• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০২ জুলাই, ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১
৭৫ পেরিয়ে আওয়ামী লীগ

দেশকে এগিয়ে নেয়াই মূল চ্যালেঞ্জ


বিশেষ প্রতিনিধি জুন ২৩, ২০২৪, ০৯:৩৭ এএম
দেশকে এগিয়ে নেয়াই মূল চ্যালেঞ্জ

ঢাকা : বাংলাদেশ নামে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগ দৃশ্যত দেশের রাজনীতিতে এখন অপ্রতিদ্বন্দ্বী; টানা চার মেয়াদে সরকারে থাকা দলটিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে ধারে কাছে নেই কেউ। এমন বাস্তবতায় ৭৫ বছর পূর্ণ করা দলটির সামনে দেশকে আরও এগিয়ে নেওয়াই মূল চ্যালেঞ্জ।

ঐতিহ্য আর সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় এতটা পথ পেরিয়ে আসার মাইলফলক জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করছে দলটি। এই সময়ে সরকারে থাকা দেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দলটির কাছে প্রত্যাশাও পাহাড়সম; দলের ভেতরে-বাইরে চাওয়া-পাওয়াও অনেক।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন যে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেটিই এখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে সংগঠিত দলটি আন্দোলন-সংগ্রাম করে টিকে থেকেছে, সামনে এগিয়েছে; একসময় নেতৃত্ব দিয়ে আদায় করেছে নিজেদের স্বতন্ত্র ভূখণ্ড, স্বাধীন করেছে বাংলাদেশ। নৃশংস এক হত্যাকাণ্ডে দলের কাণ্ডারি বঙ্গবন্ধুকে হারানো দলটিই এখন ৭৫ বছর পূর্ণ করার মাইলফলকের সামনে।

নানা লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়া দলটির বয়স যেমন বাড়ছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সাধারণের প্রত্যাশাও তেমন বাড়ছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়া এবং আগামী নেতৃত্ব গড়ে তোলাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে বর্ণনা করেছেন দলটির সাবেক-বর্তমান নেতারা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকায় অনেক উন্নয়ন হয়েছে, দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে আসছেন শেখ হাসিনা, এই ধারা অব্যাহত রেখে ২০৪১ সালের উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার তিনি করেছেন।

সাংগঠনিক চ্যালেঞ্জের বিষয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে এবং জাতীয় চার নেতা হত্যার পরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছিল।

সেই শূন্যতা পূরণ করতে যেমন ২১ বছর লেগেছিল। এই সময়কালে যা করতে হবে, তা হল নতুনদের অগ্রসর করে দেওয়া এবং আওয়ামী লীগের আর যেন কোনো শূন্যতা সৃষ্টি না হয়, সেটা দেখা।

উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি রক্ষাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখালেও সেটা মোকাবেলায় আওয়ামী লীগের প্রস্তুত থাকার কথা বলেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, আমাদের চ্যালেঞ্জ এখন নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়ন। আমরা রাজনীতি করি মানুষের জন্য, মানুষের সঙ্গে ছিলাম, আছি ও থাকব।

বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সঙ্গে ‘ওতপ্রোতভাবে’ জড়িত দলটির জন্য শুভকামনা জানিয়ে আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, আওয়ামী লীগের সাফল্যগুলোকে ধারণ করে সামনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করবে বলে আশা করছি।

প্রতিষ্ঠা এবং তারপর : ১৯৪৭ সালের দেশভাগ হওয়ার পর থেকে পাকিস্তান সরকার বাঙালিদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা শুরু করে। এমন প্রেক্ষাপটে দেশের মানুষের নিজেদের অধিকার আদায়ে পাকিস্তান সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগে প্রয়োজন ছিল একটি রাজনৈতিক শক্তির।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিমের নেতৃত্বাধীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের একটি অংশের নেতা-কর্মীদের কনভেনশনে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়।

পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার ওই সময়ে জেলে বসে ‘খুবই চিন্তায়’ দিন কাটানোর কথা তুলে অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, আমার সাথে যোগাযোগ করা হয়েছিল, আমার মত নেওয়ার জন্য। আমি খবর দিয়েছিলাম, ‘আর মুসলিম লীগের পিছনে ঘুরে লাভ নাই, এই প্রতিষ্ঠান এখন গণবিচ্ছিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এরা আমাদের মুসলিম লীগে নিতে চাইলেও যাওয়া উচিত হবে না। কারণ, এরা কোটারি করে ফেলেছে।

একে আর জনগণের প্রতিষ্ঠান বলা চলে না। এদের কোনো কর্মপন্থাও নাই। ‘আমাকে আরও জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আমি ছাত্র প্রতিষ্ঠান করব, না রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন হলে তাতে যোগদান করব? আমি উত্তর পাঠিয়েছিলাম, ছাত্র রাজনীতি আমি আর করব না, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানই করব। কারণ, বিরোধী দল সৃষ্টি করতে না পারলে এ দেশে একনায়কত্ব চলবে’।

রোজ গার্ডেনের সেই সম্মেলনে মুসলিম লীগের প্রগতিশীল অংশের বহু কর্মীর পাশাপাশি শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, মওলানা রাগীব আহসান, এমএলএদের মধ্যে খয়রাত হোসেন, বেগম আনোয়ারা খাতুন, আলী আহমদ খান ও হাবিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে ধনু মিয়ার মতো প্রবীণ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগে মওলানা ভাসানীকে সভাপতি এবং শামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। জেলবন্দি শেখ মুজিবুর রহমান হন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, আমি মনে করেছিলাম, পাকিস্তান হয়ে গেছে। সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের দরকার নাই। একটা অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হবে, যার একটা সুষ্ঠু ম্যানিফেস্টো থাকবে।

মুসলিম লীগের কর্মকাণ্ডের কারণে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি হওয়ার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমুন বলেন, “তৎকালীন মুসলীম লীগ নির্যাতন শুরু করে। সে সময়ই কিন্তু ভাষা আন্দোলন শুরু হয়। তখনই স্বাধিকার আন্দোলন শুরু হয় এবং এই সব আন্দোলনের পরেই ২৩ জুন দল গঠন হয়।

জন্মলগ্ন থেকেই আওয়ামী মুসলিম লীগ ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক দল ছিল। তবে ১৯৫৫ সালের ২১ থেকে ২৩ অক্টোবরের তৃতীয় জাতীয় সম্মেলনে ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও উঁচুতে তুলে ধরতে দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেয়া হয়, নাম হয় আওয়ামী লীগ।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাজনৈতিক সংগ্রাম, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিজয়সহ বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে ৫০ এর দশকেই দলটি হয়ে ওঠে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি।

তবে ১৯৫৭ সালে বৈদেশিক নীতিকে কেন্দ্র করে দলটি বিভক্ত হয়ে পড়ে। সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা ভাসানী পাকিস্তানের বৈদেশিক নীতিকে কেন্দ্র করে ভিন্নমত পোষণ করেন।

সোহরাওয়ার্দী পাশ্চাত্যের সঙ্গে বিশেষ করে আমেরিকার সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের পক্ষপাতী হলেও ভাসানী জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের পক্ষে মত দেন।

১৯৫৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাগমারি সম্মেলনে (টাংগাইল) দলটির বিভক্তি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। ১৮ মার্চ মওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগ এবং এর সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন। দলের ওয়ার্কিং কমিটির ৩৭ জন সদস্যের মধ্যে ৯ জন তাকে সমর্থন করেন।

পরিণামে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বা ন্যাপ নামে একটি নতুন দল জন্ম হয় করে এবং মওলানা ভাসানী এর সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫৭ সালের ২৫-২৬ জুলাই ঢাকার রূপমহল সিনেমা হলে দলীয় সমর্থকদের এক সম্মেলনে দলটি জন্ম নেয়।

এই সংকটময় মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মাত্র নয় মাস মন্ত্রিত্ব করার পর দলে সময় দেওয়ার জন্য সরকার থেকে পদত্যাগ করেন। মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ হন সভাপতি।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘসময় এই দলটি সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন করে জনগণের মধ্যে আস্থার স্থান তৈরি করে।

১৯৬৬ সালে ছয় দফা দেন বঙ্গবন্ধু, যাকে ‘বাঙালির মুক্তির সনদ’ বলা হয়। ছয় দফার ভিত্তিতেই ৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে।

স্বাধিকার আর স্বাধীনতার সংগ্রামে : ছয় দফা দেওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য বুঝতে পারে পাকিস্তানিরা। তার বিরুদ্ধে দেওয়া হয় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, যাতে সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে পাকিস্তানকে ভাঙার অভিযোগ আনা হয়। গ্রেপ্তার করে সেনানিবাসে নিয়ে চলে বিচার।

আবার ফুঁসে উঠে জনতা। তুমুল আন্দোলনের মুখে মামলা প্রত্যাহার করে মুক্তি দেওয়া হয় শেখ মুজিবুর রহমান। মুক্তি পাওয়া নেতাকে জনসভায় বরণ করে দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধু উপাধি।

পরে ছয় দফার ভিত্তিতেই ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের প্রথম জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ। পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি পেয়ে গোটা দেশেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে দলটি। কিন্তু বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চায়নি পাকিস্তানিরা।

আলোচনার নামে কালক্ষেপণ আর পূর্ব বাংলায় নিপীড়ন, নির্যাতন আর গণহত্যার প্রস্তুতি নিতে থাকে শাসক গোষ্ঠী।

অপারেশন সার্চলাইটের নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বাঙালির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাক সেনারা; গ্রেপ্তার করা হয় বঙ্গবন্ধুকে। বন্দি হওয়ার আগে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান তিনি।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরের ৯ মাসের যুদ্ধের পর উড়ানো হয় লাল-সবুজের বিজয় নিশান, যার পেছনে ছিল ৩০ লাখের বেশি বীর শহীদের রক্ত আর দুই লাখ নারীর আত্মত্যাগ।

১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি (বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি) এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে যে সরকার গঠিত হয়, তা-ই ছিল প্রথম বাংলাদেশ সরকার, যা মুজিবনগর সরকার নামে পরিচিত হয়।

১৭ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে বিদেশি সাংবাদিকের উপস্থিতিতে এই সরকারের শপথ হয় যাদের অধীনেই পরিচালিত হয় মুক্তিযুদ্ধ।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন সর্বাধিনায়ক বা কমান্ডার-ইন-চিফ। জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী ছিলেন প্রধান সেনাপতি।

একটি নিয়মিত সরকারের মত এর ছিল বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, কেবিনেট সচিব ও অন্যান্য সচিব, স্থায়ী ও বেতনভুক্ত বেসামরিক-সামরিক সরকারি কর্মচারী।

যুদ্ধ পরিচালনার জন্য বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়। প্রত্যেক সেক্টরে একজন করে কমান্ডার ছিলেন। অন্য সরকারি কর্মচারীদের মতো তারাও ছিলেন বেতনভুক্ত।

দেশকে কয়েকটি অঞ্চলে বিভক্ত করে রাজনৈতিক নেতাদের নেতৃত্বে মাঠ পর্যায়ে বেসামরিক প্রশাসন-ব্যবস্থাও গড়ে তোলে এই সরকার। দেশের মুক্ত অঞ্চলে বাংলাদেশ সরকারের শাসন চলে।

‘আওয়ামী লীগ ১৯৪৯-১৯৭১’ বইয়ে শ্যামলী ঘোষ লিখেছেন, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্র ব্যবস্থার নির্মাণগত পরিবর্তন আনয়নের ক্ষেত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এই পরিবর্তন সার্বিক প্রক্রিয়ায় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ বোধগম্যভাবেই কয়েকটি কারণে অন্যতম ছিল।

এই সংগঠনটি এই পরিবর্তন সম্ভব করে পাকিস্তানের জাতীয় পুনর্গঠনে যথা অংশ বা পাওনা লাভের ‘ইচ্ছা’কে স্বশাসনতুল্য স্বায়ত্তশাসনের ‘দাবিতে’ রূপান্তরিত করে। এই প্রক্রিয়ায় খোদ আওয়ামী লীগেও ধারবাহিক পরিবর্তন ঘটে তার নিজ অগ্রাধিকার ও কার্যধারার প্রয়োজনে।

বাবা থেকে মেয়ের নেতৃত্বে : স্বাধীন বাংলাদেশে শুরুতে আওয়ামী লীগের যখন রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না, সে সময়ই আসে সবচেয়ে বড় আঘাতটি।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে সেনাবাহিনীর একটি অংশ। সামরিক শাসন আর নিপীড়নের বৃত্তে পড়ে স্বাধীনতায় নেতৃত্ব দেওয়া দলটি। নেতাদের মধ্যেও দেখা দেয় বিভেদ।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ক্ষমতার শেষভাগে ১৯৮১ সালে নেতৃত্বে আসেন তার মেয়ে শেখ হাসিনা। এরপর থেকে টানা ৪৪ বছর তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব সামলে আসছেন।

পাকিস্তানিদের হাতে বঙ্গবন্ধুর গ্রেপ্তার এবং নেতৃত্বে তার মেয়ে শেখ হাসিনার আসার আগের সময়কে আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জের ছিল বলে মনে করছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে যখন গ্রেপ্তার করা হল, তখন অনেকে মনে করেছিল আর বুঝি মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। কিন্তু বঙ্গবন্ধু জেলে থেকেও সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই দেশ স্বাধীন হয়েছে।

আরেকটা চ্যালেঞ্জ ছিল, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যখন ১৯৮১ সালে দেশে ফিরলেন, তখন আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠন করে সব বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে দলকে ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়া। সেটা তিনি সুচারুভাবে পেরেছেন।

রাষ্ট্রক্ষমতায় ফেরার বন্ধুর পথ : ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের শাসন ক্ষমতার যে ইতি ঘটেছিল স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের পথ পেরিয়ে সেই জায়গায় যেতে দলটির লেগেছে ২১ বছর।

নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডের পর অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের মধ্যে সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় ক্ষমতা দখল করেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান।

১৯৮১ সালে ৩০ মে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের হাতে জিয়া নিহত হওয়ার ক্ষমতায় আসেন আরেক সামরিক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

জিয়ার মৃত্যুর মাত্র ১২ দিন আগে নির্বাসন থেকে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। অতীতের অন্যান্য সব আন্দোলনের মত স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয় আওয়ামী লীগ। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পতন হয় এরশাদের, পঞ্চম জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসে বিএনপি।

১৯৯৪ সালে দুটি উপনির্বাচনে সরকারের হস্তক্ষেপে জাতীয় নির্বাচনে নিরপেক্ষতা নিয়ে বিরোধীদের মধ্যে সংশয় দেখা দেয়। তখন নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনে নামে আওয়ামী লীগ।

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসে বিএনপি। তবে আন্দোলনের মুখে দেড় মাসের মাথায় দাবি মেনে নিয়ে পদত্যাগ করে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকার।

ওই বছরের ১২ জুনের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২১ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।

তবে পাঁচ বছর পর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি আরও তিনটি দলের সঙ্গে জোট করে বাজিমাত করে দেয়। ২০০১ সালের নির্বাচনে ভোট বাড়লেও হেরে যায় আওয়ামী লীগ।

২০০৭ সালের শুরুতে যে নির্বাচন হওয়ার কথা, সেটি নিয়ে দেখা দেয় বিরোধ। আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের আন্দোলনের মুখে জারি হয় জরুরি অবস্থা। প্রায় দুই বছর ক্ষমতায় থাকে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

ওই সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ বহু রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠানো হয়।

পরে নানা ঘটনা শেষে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে নির্বাচনে ১৯৭৩ সালের পর সবচেয়ে বড় জয় পায় আওয়ামী লীগ ও তার জোট।

২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আবারও সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ; দ্বিতীয়বারের মত প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা।

২০১৪ ও ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ চলতি বছরের জানুয়ারিতে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেন তিনি।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!