• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২ পৌষ ১৪৩১

অনিয়ন্ত্রিত নেতাকর্মীদের নিয়ে বিপাকে বিএনপি


বিশেষ প্রতিনিধি অক্টোবর ১৪, ২০২৪, ০২:০৮ পিএম
অনিয়ন্ত্রিত নেতাকর্মীদের নিয়ে বিপাকে বিএনপি

ঢাকা : ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে দেশজুড়ে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে ‘হিমশিম’ খাচ্ছে বিএনপি। গত দুই মাসে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দলের সর্বোচ্চ ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত এক হাজারের বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হয়েছে দলটিকে।

এর বাইরে দলটির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ‘বেআইনি কর্মকাণ্ডে’ জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ আসার পর দলের পক্ষ থেকে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রগুলো বলছে।

মূলত চাঁদাবাজি, দখল, হামলা, এমনকি হত্যার অভিযোগ পর্যন্ত এসেছে কারো কারো বিরুদ্ধে।

সর্বশেষ হাতিরঝিল এলাকায় বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের একজন কর্মকর্তাকে হত্যার ঘটনায় দলের এক নেতার নাম গণমাধ্যমে আসার পর ২৪ ঘণ্টার সময় দিয়ে তাকে কারণ দর্শাও নোটিশ দিয়েছে বিএনপি। এ ঘটনা নিয়ে তোলপাড় চলছে দলটির অভ্যন্তরে। আবার ঢাকার তেজগাঁওয়ে একজন শিল্পপতির একটি স্থাপনা যুবদলের সঙ্গে জড়িত একদল ব্যক্তির দখলমুক্ত করতে শেষ পর্যন্ত দলের শীর্ষ নেতৃত্বকেও হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে বলে দলের মধ্যে আলোচনা আছে।

এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম বলেন, ‘চাঁদাবাজি ও দখলদারির যে সংস্কৃতি দীর্ঘকাল ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আছে সেটির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এবারের পটপরিবর্তনের পর।

তিনি বলেন, এত দিন সব আওয়ামী লীগের লোকজনের নিয়ন্ত্রণে ছিল। বিএনপির লোকজন ১৫ বছর নিপীড়ন-বঞ্চনা সহ্য করেছেন। এ কারণেই হয়তো ক্ষমতায় না এলেও আওয়ামী লীগের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের কর্তৃত্ব চলে এসেছে। তবে দলটির হাইকমান্ডকে দেখছি শুরু থেকেই কিছু ঘটনায় ব্যবস্থা নিচ্ছে, যা ইতিবাচক।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলছেন, দলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায় থেকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে এবং কোনো ঘটনার সঙ্গে কারো নাম এলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড এগুলোকে উৎসাহিত করেছে। কিন্তু বিএনপি হাইকমান্ড কোনো অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড়ছে না। কাজেই আমাদের মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ বললে বিএনপির প্রতি অবিচার করা হবে। দল ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং এর মাধ্যমে সব স্তরের নেতাকর্মীদের কাছে শক্ত বার্তা গেছে।

তৃণমূল পর্যায়ের পরিস্থিতি : বেশ কয়েকটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিএনপির কিছু নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের বিদায়ের পর বিএনপির ২০১৮ সালের নির্বাচনে যারা প্রার্থী ছিলেন কিংবা স্থানীয় সাবেক এমপি তারাই মূলত রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এমনকি স্থানীয় প্রশাসনও উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠক থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজে রাজনৈতিক নেতাদের ডাকতে হলে বিএনপি নেতাদেরই ডাকছেন।

বিএনপির দলের উত্তরাঞ্চলীয় একজন নেতা বলেন, ৫ আগস্টের পর কিছুদিন রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ না থাকায় বেশ কিছু এলাকাতেই ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ কিছু ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে দলের একটি অংশ।

আবার কোথাও কোথাও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষও হয়েছে। শেরপুরে নিজেদের মধ্যকার সংঘর্ষে গত দশই সেপ্টেম্বর মারা যান জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আরিফুল ইসলাম শ্রাবণ। এর আগে ২১ আগস্ট সংঘর্ষে একজন নিহত হন ফরিদপুরের নগরকান্দায়।

তবে এখন নেতারা অনেকে মনে করছেন বেশ কিছু ঘটনায় শক্ত পদক্ষেপ নেওয়ায় দলের সব স্তরে শৃঙ্খলা ফিরে আসছে।

এ ছাড়া দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজেও প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন সাংগঠনিক ইউনিটের সঙ্গে বৈঠক করে এ বিষয়ে সতর্ক করছেন এবং এটিও নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণ বা শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন তারা।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!