ঢাকা : দেশের অন্যতম পোশাক রপ্তানিকারক টিএডি গ্রুপের কারখানাগুলোতে দৈনিক তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ পোশাক তৈরি। আর মাসে তাদের রপ্তানি হয় কমবেশি ৭০ লাখ পোশাক।
কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং পরে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘিরে দেশে যে অস্থির সময় চলছে, তাতে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকাণ্ডে পড়েছে ছেদ।
সরকার পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিলেও ব্যবসা-বাণিজ্যে এখনো প্রাণ ফেরেনি, যার মূলে রয়েছে ভেঙ্গে পড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে দুশ্চিন্তা আর ব্যাংকিং খাত পুরোপুরি চালু না হওয়া।
এমন পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর সহায়তায় কিছু কিছু কারখানা খুলতে শুরু করলেও শঙ্কা কাটিয়ে পূর্ণোদ্যমে কবে নাগাদ চালু করা যাবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন টিএডি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশিকুর রহমান তুহিন।
আমাদের সমস্যার শেষ নাই; আমরা এখন আফটার শকে আছি, বলেন তিনি।
পুরোপুরি কলকারখানা খুলেছে কিনা প্রশ্নে আশিকুর রহমান বলেন, সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় দু’দিন ধরে কারখানা খুলতে পেরেছি। তবে এখনও শঙ্কা-ভীতি রয়ে গেছে; কাটাতে আরও দুই-তিনি দিন লাগবে।
ব্যাংকে তারল্য সংকট থাকায় কর্মীদের দ্রুত বেতন কীভাবে দিতে পারবেন তা নিয়েও উদ্বেগ ঝরে তার মুখে।
এছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে ক্রেতাদের আস্থা ফেরানো, চলমান ক্রয়াদেশ বেশি ব্যয়ে বিমানে পাঠানোসহ আদেশ ধরে রাখতে পারার অনিশ্চয়তাও আছে তার মতো পোশাক খাতের রপ্তানিকারকদের।
ধাক্কা সামাল দিতে পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ জোর চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির এ পরিচালক।
বিজিএমইএর সাথে শনিবারেও সেনাবাহিনীর মিটিং হয়েছে। তারা ভীষণ সহযোগিতা করছে। আমাদের টাকা আছে, কিন্তু ব্যাংক টাকা দিতে পারছে না। যাতে দুই-তিন দিনের মধ্যে কর্মীদের বেতন পরিশোধ করতে পারি, আমরা বাংলাদেশে ব্যাংকের সাথে আলাপ করছি। কোনোভাবেই যেন মাসের অর্ধেক পার না হয়।
একই কথা বলেছেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
তিনি বলেন, ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত টাকা তুলতে না পারায় কর্মীদের স্যালারি দেওয়া নিয়ে কিছু জটিলতা তৈরি হচ্ছে। সেই সাথে কাঁচামাল কিনতে সমস্যা হচ্ছে।
পণ্য পরিবহন ও উৎপাদন নিয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএর পরিচালক ও ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, নিরাপত্তা নিয়ে এখনও কিছুটা শঙ্কা রয়েছে। স্বল্পমাত্রায় উৎপাদন শুরু হয়েছে। বন্দরে দীর্ঘ জট লেগে আছে।
অর্থনীতির চালিকাশক্তি পোশাক রপ্তানি খাতের সমস্যার মতো সংকট আছে অর্থনীতির অন্যান্য খাতেও।
তবে দেশের প্রান্ত থেকে শহরের উৎপাদন কার্যক্রম, সেবা-পরিষেবা খাতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও অস্থিরতার মধ্যেই ধীরে ধীরে কর্মচাঞ্চল্য শুরু হওয়ায় গতি ফেরার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
এর মধ্যে পরিবহন সংকট কাটাতে জন্য সোমবার থেকে মালবাহী ট্রেনের চালুর খবর আসায় ধীরে ধীরে স্বস্ত্রি ফিরতে শুরু করেছে।
ব্যবসা হারানোর ‘শঙ্কা’ : রাজনীতির নয়া মেরুকরণে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার এলে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা গোষ্ঠীর সামনে আসা এবং ব্যবসায়ীক প্রক্রিয়া দখলের বিষয় সামনে চলে আসে।
এতে চলমান ব্যবসা কাঠামোয় নতুন সমীকরণের শঙ্কা তৈরি হওয়ায় চাকরি খুঁজছেন হবিগঞ্জের ঠিকাদার মো. নুরুজ্জামান।
তিনি বলেন, বাবার মৃত্যুর পর আমরা দুই ভাই পারিবারিক ব্যবসা দেখি। পরিবার এখন চাপ দিচ্ছে চাকরি খোঁজার। যেকোনো চাকরি পেলেই করতে চাই।
সত্যি বলতে এ ব্যবসায় ক্ষমতা ও প্রশাসনের সহযোগিতা লাগে। আমার বাবা কখনও কাউকে চাঁদা ও ঘুষ না নিয়েও ব্যবসা করতে পারতেন। বাবার পর আমরাও কোনো দুশ্চিন্তা ছাড়াই পারছি। অথচ এখন এসব কাজ বিভিন্ন গ্রুপের দখলের অবস্থা তৈরি হয়েছে।
একই সুর রাজধানীর অন্যতম বিপণী বিতান গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ী কল্যাণ সোসাইটির সভাপতি দিল মোহাম্মদ খোকার কণ্ঠে।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) থেকে আমরা মার্কেট খুলে দিছি। ব্যবসায়ীরা নিচে বসে চালু রাখছি। উৎকণ্ঠা রয়ে গেছে। একটা গ্রুপ দখলের চেষ্টায় আছে। তেমন কোনো কাস্টমারও আসছে না, বলেন হতাশ এই ব্যবসায়ী।
রাজধানীর এ শপিং কমপ্লেক্সটি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান।
দেশীয় বস্ত্রশিল্পে ‘স্থবিরতা’ : দেশীয় কাপড়ের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার শেখেরচর-বাবুরহাটকে ঘিরে নরসিংদীতে গড়ে ওঠা দেশিয় বস্ত্রশিল্পও স্থবির। এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে লোডশেডিংয়ের কারণে এখানকার উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছিল। ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ এর মতো সাম্প্রতিক গণআন্দোলনে মুখ থুবড়ে পড়েন ব্যবসায়ীরা।
নরসিংদী শহরের চৌয়ালা এলাকার মেসার্স আলিফ লুঙ্গির কর্ণধার জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া সুমন বলেন, “দেশের স্থবির অবস্থায় হাটে ক্রেতা না আসায় বেচাকেনা একেবারেই কম। আগের আমদানি দিয়েই চলছে উৎপাদন।
কারখানার উৎপাদন স্বাভাবিক অবস্থায় আসতেছে। তবে অর্থনৈতিক মন্দাভাবতো রয়েই গেছে।
মাধবদী পৌর এলাকার এএন টেক্সটাইলের স্বত্তাধিকারী আবুল মিয়া বলেন, এ শিল্পের অন্যতম কাঁচামাল রঙ ও সুতা চাহিদা মত পাওয়া যাচ্ছে না। আমদানি নির্ভর এসব কাঁচামাল পোর্টে আটক থাকায় সমস্যা হচ্ছে।
অর্থনৈতিক মন্দায় যেসব পণ্য উৎপাদন হচ্ছে সেগুলোও বিক্রি বন্ধ। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলছেন, ব্যবসায়িক পরিবেশ এক প্রকার স্থবিরই হয়ে গেছে।
বিশেষ করে সরবরাহ এবং বিপণন ক্ষেত্রে আমাদের ব্যাপক সমস্যা। দেশীয় বস্ত্রশিল্পগুলো যেখানে হাটবাজার কেন্দ্রিক বেচাকেনা হয়, সেখানেই মানুষের পদচারণা অনেক কম।
‘ঢিমেতালে’ চলছে বন্দর : সহিংস সময় পেরিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম আগেই শুরু হলেও অন্য বন্দরগুলো কার্যত বন্ধই ছিল। কর্মকর্তাদের ভীতি প্রদর্শন ও ভাঙচুরের শঙ্কায় ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টমস হাউসেও পণ্য খালাস বন্ধ ছিল।
গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি ও রপ্তানি শুরু হয়েছে। তবে সপ্তাহের প্রথম দিনের খবরেও সার্বিকভাবে আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ কমার তথ্য পাওয়া গেছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, বৃহস্পতিবার (৮ আগ্ট) সকাল থেকে আমদানি রপ্তানি চালু হয়েছে। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন আমদানি রপ্তানি বন্ধ থাকলেও শনিবার আমদানি রপ্তানি চালু থাকে।
রোববার (১১ আগস্ট) সকাল থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত এই বন্দর দিয়ে পণ্য নিয়ে ৬১টি ট্রাক ভারতের পেট্রাপোল গেছে। আর ভারত থেকে পণ্য নিয়ে বেনাপোলে ঢুকেছে ৭৬টি ট্রাক।
ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক মতিয়ার রহমান বলেন, ২০১৭ সালের ১ অগাস্ট থেকে বেনাপোল ও পেট্রাপোলের মধ্যে ২৪ ঘণ্টা বাণিজ্য পরিষেবা শুরু হয়।
তখন থেকেই প্রতিদিন ভারত থেকে প্রায় ৬০০ ট্রাক পণ্য আমদানি ও ২০০-২৫০ ট্রাক পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়ে আসছিল।
ভারতের সঙ্গে কিছুদিন ধরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর থেকে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে পণ্য আমদানি কমে ৩৫০-৪৫০ ট্রাকে দাঁড়িয়েছে।
তবে এখন অনেকটাই স্বস্তির মধ্যে আছেন বলে জানিয়েছেন বেনাপোল বন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কলিম উল্যা কলি।
বন্দর হ্যান্ডেলিং শ্রমিকরা কর্মব্যস্ত দিন পার করছে। পণ্য উঠানামা কাজে তাদের ব্যস্ততা বেড়েছে, বলেন তিনি।
নিরাপত্তার বিষয়ে সেনাবাহিনীর আশ্বাসে বুধবার থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি ও রপ্তানি, পণ্য খালাসের কাজ ‘পুরোদমে’ চলছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের উপ-কমিশনার ইমাম গাজ্জালি।
তিনি বলেন, আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম পুরোদমে চলছে। আমরা ফাইলের লোড সামলে উঠতে পারছি না, এত চাপ।
ব্যাংক পাড়ায় ‘অস্থিরতা’ : নিরাপত্তাহীনতায় ব্যাংকগুলোতে যে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছিল, তা রোববারও পুরোপুরি ঠিক হয়নি। সপ্তাহের শুরুর দিনেও সব ব্যাংক সব শাখা খোলেনি। বেশিরভাগ এটিএম বুথেও তোলা যাচ্ছে না টাকা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ নেওয়ার দিন ‘নিরাপত্তার’ স্বার্থে ব্যাংকগুলো থেকে এক লাখ টাকার বেশি তুলতে না দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে। রোববার অবশ্য টাকা উত্তোলনের ধাপ দুই লাখ অব্দি করা হয়।
‘নিরাপত্তার কারণ’ দেখিয়ে শনিবার রাতে ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দেশনা দিয়েছে, ডিজিটাল লেনদেনে যেকোনো পরিমান টাকা স্থানান্তর করা যাবে।
তবে এলসি খোলায় কনোন সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা।
এদিকে ক্ষমতার পালাবদলে বিভিন্ন ব্যাংকে শুরু হয়েছে ‘অভ্যন্তরীণ সমস্যা’, যার সবশেষ বহিঃপ্রকাশ ঘটে রোববার ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে।
ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টায় সেখানে কর্মকর্তাদের ওপর হামলা, সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে অন্তত ছয় জন আহত হন।
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরদিন ব্যাংকটির বেশিরভাগ মেয়ারের মালিক এস আলম গ্রুপের নিয়োগ করা কর্মকর্তাদের বের করে দেন বিক্ষুব্ধরা। এরপর গত ৭ ও ৮ অগাস্ট ব্যাংকারদের বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।
সেই ধারাবাহিকতায় এস আলম গ্রুপের নিয়োগ কর্মকর্তাদের দখলের চেষ্টাতেই গোলাগুলি বলে দাবি করেছেন ইসলামী ব্যাংকের এসএভিপি ড. শওকত আলী।
এছাড়া আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তার ছেলে আহমেদ সায়ান এফ রহমানসহ এই পরিবারের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপ থেকে আসা সব পরিচালকের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন সাবেক কর্মকর্তারা।
রোববার (১১ আগস্ট) ঢাকায় ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের সামনে প্রায় দুইশ সাবেক কর্মকর্তা-কর্মচারী এ বিক্ষোভ করেন।
তাদের দাবি, ‘অবৈধভাবে’ যাদের নিয়োগ হয়েছে, ব্যাংক থেকে তাদের অপসারণ করতে হবে। সেই সঙ্গে ২০১৩ সালের পর থেকে যাদের পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে, তাদের অবিলম্বে চাকরিতে ফিরিয়ে আনতে হবে।
বেকায়দায় দোকানিরাও : মিরপুর ১২ নম্বর এলাকার দোকানপাট সাধারণত সকাল পৌনে ৭টার দিকেই খুলত। বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে এখন সকাল ৯টায়ও খুলতে দেখা যায় না।
এই এলাকার মুদি দোকানি সাব্বির হোসেন রোববার (১১ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৮টার পর দোকান খুলতে আসেন।
দেরিতে কেন জানতে চাইলে তিনি বলছেন, দেশের অবস্থা ভালো না, বুঝেন না! একারণে দেরিতে খুলি। মানুষের আনাগোনা যখন বাড়তে থাকে তখন খুলি আরকি।
মুসকান জেনারেল স্টোর নামের দোকানের বিক্রেতা মো. সিফাত বলেন, তাদের বেচাবিক্রি এখনও স্বাভাবিক সময়ের মতো ফেরেনি।
মানুষের হাতে টাকা কম, লম্বা সময় ধরে তাদের কাজ বন্ধ ছিল। একারণে বিক্রি কম হচ্ছে।
কালশীর ফল বিক্রেতা মো. ইকবাল আতঙ্কে দোকান খোলেননি এক সপ্তাহ। রোববার (১১ আগস্ট) সকালে ভ্যান নিয়ে বসলেও ক্রেতা না থাকায় তাকে অলস সময় পার করতে দেখা যায়।
তিনি বলছেন, জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় তার বিক্রি কম হচ্ছে।
বাজারে মালামালের যোগান এখনও কমের দিকে, গাড়ি আসে না ঝামেলার কারণে। দোকানও কম বসতেছে। আগে এসময় দোকানের লাইন থাকত এখানে, এখন মাত্র কয়ডা দোকান।
চান্দনা চৌরাস্তা কাঁচাবাজারের ভাই ভাই বাণিজ্যালয়ের মালিক রাজু মিয়া জানান, ব্যবসার পরিস্থিতি ভালো নেই। মানুষ আগের চেয়ে কম কেনাকাটা করছে।
পাইকারি ব্যবসায়িরা দাম বেশি রাখা আমাদের নিত্যপণ্যে বেশি দরে বিক্রি করতে হবে। এখন কিছু শিক্ষার্থী বাজারে ঢুকে পণ্যের মূল্য কম রাখার কথা বলে গেছে। আমাদের কেনা দামের চেয়ে তারা কম বিক্রি করতে বলছেন। আমরা পড়েছি ‘বেকায়দায়’।
মহাখালীর বেকারি দোকানি মামুনও বললেন কেত্রা কমে যাওয়ার কথা।
সাধারণ সময়ে মোড়ের দোকানেই ভিড় জমে জানিয়ে তিনি বলেন, ছাত্ররা ট্রাফিকের দায়িত্ব নেওয়ায় মোড়ের দোকানের সামনে ‘দাঁড়াতে না দেওয়ায়’ কাস্টমার পাচ্ছেন না।
দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, একটা পরিবর্তনের সময় যে কিছুই হবে না এটা আশা করা যায় না। তবে ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ঢাকার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সিলেট এবং কুষ্টিয়ায়। সিলেটে বড় ধরনের লুটপাট হয়েছে।
বেচাকেনায় স্বাভাবিকতা ফিরেছে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, বর্তমানে মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো না। তাই বেচাকেনা খুব বেশিও হচ্ছে না। তবে নতুনভাবে সবকিছু শুরু হচ্ছে। আশা করি খুব দ্রুত এর থেকে উত্তরণ হবে।
তেলের টাকাই ওঠে না গণপরিবহনে : রোববার (১১ আগস্ট) মিরপুরের কালশীতে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন রাইডশেয়ারিং মোটরসাইকেল চালক আশরাফ হোসেন। তিনি জানালেন, কয়েকদিন ধরেই যাত্রী কম পাচ্ছেন তিনি।
এমনিতেও ৪-৫ দিন বাইক নিয়ে বের হইনি। এখনও যাত্রী খুব কম, যা টাকা দিচ্ছে তাতেই রাজি হয়ে যাচ্ছি- পরিবার পরিজন নিয়ে চলতে হবে তো। মানুষ রাস্তায় বের হচ্ছে কম, তাদের হাতে টাকা কম- আমাদেরও চলার অবস্থা খারাপ।
গাজীপুর-ঢাকা রুটে চলাচালকারী ভিআইপি পরিবহন সার্ভিসের পচিালক মো. কামরুল হাসান রিপন বলেন, রাস্তায় ট্রাফিক অব্যবস্থাপনার কারণে গাড়ি চালাতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক আইন-কানুন বোঝে না। তারা চালকদের সঙ্গে দুর্বব্যহারও করছে। তাই আমাদের সার্ভিসের ৩০ শতাংশ গাড়ি চলতেছে না। এতে আয়ও ৫০ শতাংশ কমে গেছে।
বিআরটিসি বাসের হেল্পার সবুজ মিয়া জানালেন, এখনও মানুষের আতঙ্ক কাটেনি, তাই বেরও হচ্ছে কম।
গাড়িতে দেখেন না যাত্রী কম, তেলের টাকাই ওঠে না। একারণে গাড়ি কম বাইর হয় রাস্তায়। আমরাও অনেক দিন পরে বাইর হইছি আজকে। সূত্র : বিডিনিউজ
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :