ঢাকা : স্থায়ী আমানত বা এফডিআর-এর প্রতিশ্রুতি দিয়ে যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৭৫ জন গ্রাহকের ১ কোটি ৮১ লাখ ৪৮ হাজার ১৯৫ টাকা জীবন বীমায় রূপান্তর করে জালিয়াতি ও প্রতারণা করেছে রবিউল ইসলাম ও সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী গং। তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে ৭৫ গ্রাহকের সাথে প্রতারণার সত্যতা পাওয়া গেছে। বীমা কোম্পানিটির এমন প্রতারণায় টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চতায় ভুগছেন গ্রাহকরা।
প্রতারণা যেখান থেকে শুরু : যমুনা লাইফের সাবেক ডিএমডি ও এসএএমডি মো. রবিউল ইসলামের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে কোম্পানির চট্টগ্রামস্থ সার্ভিস সেন্টারের মো. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী, মো. মিসির রায়হান ও মো. আতিকুর রহমান চট্টগ্রাম মডেল সার্ভিস সেন্টারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদেরকে লাখে মাসিক ১০০০ টাকা ও বছরান্তে অতিরিক্ত ৯ শতাংশ ইনসেনটিভ প্রদানের শর্তে ১ বছর মেয়াদী এফডিআর-এর লোভ দেখায়। এরপর তারা ৭৫ জন গ্রাহক থেকে কৌশলে ১ কোটি ৮১ লাখ ৪৮ হাজার ১৯৫ টাকার পুরো তহবিলটি যমুনা লাইফের হিসাবে ট্রান্সফার করে। গ্রাহকের অজান্তে প্রতিষ্ঠানের ৭৫ জন সদস্যের নামে ১২, ১৫ ও ২১ বছর মেয়াদী তিন কিস্তি বীমার প্রস্তাবপত্র পূরণ করে জাল মেডিক্যাল সনদপত্র যুক্ত করে অবলিখন বিভাগে দাখিল করে প্রায় কোটি টাকা কমিশন হাতিয়ে নেয়।
যমুনা লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান খন্দকার লিখিত এক বক্তব্য বলেন, যমুনা লাইফের এফডিআর নামে কোনো স্কিম বা পলিসি নেই। তবে সিঙ্গেল প্রিমিয়াম বীমা পলিসি আছে যা প্রচলিত মৌখিক ভাষায় বীমা কর্মীরা এফডিআর বলে আখ্যায়িত করে। তারা ৩ কিস্তি বীমা হিসেবে কোম্পানিতে প্রস্তাবপত্র উপস্থাপন করেন এবং কোম্পানির অবলিখন বিভাগও তাদের প্রস্তাবনা অনুযায়ী ৩ কিস্তি বীমা পলিসি ইস্যু করে। অভিযোগকারীগণ অত্যন্ত সুকৌশলে বিভিন্ন জাল কাগজপত্র তৈরি করে গ্রাহকদেরকে এফডিআর-এর নাম ভাঙিয়ে টাকা গ্রহণ করে এবং ৩ কিস্তির বীমা হিসেবে বীমা করিয়ে দেয়। বিনিময়ে তারা তাদের প্রাপ্য কমিশন কোম্পানি থেকে বের করে নেয়। মূলত তারাই প্রতারণা করে এমন ঘটনা ধাপাচাপা দেওয়ার কৌশলে বিভিন্ন জায়গায় অপপ্রচার করে অভিযোগ করেছে।
এফডিআরের টাকা দিয়ে বীমা পলিসি করিয়ে কে কত টাকা কমিশন পেয়েছেন : যমুনা লাইফের পক্ষ থেকে ২০২০ সালে এজেন্টদের জন্য প্রস্তাবিত কমিশন সিডিউল অনুযায়ী ১৫ বছর ও তদুর্ধ্ব পলিসির ক্ষেত্রে একজন এফ.এ পেয়ে থাকে শতকরা ৩২ শতাংশ, ইউ.এম ১০ শতাংশ, বি.এম ৮ শতাংশ, ই.ভি.পি/সহকারী সার্ভিসিং সেল ইনচার্জ (উঃ) ১০ শতাংশ, এ.এম.ভি/উপ-সার্ভিসিং সেল ইনচার্জ (উঃ)৯ শতাংশ, এস.এ.এম.ডি/সার্ভিসিং সেল ইনচার্জ (উঃ) ৯ শতাংশ এবং ডি.এম.জি (উঃ) পেয়ে থাকেন ৬ শতাংশ। সব মিলে প্রতি ১০০ টাকায় এসব এজেন্টরা পেয়েছেন ৮৪ টাকা। এছাড়াও ইনসেনটিভসহ শতকরা প্রায় ৯৫ টাকা বা তার বেশি কমিশন পেয়েছেন এসব এজেন্টরা।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, চট্টগ্রাম মডেল সার্ভিস সেন্টার থেকে আসা পলিসির বিপরীতে কমিশন পেয়েছেন, এফ.এ-০০০১১৪০৪ রোকসানা আক্তার, ইউ.এম-০০০১১৪০৩ মো. সরোয়ার হোসাইন চৌধুরী, বি.এম-০০০১১০০৮ মো. মিসির রায়হান, এ.জি.এম-০০০১০৯৯২ মো. সাজ্জাদ হোসাইন চৌধুরী, জি.এম-১১৭৯ মো. রবিউল ইসলাম এবং ডি.এম.ডি-০০১ মো. জসিম উদ্দিন।
এই বিষয়ে যমুনা লাইফের সাবেক ডি.এম.ডি মো. জসিম উদ্দিন সোনালী নিউজকে বলেন, কোম্পানির ডিএমডি হিসেবে আমি কাজ করেছি। আর অপকর্মটা হয়েছে চট্টগ্রামের একটি সার্ভিস সেন্টারে। আমার অধীনে শতাধিক সার্ভিস সেন্টার ছিলো। সেখানে একটি সেন্টারেই এ ঘটনা ঘটেছে। আমার যদি অল্প পরিমানও সম্পৃক্ততা থাকতো তাহলে অন্য সার্ভিস সেন্টারেও এ ধরনের ঘটনা ঘটতো। কিন্তু তা ঘটেনি।
তিনি আরও বলেন, মাঠ কর্মীরা যে পলিসিগুলো সংগ্রহ করেন তার পিআরগুলো সংশ্লিষ্ট সার্ভিস সেন্টারে কাটা হয়। সেখান থেকে বড় ফাইলগুলো হেড অফিসে পাঠানো হয়। পিআর ওখানে গ্রহণ করলেও ফাইলটা কনফার্ম করার জন্য হেড অফিসের অবলিখন বিভাগে পাঠায়। সেখান থেকে নিশ্চিত হয়ে ফাইনাল করা হয়। এখানে আমার কোন সম্পৃক্ততা থাকার কথা না। পুরো ঘটনায় আমাকে ইন্টেনশনালি ফাঁসানো হয়েছে।
প্রতারণার পদ্ধতি ও প্রথম ধাপে ডকুমেন্টস জালিয়াতি : গ্রাহকের কাছ থেকে এফডিআরের কথা বলে টাকা নিয়ে তারা প্রধান অফিসে জীবন বিমার প্রস্তাব পাঠাতো। সব প্রক্রিয়া নিয়মতান্ত্রিক শেষ করে কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী প্রথম বর্ষের যে কমিশন দেওয়া হত তা ৭০-৮৫ শতাংশ পর্যন্ত নিয়ে নিত ঐ এজেন্টরা। আইডিআরএ'র নির্দেশনা অনুযায়ী প্রথম বর্ষের প্রিমিয়ামের ওপর ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত কোম্পানি খরচ করার অনুমোদন থাকায় কোম্পানিগুলো ব্যবসা বাড়াতে এজেন্টদের বড় অংকে কমিশন অফার করে থাকে। এই সুবিধা নিতে প্রতারকরা গ্রাহকদের ঠকিয়ে নিজেরা লাভবান হতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। যার ফলে বড় ফাঁদে পড়েছে চট্টগ্রাম মডেল সার্ভিসের ৭৫ গ্রাহক। এর মাধ্যমে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সংশ্লিষ্ট এজেন্টরা।
গ্রাহক থেকে টাকা গ্রহণ করে তাদের প্রাথমিকভাবে একটি রিসিট প্রদান করা হত যা সম্পূর্ণ জাল বা নিজেদের মত করে তৈরি করা৷ যমুনা লাইফ এমন রিসিট ব্যবহার করে না বলে কোম্পানি সূত্রে জানা যায়। গ্রাহককে বোকা বানাতে নিজেরাই তৈরি করেন রিসিট। গ্রাহকও যমুনা লাইফের নাম রিসিটে থাকায় বিশ্বাস করতে বাধ্য।
দ্বিতীয় ধাপে জালিয়াতি : রবিউল-সাজ্জাদ গংরা গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রথমে যমুনা লাইফে জীবন বিমার প্রস্তাবপত্র পাঠান। চট্টগ্রাম মডেল সার্ভিস সেন্টারের বেশ কয়েকজন গ্রাহকের নামে জীবন বিমার প্রস্তাবপত্র সোনালী নিউজের হাতে এসেছে। সেখানে এফডিআরের কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এই ঘটনায় ভুক্তভোগী একজন গ্রাহক মো. ইসমাইল। তিনি এফডিআর হিসেবে ১ লাখ টাকা জমা দেন সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী ও মিসির রায়হানের হাতে। কিন্তু সাজ্জাদ গংরা হেড অফিসে এই গ্রাহকের নামে জীবন বিমার প্রস্তাবপত্র পাঠান। যা গ্রাহক নিজেও অবগত নয়।
শুধু তাই নয় যমুনা লাইফের প্রধান কার্যালয় থেকে বিমা পলিসির বিপরীতে গ্রাহককে যে সব ডকুমেন্টস দেওয়া হত সবগুলোর নকল কপি তৈরি করে গ্রাহককে প্রদান করা হত। আসল কপি রবিউল-সাজ্জাদ গংরা নিজেদের কাছে রেখে দিত।
ভুক্তভোগী গ্রাহক মো. ইসমাইল কোম্পানিকে জানায়-আমি সাজ্জাদ ও মিসির রায়হানকে নগদ ১ লাখ টাকা প্রদান করি। তার তিন দিন পরে যমুনা লাইফের একটি রশিদ দেয় (যেটা তাদের তৈরি রিসিট উপরে দেওয়া আছে) এর পর মোবাইলে একটি মেসেজের মাধ্যমে জানতে পারি পরবর্তী ২৮-০২-২০২২ তারিখে আমার দ্বিতীয় প্রিমিয়াম দিতে হবে। এ বিষয়ে সাজ্জাদ-মিসির রায়হানকে জানালে তারা জানান এটি এফডিআর হিসেবে আছে তবে অফিসিয়ালি সিস্টেম অনুযায়ী এটা একক বিমা হিসেবে দেখানো হয়েছে।
তিনি জানান, পরবর্তীতে হেড অফিসে যোগাযোগ করলে জানতে পারি আমার নামে একটি একক বিমা ২১ বছর মেয়াদি করা হয়েছে। অথচ আমাদের কাছ থেকে এফডিআরের কথা বলে টাকা নিয়েছে।
যমুনা লাইফ কর্তৃপক্ষ অভিযোগ পাওয়ার পর কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন?
যমুনা লাইফ ইন্সুইরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) কাছে গ্রাহকের অভিযোগ আসার পর কোম্পানির চেয়ারম্যানের নির্দেশে প্রথমে অফিসিয়াল তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
কোম্পানির গঠন করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, মীর মোহাম্মদ সোহেল রানা'র অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে প্রতিয়মান হয় যে, চট্রগ্রাম মডেল সার্ভিসিং সেন্টারের বিপনন কর্মকর্তাগণ এরকম প্রায় ১৫৬ টি পলিসি করান, যা যমুনা লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানীর কোন পরিকল্পের অধীনে নেই। যে পদ্ধতিতে তারা এই সব পলিসি করিয়েছেন এবং কিছু গ্রাহককে মুনাফাসহ মুল টাকা মেয়াদান্তে পরিশোধ করেছেন তা কখনই যমুনা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানীর পলিসির অধীনে ছিল না এবং যমুনা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানীর স্বার্থের পরিপস্থী এরুপ কার্যক্রমে অভিযুক্ত সবাই জড়িত বলে তদন্তে প্রতিয়মান হয়।
যেহেতু তদন্তে উঠে আসে, সব পলিসিগুলো গ্রাহকদের নিকট হতে এক বছর মেয়াদী বলে চট্টগ্রাম মডেল সার্ভিসিং সেন্টারের বিপনন কর্মকর্তাগণ টাকা নিয়েছেন। বাস্তবে তা একক বীমা পলিসি হিসাবে যমুনা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানীতে করিয়েছেন। শুধুমাত্র অধিক কমিশনের আশায় এ কাজ করেছেন তারা। বর্তমানে বেশিরভাগ পলিসি তামাদি হয়ে আছে। যেহেতু গ্রাহকদের ১ বছর মেয়াদি বা এফ ডি.আর এর কথা বলে টাকা নিয়েছেন সেক্ষেত্রে উক্ত পলিসিগুলোর মধ্যে প্রায় পলিসির মেয়াদপূর্ত হয়েছে এবং কিছু পলিসির মুল টাকা মুনাফাসহ চট্রগ্রাম মডেল সার্ভিসিং সেন্টারের বিপনন কর্মকর্ভাগণ ব্যাক্তিগত ভাবে গ্রাহকদের প্রদান করেছেন যা তদন্তে প্রমানিত হয়।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, যে সকল গ্রাহক তাদের টাকা ফেরৎ পাননি, চট্টগ্রাম মডেল সার্ভিসিং সেন্টারের বিপনন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে তাদের একটি তালিকা প্রনয়ন করা যেতে পারে এবং গ্রাহকের প্রাপ্য টাকা চট্টগ্রাম মডেল সার্ডিসিং সেন্টারের দায়িত্ব প্রাপ্ত বিপনন কর্মকর্তাদের পরিশোধ করার প্রয়াজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। যাতে করে ভবিষ্যতে কোনো গ্রাহক সরাসরি প্রধান কার্যালয় মুখি না হতে পারে এবং যমুনা লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানীর সুনাম অক্ষুন্ন থাকে।
কোম্পানির পক্ষ থেকে দ্বিতীয় পদক্ষেপ কি ছিল?
যমুনা লাইফ ইন্সুইরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সিইও কামরুল হাসান খন্দকার তদন্ত প্রতিবেদন পেয়ে দ্বিতীয় পদক্ষেপ হিসেবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। মামলা নং ১৩(৯)২২। মামলার ভিত্তিতে অভিযুক্ত সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী ও মো. আতিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর ধারাবাহিকতায় কোর্ট ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেয় পুলিশকে।
পরবর্তীতে পুলিশের তদন্ত রিপোর্টে উঠে আসে, প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমানে, বাদী কর্তৃক উপস্থিত কাগজপত্রসহ এজাহার পর্যালোচনা, সাক্ষীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় অত্র মামলার এজাহারনামীয় গ্রেপ্তারকৃত আসামী মো. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী (৪২), মো. আতিকুর রহমান (৪৯) এছাড়াও মোহাম্মদ মিসির রায়হান (৪১) ও মো. রবিউল হোসেন (৪২) পরস্পর যোগসাজশে গ্রাহকের আস্তা অর্জন করে ০১-০৮-২০২০ সাল থেকে ০১-০৪-২০২২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় পাঁচলাইশ মডেল থানাধীন ১০০ পুর্ব নাসিরাবাদ জিন্নাত ম্যানশনের ৬ষ্ঠ তলায় যমুনা লাইফ ইন্সুইরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে নিয়োজিত থেকে কোম্পানিসহ একাধিক গ্রাহকের সাথে প্রতারনা করে নগদ টাকা আত্মসাৎ করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই অপরাধে আসামিদের আদালতে বিচার কার্জের জন্য প্রার্থনা জানিয়ে পাঁচলাইশ মডেল থানার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
এরপর দীর্ঘ ৩ মাস কারাভোগ করে মো. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী ও মো. আতিকুর রহমান। তবে মামলা চলমান থাকায় এখনও গ্রাহকের কি হবে তা অনিশ্চিত থেকে গেল। তবে বিচার কাজ শেষ হলে গ্রাহকের টাকা ফেরত পাবে বলে আশা করছেন কোম্পানি কতৃপক্ষ।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র পদক্ষেপ কি ছিল?
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এর কাছে প্রতারণার অভিযোগ আসার পর নিয়ন্ত্রক সংস্থার পরিচালক (আইন) মোহা. আব্দুল মজিদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এতে কোম্পানির সিইও ছাড়াও তদন্ত দলের সঙ্গে কোম্পানির অন্য দুজন কর্মকর্তার জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। তবে এই বিষয়ে আদালতে মামলা চলমান থাকায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনের কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী গ্রাহকরা বলছেন, আমরা যমুনা লাইফকে দেখে টাকা দিয়েছি। আমাদের টাকা পেতে কোম্পানি ব্যবস্থা নিবে। আমরা চাই দ্রুত আমাদের টাকা আমাদের বুঝিয়ে দিক। কোম্পানির কর্মকর্তারা প্রতারণা করেছে সেই দায়ভার কোম্পানিকেই নিতে হবে। আমরা তো কোম্পানির নিয়োগ প্রাপ্ত ব্যক্তিকেই টাকা দিয়েছি। তারা যদি কোন চল-চাতুরীর আশ্রয় নেয় সেটা কোম্পানি বুঝবে। আমরা গ্রাহক কেন ভুক্তভোগী হব।
এ বিষয়ে যমুনা লাইফ ইন্সুইরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামরুল হাসান খন্দকার সোনালী নিউজকে বলেন, আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি এখানে একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে। তবে কেউ আমাদের কাছে কোন অভিযোগ আগে না দেওয়ায় আমরা বুঝতে পারিনি। এছাড়া আমরা যখন অভিযোগ পেয়েছি তখনি ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা সত্য জানার চেষ্টা করেছি এবং অপরাধীদের মামলা দিয়ে গ্রেফতার করিয়েছি।তারা তিন মাস জেলও খেটেছেন। এখন কথা হল আমরা চাইলেও তো কাউকে ধরে টাকা নিতে পারি না। সবকিছুর একটা প্রসেস আছে সেভাবেই আমরা আগাচ্ছি।
তিনি বলেন, এই প্রতারক চক্র শুধু গ্রাহকদের সাথে নয় বরং কোম্পানির সাথেও প্রতারণা করেছে। একদিকে গ্রাহককে এফডিআরের কথা বলে টাকা নিয়েছে, অন্যদিকে জীবন বীমার পলিসি বলে কোম্পানি থেকে মোটা অংকের কমিশন হাতিয়ে নিয়েছে। তারা গ্রাহকদের সাথে সাথে কোম্পানিরও বড় ক্ষতি করেছে যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
তাহলে কি ভুক্তভোগী গ্রাহকরা তাদের টাকা পাবেন না? এমন প্রশ্নের জবাবে কামরুল হাসান খন্দকার বলেন, আমরা শুরু থেকেই পদক্ষেপ নিয়েছি যাতে গ্রাহক তাদের টাকা ফিরে পায়। এছাড়াও অপরাধীরা শাস্তি পায়। এখন আমাদের তো একটা উপায়ে আগাতে হবে। মামলা যখন চলমান, তাকে তার গতিতে চলতে দিতে হবে। এখানে আমাদের কোন হাত নেই। তবে রায়ে যদি আদালত কোম্পানিকে নির্দেশ দেয় গ্রাহকের টাকা ফিরিয়ে দিতে আমরা তাই করবো। আমাদের সবাইকে আদালতের উপর ভরসা রাখতে হবে এবং অপেক্ষা করতে হবে।
আপনি ব্যক্তিগতভাবে এর সাথে জড়িত আছেন বলে গ্রাহকরা অভিযোগ করেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি কোম্পানির বড় দায়িত্বে আছি সেজন্য আমি দায় এড়াতে পারবো না। সেই দৃষ্টি কোন থেকে গ্রাহকের পক্ষ হয়ে আমি অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। আর যদি বলা হয় আমি ক্রাইমের সাথে সরাসরি জড়িত তাহলে বলবো আমি অপরাধী হলে কোম্পানি আমাকে এই পদে বহাল রাখতেন না। দ্বিতীয়ত আমি নিজে প্রথম মীর মোহাম্মদ সোহেল রানার অভিযোগ সরাসরি শুনে তারপর তাকে চেয়ারম্যান পর্যন্ত সরাসরি দেখা করার ব্যবস্থা করে দিয়ে ঘটনার সমাধানের জন্য সহযোগিতা করেছি। এখন আপনারাই বলেন আমি অপরাধে জড়িত থাকলে কি এতকিছু করা বা চেয়ারম্যানের কাছে তাদের যেতে সাহায্য করতাম? সুতারাং শুনতে অনেক কিছুই ভালো লাগে বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন।
এএইচ/আইএ
আপনার মতামত লিখুন :