ঢাকা : দেশের পূর্বাঞ্চলের ফেনী জেলায় প্রায় প্রতি বছর কম-বেশি বন্যা হয়ে থাকে। কিন্তু এবারের মতো বন্যার এমন আগ্রাসী রূপ কয়েক দশকে দেখেনি এই অঞ্চলের মানুষ। শুধু ফেনী নয়, একই সময়ে কুমিল্লা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামে সৃষ্ট বন্যার তীব্রতা অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় ভয়াবহ।
আকস্মিকভাবে এই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার মানুষের প্রস্তুতি ছিল না।
অন্যদিকে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে। আর এর জন্য পানিনিষ্কাশন পথে প্রতিবন্ধকতাকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, নদী-খাল ও জলাধারগুলো দখলমুক্ত করতে না পারলে আগামী দিনে এর চেয়ে ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হতে হবে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানান, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আগস্ট মাসে বৃষ্টি একই সময়ের আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এ মাসে বৃষ্টি হওয়ার কথা ৯৯৮ মিলিমিটার। কিন্তু কয়েক দিনে বৃষ্টি হয়েছে ১ হাজার ৪৩৪ মিলিমিটার। অন্যদিকে উজানের ভারত থেকে পানি ভাটির দিকে নেমেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি মুহুরী নদীতে বিপদসীমার প্রায় ৪ মিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। গোমতী নদীতেও ২ মিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে, যা প্রবল বন্যার কারণ।’
উদয় রায়হান বলেন, একদিকে জোয়ারের পানি, অন্যদিকে নদীগুলো নাব্য হারিয়েছে। ফলে বন্যার পানি সরে যেতে বেশি সময় লাগছে। তাই বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে।
বাংলাদেশ আকস্মিক বন্যার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে উল্লেখ করে আবহাওয়া, জলবায়ু ও সমুদ্রবিজ্ঞানী ড. মোহন কুমার দাশ বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকায় আমরা রয়েছি। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে স্থানীয়ভাবে পরিবেশ ধ্বংস করে অপরিকল্পিত অবকাঠামো হচ্ছে। গাছপালা কেটে ফেলা হচ্ছে, ভূমির ব্যবহার পরিবর্তন ও নদী-খাল ভরাট করা হচ্ছে। নদীর নাব্যতা কমে যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়েছে আমাদের পরিবেশের ওপর। যখন পরিবেশের স্বাভাবিকতা নষ্ট হয়, তখন অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, বন্যা, খরা দেখা দেয়।’
বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়নকেন্দ্রের (ক্যাপস) পরিচালক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, দেশে বন্যার জন্য পানির অব্যবস্থাপনা দায়ী। তা ছাড়া বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অতিবৃষ্টি, আকস্মিক বেশি বৃষ্টি এবং হিমালয়ের বরফ গলা পানি এসবের কারণে ঘন ঘন এবং দীর্ঘস্থায়ী বন্যাগুলো হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘একদিকে যেমন উজানের পানি ব্যবস্থাপনা নেই, সেই সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়েও পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থাও কমে এসেছে। যুগের পর যুগ ধরে আমাদের নদী-খালগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে। আমাদের নদী কমিশন ৪৭ হাজার দখলদারের তালিকা তৈরি করেছে। নদী ও খালগুলো উদ্ধার করে নদীকে তার পথ ফিরিয়ে দিতে হবে।’
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘প্রতিটি উপজেলায় যেসব খাল, জলাধার দখল হয়ে গেছে, সেগুলোও উদ্ধারের কাজে হাত দিতে হবে। ভবিষ্যতেও উজানের পানি বা অতিবৃষ্টির কারণে বন্যা হতে পারে। আমরা যদি এই সংকটগুলো চিহ্নিত না করতে পারি, তবে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি ভবিষ্যতেও তৈরি হতে পারে।’ সূত্র : দেশ রূপান্তর
এমটিআই