন তুলে স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘ভোটে জনগণের সম্পৃক্ততা তো নেই। জনগণ ধরেই নিয়েছে পাঁচ বছরের জন্য সবকিছু ফিক্সড হয়ে আছে।’

আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, স্থানীয় সরকারের অধীনে সবচেয়ে বড় আয়োজন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। কিন্তু এ নির্বাচন হয়ে উঠেছে নিরুত্তাপ। এই নিরুত্তাপ পরিস্থিতি সামাল দিতে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের নির্বাচন না করার নির্দেশনা দিয়ে সকাল-বিকেল কথা বলে আলোচনায় রাখা গেছে উপজেলার ভোট।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দাবি করছেন, ভোটের মাঠ নিরুত্তাপ থাকার অন্যতম কারণ বিএনপির মতো বড় একটি রাজনৈতিক সংগঠনের ভোটে না থাকা।

কার্যত ভোট না করলেও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি তাদের দলের প্রার্থীদের বহিষ্কার করার মধ্য দিয়ে উপজেলা নির্বাচনকে দেশে-বিদেশে আলোচনায় নিয়ে এসেছে এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা মনে করেন, দুই দল এ ধরনের কৌশল না নিলে অনেকটা নীরবে-নিভৃতে শেষ হয়ে যেত উপজেলার ভোট।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের ব্যাপারে এ নির্দেশনা রেখেছেন। যেসব নেতা এই কৌশল বুঝতে পেরেছেন, তারা তাদের স্বজনদের ভোটের মাঠ থেকে সরিয়ে নেননি। যারা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা স্বজনদের প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

তার দাবি, এই নির্দেশনা রাজনৈতিক কৌশল না হলে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সর্বশেষ সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থান জানাতেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, গত ২ মে সংসদীয় দলের সভায় স্বজনদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা নিয়ে আলোচনা হলেও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা অনড় অবস্থান দেখাননি। নমনীয় থেকে দু-একটি কথা বলেছেন দলের সভাপতি।

এই দুটি সভায় আলোচনার বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য বলেন, এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা রাজনৈতিক কৌশল। দলের কঠোর কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না।

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, প্রথম ধাপের নির্বাচনের আগে বেশ কয়েকজন প্রার্থী সরে দাঁড়ালেও পরের তিন ধাপের নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা সরেননি। বরং দলের সাধারণ সম্পাদকের স্বজনই প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

চার ধাপে ৪৯৫ উপজেলা ভোটের প্রথম ধাপ শুরু হবে আগামী ৮ মে। ভোটের মাঠে উত্তাপ নেই বললেই চলে। প্রচার-প্রচারণায়ও জমেনি। আওয়ামী লীগের বাইরে আর বিএনপি কিছু নেতা ছাড়া অন্য কোনো দলও তেমনভাবে নির্বাচনে নেই। রাজনীতির বাইরের সাধারণ মানুষ অর্থাৎ এলাকার গণ্যমান্য ও সমাজসেবকও উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হননি। বলা যায়, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী।

আওয়ামী লীগের এক সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, উপজেলা নির্বাচন জমে ওঠেনি, এটা সত্য। কিন্তু কেন ওঠেনি? এ দায় কার? সেটাও পর্যালোচনা করা উচিত। বিএনপি রাজনীতি করবে কিন্তু ভোট করবে না এটা কেমন রাজনীতি।

তিনি বলেন, ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তান, ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার খেলা যেভাবে মাঠভর্তি দর্শক থাকবে এখানে তো জমজমাট হবে না। একতরফা খেলা কার ভালো লাগবে?

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ভোট জমাতে নানা চেষ্টা করে চলেছে। এ নেতা আরও বলেন, ভোট থেকে জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে এটি ভাবতে হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, এ বিষয়ে তার কোনো মন্তব্য নেই। সবকিছুর উত্তর দিতে পারবেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তার কাছে জানার জন্য পরামর্শ দেন তিনি। সূত্র : দেশ রূপান্তর

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!