• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
গ্রেপ্তারে ব্লক রেইড

আতঙ্কে শিক্ষার্থী উদ্বেগে অভিভাবক


বিশেষ প্রতিনিধি জুলাই ২৯, ২০২৪, ১২:৫৭ পিএম
আতঙ্কে শিক্ষার্থী উদ্বেগে অভিভাবক

ঢাকা : তন্ময় ফারহান। রাজধানীর একটি নামি কলেজের ছাত্র। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় তিনি বাসা থেকে বের হননি। তারপরও তার বাবা-মা উদ্বিগ্ন। কারণ আন্দোলনকারীদের ধরতে প্রতিদিনই রাতের বেলায় অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এই বুঝি তার সন্তানকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এমন অবস্থায় ফারহানের বাবা-মা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এরকমটি চলতে থাকলে ছেলেকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেবেন।

ফারহানের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহিন ফয়সালেরও একই অবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পর তিনি চলে যান গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামে। সেখানে গিয়েও তিনি স্বস্তি পাচ্ছেন না। প্রতিদিনই পুলিশ-র‌্যাবের অভিযানের ভয়। আটক আতঙ্কে এক বাসা থেকে আরেক বাসায় ঠাঁই বদল করছেন। তার অনেক সহপাঠীরও একই অবস্থা।

তন্ময় ও মাহিনের মতো ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে আটক বা গ্রেপ্তার আতঙ্ক। ভয়ে অনেক শিক্ষার্থী মোবাইল ফোনের সিম পরিবর্তন করে ফেলছেন। পাশাপাশি অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন। তারা সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।

জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘সহিংসতার সঙ্গে যারা জড়িত শুধু তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। কোনো শিক্ষার্থীকে হয়রানি করা হচ্ছে না। ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে। অহেতুক কাউকে হয়রানি করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের আন্দোলন ঘিরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সহিংসতা হয়। এখন পর্যন্ত ১৫৬ জন মারা যাওয়ার তথ্য পেয়েছ।

তবে রোববার (২৮ জুলাই) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ১৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে সেনাবাহিনী নামিয়ে কারফিউ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি প্রায় পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চিরুনি অভিযান চালাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই দেশের আনাচে-কানাচে ব্লক রেইড দেওয়া হচ্ছে।

বিশেষ করে গভীর রাতে নির্দিষ্ট এলাকায় রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে বাসাবাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে। অভিযান চালানোর আগে রাস্তার আলো বন্ধ করে দিচ্ছে পুলিশ। এ সময় কাউকে বাইরে বেরোতে দেওয়া হচ্ছে না। বাসায় ঢুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, কথার হেরফের ফেলে আটক করা হচ্ছে। এতে করে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে জনমনে।

অনেকে অভিযোগ করেছেন, আন্দোলনের ধারেকাছেও ছিলেন না, অথচ বাসায় অভিযান চালানো হচ্ছে। যেসব বাসায় ছাত্রাবাস আছে তার তালিকা করা হয়েছে। বাসায় মেস ভাড়া না দিতে বাড়ির মালিকদেরও বলা হয়েছে। তাছাড়া আবাসিক হোটেল থেকে বোর্ডারদের তালিকা নিয়েছে থানা পুলিশ। তবে এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পুলিশের শীর্ষ কর্তারা।

তারা বলেছেন, আন্দোলনে যারা সহিংসতা করেছে তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। ভিডিও ফুটেজ ও স্টিল ছবির বিশ্লেষণ করে আটক করা হচ্ছে। অহেতুক কাউকে ধরা হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের উদ্বিগ্ন না হওয়ার অনুরোধ করেছেন তারা।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, ছাত্র পরিচয়টাই তাদের জন্য নিরাপত্তাহীনতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেস ছেড়েও তারা নিরাপদ নন। বাড়ি যাওয়ার পথে বাসে হচ্ছে তল্লাশি, মোবাইল ফোনে আন্দোলনের ছবি ভিডিও থাকলে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন, এমনকি আটকও করা হচ্ছে। গ্রামের বাড়িতেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। আটক হওয়া থেকে বাঁচতে অনেকেই নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নন বলে পরিচয় দিচ্ছেন, নিজের পরিচয়পত্রও লুকিয়ে রাখছেন।

নিজেদের নিরাপদ রাখতে দ্রুত সময়ের মধ্যে মেস ছাড়ার নির্দেশ দেন বাড়ির মালিকরা। কারফিউ থাকায় বাড়িতে যেতে না পারায় অনেকে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের কাছে থাকছেন। নারী শিক্ষার্থীরাও আতঙ্কে আছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, কোটা সংস্কার আন্দোলন একরকম থেমে গেলেও চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন অবরোধ, শাটডাউন ও বিক্ষোভ-মিছিলে ফ্রন্টলাইনে থাকা শিক্ষার্থীরা।

দেশব্যাপী সংঘাত-সংঘর্ষ ও বিভিন্ন নাশকতার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় যেকোনো মুহূর্তে গ্রেপ্তার হতে পারেন এ শঙ্কায় বাসাবাড়িতে থাকার সাহস পাচ্ছেন না।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় হতেও ভয় পাচ্ছেন অনেকেই। সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হলে আন্দোলনে সক্রিয় থাকা সন্তানরা ক্লাসে ফিরতে পারবেন কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন অভিভাবকরাও।

তাদের আশঙ্কা, শুধু গ্রেপ্তারই নয়, আন্দোলনবিরোধী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীও সুযোগ বুঝে তাদের ওপর চড়াও হতে পারে। কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী যারা হামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন, তারা প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে উঠতে পারেন, এ শঙ্কা অনেক আশঙ্কা করছেন।

সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৯ হাজারের বেশি লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে শিক্ষার্থীও আছেন। তবে বিএনপি, জামায়াত ইসলামীর নেতাকর্মীরাই বেশি।

এ ছাড়া গণ অধিকার পরিষদসহ বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদেরও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ফলে সরাসরি আন্দোলনে অংশ না নিলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমর্থন জানিয়েও অনেকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ এ ধরনের শিক্ষার্থীদেরও খুঁজে খুঁজে পুলিশ গ্রেপ্তার করছে। অনেকের বাসায় পুলিশ তল্লশি অভিযান চালিয়েছে। ফেসবুকে আন্দোলনের সমর্থন জানানোয় স্থানীয় ছাত্রলীগের হাতে মারধরের শিকার হচ্ছেন অনেকেই। ফলে তাদের অনেকেই নিজের গ্রামে ফিরে গেছেন। কেউ কেউ বন্ধু ও স্বজনদের বাসায় অবস্থান করছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে দায়ের করা নাশকতা ও সংঘর্ষের মামলায় শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের না পেয়ে পুলিশ তাদের আত্মীয়স্বজনদের হয়রানি করছে।

গত ২৩ জুলাই গুলশানে নিজ বাসভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন, আন্দোলনে অংশ নেওয়ার কারণে কোনো সাধারণ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা হলে, তাদের বিষয়টি বিবেচনা করবে সরকার। পাশাপাশি শিক্ষার পরিবেশ রক্ষা এবং শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টিও দেখা হবে।

আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় যদি কোনো শিক্ষার্থী মামলার শিকার হন, সে ক্ষেত্রে কাগজপত্রসহ যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন আইনমন্ত্রী।

তবে গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থীদের স্বজনদের অভিযোগ, তারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে কারও কাছ থেকে কোনো ধরনের সহায়তা পাচ্ছেন না।

কয়েকজন অভিভাবক নাম প্রকাশ না করে বলেন, তারা আতঙ্কিত। সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়েও উদ্বিগ্ন তারা। পুলিশ যেভাবে শিক্ষার্থীদের আটক করে হয়রানি করছে, তা ঠিক হচ্ছে না।

আন্দোলনের সময় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটে সহিংসতার ঘটনায় আটক ৩৮ শিক্ষার্থীকে গত বৃহস্পতিবার বিস্ফোরক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা অনেক। ঢাকায় একাধিক স্থানে আটক হওয়ার ঘটনাও আছে। এতে তারা আতঙ্কিত। বিষয়টি সমাধান করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তারা।

রামপুরা এলাকার এক ব্যবসায়ী জানান, তার বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া সন্তান আন্দোলন চলাকালে বাসা থেকেও বের হয়নি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে একাধিক পোস্ট দিয়েছে।

সম্প্রতি পুলিশ বাসার সামনের এক দোকানে তার মোবাইল ফোন তল্লাশি করে এসব পোস্ট দেখার পর তাকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে। আজিমপুরে একটি মেসে থাকতেন গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্সের শিক্ষার্থী সামিহাসহ বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন শিক্ষার্থী। অভিযানের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে তাদের মেস ছাড়ার নির্দেশ দেন বাড়িওয়ালা।

বাড়িওয়ালা তাদের বলেন, এ ছাড়া তার কোনো উপায় নেই। এরপরই তাদের এদিক-সেদিক চলে যেতে হয়েছে। কেউ পরিচিত আত্মীয়স্বজনের বাসায় আর কেউবা বন্ধুর বাসায় ওঠেন। সেখানেও থাকেন আতঙ্কে। কারফিউ কিছুটা শিথিল হলে তাদের কেউ কেউ বাড়িতে চলে যান।

সামিহা বলেন, ‘যখন আমরা শুনলাম আশপাশে অভিযান হচ্ছে এবং কয়েকজন মেয়ে শিক্ষার্থীকেও তুলে নেওয়া হয়েছে; এরপর থেকেই আতঙ্কে আছি। যদিও আমরা আন্দোলনেও ছিলাম না। এর মধ্যে বাড়িওয়ালা আমাদের রাখা ঝুঁকি ভেবে মেস ছেড়ে দিতে বলেন। কোনো উপায় না পেয়ে একজন পরিচিত মানুষের বাসায় উঠলাম। কিন্তু এখানেও একই অবস্থা। বাকিরাও এভাবে দিন কাটাচ্ছে। ভয়ে রাতে ঘুমাতেও পারি না। এভাবে আর কয়দিন চলবে জানি না।’

আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকায় নিজেকে বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ।

তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে জীবন নিয়ে ছুটে পালাচ্ছি। পাওয়ারফুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ডটা বের করে লুকিয়ে রেখেছি। এ কার্ডটা একসময় আমারে এক্সট্রা নিরাপদ রাখত। অথচ এখন এই পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে চলা অনিরাপদ। যেখানে আছি প্রায় ৩০-৩৫ ঘণ্টা পরপর একটু বের হই! এক কাপ চা খেতে যাই। খুব সাধারণভাবে যেন কেউ বুঝতেই না পারে আমি একজন স্টুডেন্ট। পুরোটা রাত আতঙ্কে কাটে অথচ আমি কোনো অপরাধী নই।’

পরিবার নিয়েই ঢাকায় থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসান। আতঙ্কে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতিতে চরম অস্বস্তিতে আছি আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা।’

তবে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘অভিযানে কোনো নিরপরাধ মানুষ গ্রেপ্তার হওয়ার সুযোগ নেই। চিরুনি অভিযানে অনেককে পুলিশ ধরে আনলেও যাচাই-বাছাই শেষে নিরপরাধদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। যারা সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, তাদেরই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কোনো শিক্ষার্থী যদি সহিংসতায় না জড়িয়ে থাকে, তাহলে তাদের ভয়ের কোনো কারণ নেই।’

পুলিশ সূত্র জানায়, অনলাইনে সরকারবিরোধী কর্মকা- চালানোর অভিযোগে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র আল শাহরিয়ার প্রান্তকে কিছুদিন আগে আটক করেছে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ। গত ১৭ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাইয়ুম মিয়া বাদী হয়ে মতিহার থানায় একটি মামলা করেন। হলের কক্ষ ভাঙচুর ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীসহ ২০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। কিছুদিন আগে আশুলিয়া থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে।

মামলায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ৩৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নবীন রহমান, ইতিহাস বিভাগের ৪০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. মেহেদী, অর্থনীতি বিভাগের ৪০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাগর ও ইতিহাস বিভাগের ৪০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হিরনকে আসামি করা হয়। শুধু চট্টগ্রামেই অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থীকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংস ঘটনার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তার মধ্যে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২, সিটি কলেজের ১, চট্টগ্রাম কলেজ ও হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের ১৪ এবং বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসার ১৩ জন রয়েছেন। ঢাকায় এর চেয়ে বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী আটক হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অনেকের নাম মামলার এজাহারে না থাকলেও সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে।

রাজধানীর শেখেরটেক এলাকার বাসিন্দা গার্মেন্টসকর্মী রেহেনা বেগম সাংবাদিকদের জানান, তার নবম শ্রেণিপড়ুয়া সন্তান আমির হামজাকে বুধবার দুপুরে রাজধানীর শেখেরটেকের ১২ নম্বর রোড থেকে আটক করে পুলিশ। একই সঙ্গে আটক করা হয় দশম শ্রেণির ছাত্র নাইম ইসলামকে। তাদের বিরুদ্ধে আদাবর থানায় নাশকতার মামলা দিয়েছে পুলিশ। তার ছেলে কোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নয়।

পুলিশ যখন তার ছেলে আমির ও নাইমকে গ্রেপ্তার করে, ওই সময় তারা মোবাইল ফোনে খেলছিল। তবে পুলিশের অভিযোগ, আমির হামজার মোবাইল ফোনে অপরাধমূলক মেসেজ পাওয়া গেছে।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ বলেন, ঢাকাসহ সারা দেশে গণগ্রেপ্তার চালানো হচ্ছে। মেস এবং বাসাবাড়িতে ‘ব্লক রেইড’-এর নামে তল্লাশি এবং আটক করা হচ্ছে। রাস্তাঘাট সর্বত্র যেখানেই ছাত্রদের দেখছে পুলিশ আটক করছে। প্রতিদিন হাজার হাজার লোককে আটক করা হচ্ছে। তাদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে।

পুলিশ আটক করতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগ নেতাদের সহযোগিতা নিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীসহ সারা দেশের মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত।

উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাগীব নাঈম বলেন, সারা দেশে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বাসা-মেস থেকে ধরা হচ্ছে। এলাকায় এলাকায় পুলিশ-ছাত্রলীগের যৌথ মহড়ায় নির্যাতিত হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ ধরনের অসাংবিধানিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিমউদ্দিন খান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া, তুলে নিয়ে হয়রানি করা কোনোভাবেই উচিত নয়। আমরা ইতিমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন নিরাপরাধ শিক্ষার্থীকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনার ব্যবস্থা করেছি।

অন্যান্য আন্দোলনকারী এবং সাধারণ শিক্ষার্থী যাদের তুলে আনা হয়েছে, তাদের যেন দ্রুত ছেড়ে দেওয়া হয় এবং কোনোরকম হয়রানি না করা হয়, সে দাবি জানিয়ে আসছি।’ সূত্র : দেশ রূপান্তর

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!